এশিয়া কাপে পাকিস্তান ম্য়াচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে কোহলী। —ফাইল চিত্র
এশিয়া কাপের সুপার ফোর-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেটে হারের পরে সাংবাদিক বৈঠকে বোমা ফাটিয়েছেন বিরাট কোহলী। জানিয়েছেন, তিনি ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরে এক মাত্র মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ছাড়া আর কেউ তাঁকে ফোন করেননি। অনেকে সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তাঁর খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়াননি। কোহলীর এই মন্তব্যের পরে জল্পনা শুরু হয়েছে, তাঁর নিশানায় কে? প্রাক্তনরা? না কি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিব জয় শাহরা? না কি দলের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা-সহ বাকি সতীর্থরা?
রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, ‘‘আমি যখন টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ি, এক জন মাত্র প্রাক্তন ক্রিকেটার আমাকে ফোন করেছিল। অনেকের কাছেই আমার নম্বর আছে। কিন্তু ফোন করেছিল শুধু মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এর থেকেই বোঝা যায় কে আমার ভাল চায়। সত্যি যদি আমার কথা কেউ ভেবে থাকে, তা হলে সে আমাকে ফোন করে কথা বলতে পারত। অনেকেই বাইরে আমার সমালোচনা করেছে। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেনি।’’
সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রথম বিতর্কিত কথা বললেন কোহলী, তা নয়। এর আগেও অনেক বার প্রকাশ্যে কোহলী এমন মন্তব্য করেছেন যা ক্রিকেট বোর্ডের কর্তা, নির্বাচকদের কথার সম্পূর্ণ বিপরীত।
কোহলীর এই বক্তব্যের পরেই ফিরে আসছে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী ঘটনাক্রমের প্রসঙ্গ। বিতর্কের শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপের ঠিক আগে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে কোহলী জানিয়েছিলেন, প্রতিযোগিতার পরেই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়বেন তিনি। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গিয়েছিল ভারত। তার পরে ছোট ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন কোহলী।
কোহলী অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরে সংবাদমাধ্যমে বোর্ড সভাপতি সৌরভ জানান, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কোহলীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁকে অধিনায়ক থাকার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অনুরোধ শোনেননি কোহলী। সৌরভের এই মন্তব্যের পরে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন কোহলী। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা বিসিসিআইকে জানিয়েছিলাম তখন ওরা আমার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। কেউ কোনও প্রশ্ন করেনি। কেউ বলেনি যে আমার অধিনাকত্ব ছাড়া উচিত নয়। আলাদা করে কারও সঙ্গে আমার কথা হয়নি।’’
কোহলীর এই মন্তব্যের পরে প্রশ্ন ওঠে, তবে কি অসত্য কথা বলেছেন সৌরভ। পরে অবশ্য বিসিসিআই সভাপতি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। সৌরভ জানিয়ে দেন, কোহলীর মন্তব্যের জবাব দেবে বিসিসিআই। মুখ খোলেন জাতীয় দলের নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা। বলেন, ‘‘বৈঠকে যারা ছিল তারা সবাই কোহলীকে বলেছিল, আর এক বার ভেবে দেখতে। কারণ, সবাই মনে করেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এ রকম একটা সিদ্ধাম্ত দলে প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থে কোহলীকে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। সবাই বলেছিল, বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোহলী নিতে পারে। তবে আগে এ ভাবে বলা ওর উচিত হয়নি।’’
টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরে কোহলীকে ভারতের এক দিনের দলের অধিনায়কত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। বোর্ড জানায়, বিভিন্ন ফরম্যাটে বিভিন্ন অধিনায়কের পক্ষপাতী তারা নয়। তাই কোহলীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক বৈঠকে সম্পূর্ণ অন্য কথা জানান কোহলী। তিনি বলেন, ‘‘টেস্ট দল নির্বাচনের দেড় ঘণ্টা আগে আমাকে নির্বাচকরা ফোন করেন। তার আগে আমার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। ফোন রাখার আগে আমাকে বলা হয়, তোমাকে এক দিনের দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি বলি, ঠিক আছে।’’
কোহলীর এই মন্তব্যের বিরুদ্ধেও যুক্তি দেন চেতন। নির্বাচক প্রধান বলেন, ‘‘আমরা কোহলীর সঙ্গে অনেক দিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। ওকে সময় দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা করা যায়নি। আমি তো একাই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। পাঁর জন নির্বাচক এক মত হওয়ার পরেই আমরা ওকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলাম।’’ ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে হারের পরে টেস্ট দলের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন কোহলী। তিন ফরম্যাটেই ভারতের অধিনায়ক করা হয় রোহিতকে। কিন্তু এখনও সেই বিতর্ক শেষ হয়নি। উল্টে একের পর এক সাংবাদিক বৈঠকে বোমা ফাটাচ্ছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।