ভারতীয় দলে একই সঙ্গে হার্দিক এবং ধোনি। —ফাইল চিত্র
এটা সত্যিই হার্দিককে দেখা গেল! ম্যাচ শেষের পরেও অবিশ্বাস্য লাগছিল। এমন ভাবে ভারতকে ম্যাচ জেতাতে দেখা যেত মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। সেই জন্যই তো তিনি ‘ক্যাপ্টেন কুল’। ধোনির সেই জায়গা নিতে এসে গিয়েছেন হার্দিক?
শেষ ওভারের তৃতীয় বলে হার্দিক পাণ্ড্যর মারা কভার ড্রাইভটা যখন এক্সট্রা কভারের হাতে আটকে গেল, তখন চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন দীনেশ কার্তিক। শেষ তিন বলে তখনও যে ছ’রান দরকার। হার্দিক নিশ্চিন্ত। চোখ বুজে, মাথাটা সম্মতিসূচক ভাবে হালকা বেঁকিয়ে বুঝিয়ে দিলেন চিন্তা কোরো না। চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে ম্যাচ জেতালেন হার্দিক। রবি শাস্ত্রী ধারাভাষ্য দিলে নিশ্চয়ই বলতেন, “হার্দিক ফিনিশেস অফ ইন স্টাইল।” ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ধোনিকে নিয়ে যেমন বলেছিলেন।
এ বারের আইপিএলের পর থেকেই বদলে যাওয়া হার্দিককে দেখছে বিশ্ব। গুজরাত টাইটান্সের অধিনায়কত্ব, ব্যাটিং, বোলিং সবই করেছিলেন দাপটের সঙ্গে। সেই ছন্দ নিয়েই ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটে হার্দিকের। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতকে নেতৃত্ব দেন তিনি। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময়ও দেখা যায় তাঁর ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
১০ মাস আগে যে ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরেছিল ভারত, সেই ম্যাচে বল করতে পারেননি হার্দিক। ব্যাটার হার্দিককে নিয়েই লড়তে হয়েছিল বিরাট কোহলীকে। রোহিত শর্মা পেলেন অলরাউন্ডার হার্দিককে। তাতেই বদলে গেল গোটা দল। রবিবার বল হাতে চার ওভারে নিলেন তিন উইকেট। ষষ্ঠ বোলারের অভাব মিটিয়ে দিয়েছেন তিনি। মার খাওয়া আবেশ খানকে দু’ওভার করিয়েই সরিয়ে নিতে পারলেন রোহিত। রবীন্দ্র জাডেজাকেও ব্যবহার করতে হল না হার্দিক থাকায়। পাকিস্তান শেষ ১৪৭ রানে।
হার্দিক যখন ব্যাট করতে নামেন, সেই সময় ৩৪ বলে বাকি ছিল ৫৯ রান। সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলী এবং সূর্যকুমার যাদব। এর পর শেষ পর্যন্ত থেকে ম্যাচ জেতালেন হার্দিক। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে ফিনিশার হার্দিক বলেন, “এই রকম রান তাড়া করার সময় প্রতিটা ওভার ধরে পরিকল্পনা করতে হয়। আমি জানতাম শেষ দিকে এক জন তরুণ বোলার এবং বাঁহাতি স্পিনার রয়েছে। শেষ ওভারে আমাদের সাত রান দরকার ছিল। যদি ১৫ রান বাকি থাকত তাও আমি ম্যাচ জেতাতাম। আমি জানি ২০তম ওভারে আমার থেকে বোলার বেশি চাপে রয়েছে।” চাপে থাকা বোলারকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দু’বল বাকি থাকতেই ভারতকে ম্যাচ জিতিয়ে দেন হার্দিক।
ওভার প্রতি রান হিসাবে করে ম্যাচ জেতানো। ধোনিই তো করতেন ভারতের হয়ে। বোলারকে চাপে ফেলে দিতেন তিনিই। সেই কাজের দায়িত্বটাই এখন নিয়ে নিয়েছেন হার্দিক। আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে তাঁর ব্যাট, বলে, সিদ্ধান্তে এবং ম্যাচ শেষের কথায়। নতুন হার্দিক জন্ম নিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের রান্নাঘরে (পড়ুন আইপিএলে)।
এশিয়া কাপকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি হিসাবে দেখছে অনেক দল। সেই কারণেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলা হচ্ছে এশিয়া কাপে। প্রস্তুতি পর্বেই হার্দিক ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কী করতে পারেন তিনি।