বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল। —ফাইল চিত্র।
রঞ্জিতে একটি ম্যাচ বাকি থাকতেই বাংলার নক আউটে ওঠার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে। বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল যদিও এই মরসুম নিয়ে হতাশ হয়ে বসে থাকতে রাজি নন। খেলোয়াড় জীবনে লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিতেন লক্ষ্মী। তাঁর সেই আগ্রাসন ঢুকিয়ে দিতে চান বাংলার এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যেও।
আগামী মরসুমেও বাংলার কোচ থাকতে চান লক্ষ্মী। কোচের দায়িত্বে থেকে দলকে আরও শক্তিশালী করে তোলাই এখন লক্ষ্য তাঁর। দলের উপর বিশ্বাস রয়েছে তাঁর। লক্ষ্মী আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “রাজনীতি ছেড়ে ক্রিকেটে ফিরে এসেছি। বাংলার জন্যই ফিরেছি। আগামী মরসুমেও দলকে প্রশিক্ষণ দেব।”
এ বারের রঞ্জিতে বাংলা একটি মাত্র ম্যাচ জিতেছে। সেটাও অসমের মতো দুর্বল দলের বিরুদ্ধে। গত বার রঞ্জি ফাইনাল খেলেছিল বাংলা। তার আগের বারও সেমিফাইনালে উঠেছিল তারা। ২০১৯-২০ মরসুমে ফাইনাল খেলেছিল বাংলা। ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলে আসা দল হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ল এ বারের রঞ্জিতে। গ্রুপ পর্বের বাধাও টপকাতে ব্যর্থ হল। লক্ষ্মী বললেন, “এ বারের রঞ্জিতে আমরা একটা বদলের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। অনেক তরুণ ক্রিকেটার খেলেছে। আমরা সূরজ সিন্ধু জয়সওয়ালের মতো পেসার পেয়েছি। করণ লাল আগের থেকে পরিণত হয়েছে। সৌরভ পাল ভাল খেলছে। চোটের কারণে আগের ম্যাচটা খেলতে পারেনি। আমি বিশ্বাস করি, এরাই আগামী দিনে বাংলাকে ম্যাচ জেতাবে।”
এ বারের রঞ্জিতে বাংলা শুরু থেকে পায়নি মুকেশ কুমার, শাহবাজ় আহমেদ এবং অভিমন্যু ঈশ্বরণকে। রঞ্জির প্রথম ম্যাচ খেলার পরেই আকাশ দীপ চলে যান ভারত এ দলের হয়ে খেলার জন্য। মুকেশ ছিলেন ভারতীয় দলে। শাহবাজ়ের চোট ছিল। অভিমন্যু ভারত এ দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। গত কয়েক মরসুমে বাংলার ভাল খেলার মূল কারণ ছিলেন এই চার ক্রিকেটার। তাঁদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স বাংলাকে নক আউটে তুলেছে বার বার। লক্ষ্মী বললেন, “এই চার ক্রিকেটারকে না পাওয়া তো অবশ্যই বড় ক্ষতি। তবে তরুণ ক্রিকেটারেরা সুযোগ পেয়েছে। তাঁরা রান করেছে, উইকেট নিয়েছে। নতুনদের তো সুযোগ দিতে হবে, না হলে আগামী প্রজন্ম তৈরি হবে কী করে? আগামী মরসুমে এরা আরও পরিণত হবে। দলকে ভরসা দেবে।”
বাংলাকে এ বারের রঞ্জিতে বার বার ভুগিয়েছে আবহাওয়া। উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে বাংলা যথেষ্ট শক্তিশালী জায়গায় ছিল। কিন্তু কুয়াশার কারণে প্রতি দিন খেলা শুরু হতে দেরি হয়েছে। এতটাই সমস্যা হয় যে, উত্তরপ্রদেশকে প্রথম ইনিংসে ৬০ রানে অলআউট করে দেওয়ার পরেও ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলা। ছত্তীসগঢ়ের বিরুদ্ধেও ইডেনে আবহাওয়া পুরো ম্যাচ হতে দেয়নি। দুই দলের একটি করে ইনিংসও শেষ করা যায়নি। তবে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে হারের জন্য নিজেদের দায়ী করলেন কোচ লক্ষ্মী। ইডেনে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ইনিংস এবং ৪ রানে হেরেছিল বাংলা। লক্ষ্মী বললেন, “ওই ম্যাচে আমাদের বোলিং ভাল হয়নি। সেই সঙ্গে প্রচুর ক্যাচ ফেলেছিলাম আমরা। সেটার জন্যই ওই ম্যাচটা হাত থেকে বেরিয়ে যায়। আর কেরলের বিরুদ্ধে টস হারাটা বড় ক্ষতি হয়ে যায়। আমরা যদি ওই ম্যাচে টস জিততে পারতাম, তা হলে ফল অন্য রকম হতে পারত। কিন্তু টস তো আর কারও হাতে নেই।”
