কঠিন ক্যাচ ধরলেন, কিন্তু সহজ ক্যাচ ফেললেন বাটলার ছবি: রয়টার্স।
কখনও ডাইনে ঝাঁপিয়ে দ্বিতীয়-তৃতীয় স্লিপের সামনে গিয়ে অবিশ্বাস্য ক্যাচ। কখনও আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সটান হাতে আসা ক্যাচ বেরিয়ে যাচ্ছে দস্তানা ছেড়ে। কখনও দেখে মনে হচ্ছে ‘সুপারম্যান’। আবার পর ক্ষণেই সহজ ক্যাচ মিস্ দেখে মনে হচ্ছে, এই ক্যাচ তো শিক্ষানবিশ উইকেটরক্ষকও ছাড়ে না! কখনও বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে জমির এক ইঞ্চি উপর থেকে বল তুলে নিচ্ছেন। আবার পরক্ষণেই তাঁর পাশ দিয়ে বল চলে যাচ্ছে থার্ডম্যান বাউন্ডারিতে।
ম্যাচ বাঁচানো ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ‘জীবন’ পাচ্ছেন ফার্স্ট স্লিপে। আবার সেই ইনিংস শেষ হচ্ছে হিট উইকেটের মতো গরিমাহীন এবং দুর্ভাগ্যজনক আউটে। অ্যাডিলেড ওভাল ইংরেজ জস বাটলারকে দেখাল, ক্রিকেট যেমন দেয়, তেমনই কেড়েও নেয় নিষ্ঠুরের মতো।
শুরুটা অবশ্য ক্রিকেটেরই দেওয়ার ছিল। দিন-রাতের টেস্টে প্রথম ইনিংসে স্টুয়ার্ট ব্রডের বল ফাইন লেগের দিকে খেলার চেষ্টা করেন বাঁ-হাতি অজি ওপেনার মার্কাস হ্যারিস। বল তাঁর গ্লাভসে লেগে বেরিয়ে যাচ্ছিল দ্বিতীয়-তৃতীয় স্লিপ এলাকা দিয়ে। বাজপাখির দক্ষতায় ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ছোঁ মেরে দুরন্ত ক্যাচ নেন বাটলার। যে কোনও উইকেটরক্ষকের কাছে যা স্বপ্নের মতো।
আবার সেই ইনিংসেই যে ক্যাচ বাটলার ফস্কান, তা-ও অবিশ্বাস্য! ৯৫ রানে ব্যাট করছিলেন মার্নাস লাবুশেন। ইংল্যান্ডের জোরে বোলার জেমস অ্যান্ডারসনের বল লাবুশেনের ব্যাটে লেগে বাটলারের দিকে যায়। একটুও নড়তে হয়নি বাটলারকে। কিন্তু তাঁর দস্তানায় লেগে বল মাটিতে পড়ে যায়। ‘জীবন’ পেয়ে শতরান করেন লাবুশেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ফের ব্রডের বলে অফ সাইডে খোঁচা মারেন হ্যারিস। এ বার বাটলার বাঁ-দিকে উড়ে গিয়ে প্রায় দ্বিতীয় স্লিপের সামনে গিয়ে ক্যাচ ধরেন। হ্যারিস আউট হওয়ার পর নামেন স্টিভ স্মিথ। এবং নেমেই সহজ ক্যাচ দেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটে যে কোনও উইকেটরক্ষক কার্যত চোখ বুজে সেই ক্যাচ ধরবেন। বাটলার ফেলেন। যদিও স্মিথ বেশি রান করতে পারেননি। কারণ, ওলি রবিনসনের বলে বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে প্রায় মাটির কাছ থেকে এক হাতে স্মিথের ক্যাচ তালুবন্দি করেন সেই বাটলারই।
নিশ্চিত হারের মুখে দাঁড়িয়ে ব্যাট করতে নেমে বাটলারও ‘জীবন’ পান। মিচেল স্টার্কের বল তাঁর ব্যাটে লেগে উইকেটরক্ষক এবং প্রথম স্লিপের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে যায়। অজি উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি এবং প্রথম স্লিপে থাকা অধিনায়ক স্মিথ— কেউ বলটা ছোঁয়ারও চেষ্টা করেননি। যা অস্ট্রেলীয় ঘরানার ক্রিকেটে বিরল। কিন্তু ওই যে, ক্রিকেট যেমন দেয়, তেমনই কেড়েও নেয়! ‘একা কুম্ভ’ হয়ে লড়ছিলেন বাটলার। ২০৭ বলের (২৬ রান) প্রতিরোধ ভেঙে গেল হিট উইকেটের মতো দুর্ভাগ্যজনক আউটে। ব্যাট করার সময় বাটলারের প্রাথমিক সরনটাই হল ক্রিকেটের পরিভাষায় ‘ব্যাক অ্যান্ড অ্যাক্রস’। সেটা করতে গিয়েই তাঁর ব্যাকফুট গিয়ে লাগে উইকেটের গোড়ায়। বাটলার যখন রান নিতে দৌড়েছেন, তখনও তিনি জানেন না, বেল পড়ে গিয়েছে। ঘন্টা বেজে গিয়েছে অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হারের।
ক্রিকেট যেমন দেয়, তেমনই কেড়েও নেয়!