রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।
রাজকোটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ভারত। প্রথম দু’টি ম্যাচ জিতে নেওয়ায় শেষ ম্যাচের কোনও দাম ছিল না। কিন্তু ভারতের সামনে এই ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়ার সুযোগ ছিল। এর আগে কখনও এক দিনের সিরিজ়ে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি ভারত। বুধবার জিতলে সেই সুযোগ পেতেন রোহিত শর্মারা। কিন্তু তা হল না। অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ৩৫২ রান তোলে। ভারত শেষ হয়ে যায় ২৮৬ রানে।
বুধবার ব্যাট হাতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম চার ব্যাটার রান করেন। তাঁদের দাপটেই ৩৫২ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের সেই রান তোলার পথে বাধা হয়ে ওঠেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁর বোলিংয়ের দাপটে শেষ ভারত। একাই চার উইকেট নেন তিনি। রোহিত, বিরাটদের উইকেট নেন ম্যাক্সওয়েলই।
টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। রাজকোটের পিচে বরাবরই রান ওঠে। সেই সুবিধাটাই নিতে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ীই শুরুটা করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজের করা বল বার বার বাউন্ডারিতে পাঠাতে শুরু করেন তিনি। বাধ্য হয়ে মাত্র ৩ ওভার করিয়েই বুমরাকে সরিয়ে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের হাতে বল তুলে দেন রোহিত। তাতেও থামানো যাচ্ছিল না অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী ওপেনারকে। বিশ্বকাপের আগে তাঁর ফর্ম চিন্তায় ফেলতে পারে অনেক দলকেই। ওয়ার্নারকে শেষ পর্যন্ত আউট করেন প্রসিদ্ধ। যদিও ওয়ার্নার নিজের দোষে উইকেট ছুড়ে দেন। প্রসিদ্ধের নির্বিষ বল পিছন দিকে খেলতে গিয়ে তিনি ক্যাচ তুলে দেন উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে। ৫৬ রান করে আউট হন ওয়ার্নার।
শুধু ওয়ার্নার নন, অস্ট্রেলিয়ার অন্য ওপেনার মিচেল মার্শও এ দিন দ্রুত রান তুলছিলেন। ওয়ার্নার আউট হলেও তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৯৬ রানের মাথায় আউট হয়ে গেলেন তিনি। ১৩টি চার এবং তিনটি ছক্কা মারেন। কামিন্স এবং স্মিথের অবর্তমানে অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দেওয়া অলরাউন্ডারও বিশ্বকাপের আগে ফর্মে রয়েছেন। কুলদীপ যাদবের বলে ক্যাচ তুলে আউট হন তিনি। ছয় মেরে শতরান করতে গিয়ে আউট হয়ে যান মার্শ।
মার্শ যখন আউট হয়ে সাজঘরে ফিরছেন, তখন ২৮ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলেছে ২১৫ রান। হাতে থাকা ২২ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ৪০০ রান পার করে দেওয়ার মতো খেলছিল। ক্রিজে থাকা স্টিভ স্মিথ এবং মার্নাস লাবুশেন ক্রিজে ছিলেন। স্মিথ ৫০ রান পারও করেছিলেন। কিন্তু তার পরেই ৭৪ রানের মাথায় মহম্মদ সিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান। অস্ট্রেলিয়ার রানও আটকে যায়। লাবুশেন ৫৮ বলে ৭২ রান করায় ৩৫০ রান পার করে অস্ট্রেলিয়া। অ্যালেক্স ক্যারি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং ক্যামেরন গ্রিন রান পাননি। তাঁরা রান পেলে আরও বড় রান করতে পারত অস্ট্রেলিয়া। ভারতের হয়ে তিনটি উইকেট নেন যশপ্রীত বুমরা। দু’টি উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। একটি করে উইকেট সিরাজ এবং প্রসিদ্ধের। বুমরা ৩ উইকেট নিলেও ১০ ওভারে ৮১ রান দিয়েছেন। ৯ ওভারে ৬৮ রান দেন সিরাজ। দলের সেরা দুই বোলার প্রায় ১৫০ রান দেওয়ায় বিপদে পড়ে ভারত। এক মাত্র ওয়াশিংটন সুন্দর ১০ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে কিছুটা রাশ টেনেছিলেন।
বুধবারের ম্যাচে ভারতীয় দলে অনেকেই ছিলেন না। কাউকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। কেউ আবার অসুস্থ। তাই প্রথম একাদশের ক্রিকেটারেরা ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। বোর্ডের তরফে সমাজমাধ্যমে জানানো হয় যে, ধর্মেন্দ্র জাডেজা, প্রেরক মাঁকড়, বিশ্বরাজ জাডেজা এবং হারভিক দেসাইকে ডাকা হয়েছে। তাঁরা দলকে ফিল্ডিংয়ের সময় সাহায্য করেন। ব্যাট করার সময় ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য জল নিয়ে যেতেও দেখা যায় তাঁদের। ভারতীয় দলে ছিলেন না শুভমন গিল, ঈশান কিশন, হার্দিক পাণ্ড্য, মহম্মদ শামি, শার্দূল ঠাকুর, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো একাধিক ক্রিকেটার।
শুভমন এবং ঈশান না থাকায় রোহিতের সঙ্গে কে ওপেন করবেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। মনে করা হয়েছিল পুরনো জুটি রোহিত এবং রাহুলকে ওপেন করতে দেখা যাবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ৩৫২ রান তাড়া করতে রোহিতের সঙ্গে ব্যাট করতে নামেন ওয়াশিংটন। ১০.৫ বলের সেই জুটিতে ভারত ৭৪ রান তোলে। তার পরেই ম্যাক্সওয়েলের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ওয়াশিংটন। ১৮ রান করেন তিনি। উল্টো দিকে থাকা রোহিত তত ক্ষণে স্বমেজাজে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫৫০ ছক্কা মারার নজিরও গড়ে ফেলেন তিনি। কিন্তু ৮১ রান করে হঠাৎ আউট হয়ে যান। ম্যাক্সওয়েলের করা বল তাঁর দিকেই মেরেছিলেন রোহিত। সেই বল বোলারের হাতে জমে যায়। ম্যাক্সওয়েল মুখ সরানোর সময় হাত বাড়িয়েছিলেন। সেখানেই আটকে যায় বল। তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি যে ক্যাচ ধরতে পারবেন। ৫৬ রান করে আউট হন বিরাট। তাঁর উইকেটও নেন ম্যাক্সওয়েল। ভারতের প্রথম তিন ব্যাটারের উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেন অসি অলরাউন্ডার।
বিরাট যখন সাজঘরে ফিরছেন ভারতের তখন ১৭১ রান। ক্রিজে শ্রেয়স আয়ার এবং লোকেশ রাহুল। তাঁদের উপর ভরসা করেছিল ভারত। কঠিন লক্ষ্যের সামনে ভারতের মিডল অর্ডার কেমন খেলে সেই দিকে নজর ছিল সমর্থকদের। চোট সারিয়ে দলে ফেরা দুই ক্রিকেটারের কাছে সুযোগ ছিল দলকে জেতানোর। কিন্তু রাহুল ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি। তাঁদের ৫২ রানের জুটি ভেঙে দেন মিচেল স্টার্ক। সূর্যকুমারও এই ম্যাচে রান পাননি। মাত্র ৮ রান করেন তিনি। সূর্য আউট হতেই ভারতের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। বাকিটা ছিল সময়ের অপেক্ষা।