অনুশীলনে কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লের সঙ্গে আলোচনায় সহকারি কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী। ছবি: সিএবি।
আকাশ এবং মুকেশ না থাকায় বাংলার পেস বোলিংকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ ছিল ঈশান পোড়েলের। কিন্তু তাঁর লাইন, লেংথ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। লক্ষ্মী বললেন, “ঈশানের লাইন, লেংথে সমস্যা হচ্ছে এটা ঠিক। সেটা শোধরাতে হবে। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১৭টা উইকেট নেওয়া এক জন বোলারকে তো ফেলে দেওয়া যায় না। আমি ওই ধরনের কোচ নই। ক্রিকেটারের পাশে থাকতে জানি আমি। ঈশান ফিরবে। আগামী মরসুমে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে।”
সামনে আর একটি ম্যাচ। বিহারের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলা। যদিও এই ম্যাচের ফলের উপর কোনও কিছু বদলে যাবে না। খুব বেশি হলে বাংলা গ্রুপে তিন নম্বরে শেষ করতে পারে। এমন অবস্থায় ক্রিকেটারদের মনঃসংযোগ ধরে রাখা কতটা কঠিন? লক্ষ্মী বললেন, “বাংলার জার্সি পরে একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এর থেকে বড় প্রেরণা আর কী হতে পারে? আমরা জয় দিয়ে রঞ্জি শেষ করতে চাইব।”
কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লের সঙ্গে আলোচনায় অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। —ফাইল চিত্র।
আর ইডেনের ওই ম্যাচ মনোজ তিওয়ারির কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ হতে চলেছে। বাংলার হয়ে আর খেলবেন না তিনি। সমস্ত ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেবেন মনোজ। এ বারের রঞ্জি শুরুর আগেই সে কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ৬ ম্যাচে ২৫৭ রান করেছেন শেষ রঞ্জিতেও। করেছেন শতরান। বাকি রইল আর একটি ম্যাচ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার রান পার করা মনোজকে না পাওয়া কতটা বড় ক্ষতি? লক্ষ্মী বললেন, “মনোজের মতো ক্রিকেটার বার বার জন্মায় না। ওর না থাকাটা অবশ্যই বড় ক্ষতি। এ বারেও মিডল অর্ডারে দলকে ভরসা দিয়েছে। কিন্তু সব ক্রিকেটারেরই শেষ আছে। মনোজও ওর কেরিয়ার শেষ করতে চলেছে। আগামী দিনে সেই জায়গায় নতুন কোনও ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পাবে।”
বাংলা দলের হয়ে এ বারের রঞ্জিতে সব থেকে বেশি রান করেছেন অনুষ্টুপ মজুমদার। তাঁরও বয়স ৩৯ বছর। ছ’ম্যাচে ৪৭১ রান করা রুকু (সতীর্থদের কাছে এই নামেই পরিচিত তিনি) এখনও দলকে টানছেন। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের জায়গা নিতে হবে আগামী প্রজন্মকে। সেই ক্রিকেটার তুলে আনার কাজটাও জরুরি। বাংলার ক্রিকেট সংস্থা কি সেই দায়িত্বটা লক্ষ্মীকে দেবে?