(বাঁ দিকে) বিরাট কোহলি এবং গৌতম গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়েছিল গৌতম গম্ভীরের নাম। শ্রীলঙ্কা সিরিজ় থেকে দায়িত্ব নেবেন তিনি। তবে গম্ভীরকে নিয়োগ করার আগে বিরাট কোহলির সঙ্গে কথা বলেনি বোর্ড। জানানো হয়েছিল শুধু হার্দিক পাণ্ড্যকে। মনে করা হচ্ছে, রোহিত শর্মাকেও আগে থেকে জানানো হয়েছিল। এমনই খবর ‘হিন্দুস্তান টাইমস্’ সংবাদপত্রের।
কোহলির সঙ্গে গম্ভীরের সম্পর্ক কারওই অজানা নয়। গত মরসুমের আইপিএলে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার আগে একাধিক বার ঝামেলায় জড়িয়েছেন দু’জনে। লখনউ সুপার জায়ান্টসের মেন্টর থাকাকালীন নিজের দলের ক্রিকেটার নবীন উল হককে বাঁচাতে কোহলির সঙ্গে ঝগড়া করেছিলেন গম্ভীর।
তবে কোহলিকে না জানানোর নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। পাঁচ বছরের চুক্তি করা হয়েছে গম্ভীরের সঙ্গে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২৭ সালের এক দিনের বিশ্বকাপ এবং ২০২৫-২০২৭ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ—এই আইসিসি প্রতিযোগিতাগুলির দায়িত্বে থাকবেন গম্ভীর। কোহলি ইতিমধ্যেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছেন। এক দিনের ক্রিকেটেও হয়তো আর বেশি দিন খেলবেন না। তাই কোহলিকে জানানোর প্রয়োজন হয়নি বলে মত একাংশের।
গম্ভীর যে কোচ হতে পারেন, এটা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। আইপিএল চলার সময় থেকে তাঁর নাম নিয়ে জল্পনা চলছিল। গোটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাই মোটামুটি ধরে নিয়েছিলেন গম্ভীর কোচ হচ্ছেন। ফলে কোহলি তা জানবেন না, এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক। গম্ভীর ছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছে আর কোনও বিকল্পও ছিল না। গম্ভীর ছাড়া শুধু ডব্লিউভি রমনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। সাফল্যে তিনি গম্ভীরের ধারেকাছে নেই। না হলে, বিদেশি কোচ আনতে হত। জয় শাহেরা তা চাননি বলেই গম্ভীরকে কোচ হিসাবে বাছা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তা ছাড়া কে কোচ হচ্ছেন, কোহলিকে বোর্ড তা জানাতে বাধ্যও নয়। কারণ এমনিতে তিনি দলের অধিনায়ক বা সহ-অধিনায়ক নন। অনেক সময় ফর্মে থাকা সিনিয়র ক্রিকেটারের মতামত নেওয়া হয়। কিন্তু কোহলি দেশের জার্সিতে সেরা ফর্মেও নেই। তবে অনেকে বলছেন, কোহলির যা সাফল্য তাতে বোর্ড চাইলে তাঁকে জানাতেই পারত।
গম্ভীরের সঙ্গে কোহলির ঝামেলা ছিল ঠিকই। কিন্তু অনিল কুম্বলের সঙ্গে যে ঝামেলা হয়েছিল তাঁর কাছে এটি কিছুই না। রোহিত, কোহলিরা কুম্বলের কোচিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। প্রাণ এতটাই ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল, কুম্বলেকে তাড়ানোর জন্য সবাই মিলে দল বেঁধে চিঠি দিয়ে বোর্ডের কাছে দরবার করেছিলেন। সরে যেতে হয়েছিল কুম্বলেকে।
কড়া কুম্বলেকে নিয়ে কোহলিরা কতটা অখুশি ছিলেন, সেটা তৎকালীন বোর্ড প্রশাসকদের প্রধান বিনোদ রাই তাঁর বই ‘নট জাস্ট এ নাইটওয়াচম্যান: মাই ইনিংস উইথ বিসিসিআই’-এ লিখেছেন। রাইয়ের কথায়, ‘‘তৎকালীন ভারত অধিনায়ক ও দল পরিচালন সমিতির সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তাঁরা আমাকে জানান, কুম্বলে শৃঙ্খলাকে অসম্ভব গুরুত্ব দিয়ে চলেন। আর সেটা দৃঢ় ভাবে আরোপ করতে চান। যা অনেকের পছন্দের নয়। তখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলি দলের অধিনায়ক কোহলির সঙ্গে। তিনি বলেন, দলের তরুণ ক্রিকেটারেরা কোচের ব্যবহারে বেশ বিব্রত। এর পরেই সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণদের নিয়ে গঠিত ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে কথা বলি। বিষয়টির সমাধানের জন্য লন্ডনে কোচ ও অধিনায়কের সঙ্গেও কথা হয়। কিন্তু ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটির তরফে কুম্বলেকেই ফের কোচ হিসেবে রেখে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে ফেরার পরে কুম্বলের সঙ্গে আবার কথা হয়। যা ঘটেছে, তা নিয়ে কুম্বলে খুব বিমর্ষ ছিল। কুম্বলের মনে হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে ঠিক ব্যবহার করা হয়নি। অধিনায়ক বা ক্রিকেটারদের এতটা গুরুত্ব দেওয়া ঠিক নয়। দলে শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব ফেরাতে কোচের একটা ভূমিকা থাকে। কুম্বলে চাইত, ওর দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করুক ক্রিকেটারেরা।’’
বোর্ডের এক সূত্র ‘হিন্দুস্তান টাইমস্’ সংবাদপত্রকে বলেছেন, “এক টেবিলে বসে কথা বলার জন্য দু’জনের হাতে অনেক সময় রয়েছে। কিন্তু বোর্ড গোটা বিষয়টাকে বড় আঙ্গিকে দেখেছে। আগামী দিনে প্রচুর তরুণ ক্রিকেটার জাতীয় দলে সুযোগ পাবে। তাদের কথা ভাবা হয়েছে।”
যে কয়েক জন ক্রিকেটারের মতামত নেওয়া হয়েছিল তাঁদের মধ্যে রয়েছেন হার্দিক। আগামী দিনে তিনিই জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন। এক দিনের ক্রিকেটেও রোহিতের পর তাঁর হাতে নেতৃত্বের দায়িত্ব যেতে পারে।