বিপর্যয়: চালিয়ে খেলতে গিয়ে আউট বিরাট। গেটি ইমেজেস, রয়টার্স,
দল বাছাই, রণনীতি, ব্যাটিংভঙ্গি, শরীরী ভাষা। একই দিনে সব কিছু যে এত নেতিবাচক হতে পারে কোনও দলের ক্ষেত্রে, তা ভাবা যায় না। রবিবার দুবাইয়ে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে এত জড়সড়, ভীতু-ভীতু ভারতীয় দলকে দেখতে পাব, কখনও ভাবিনি। ম্যাচের পরে টিভি-তে দেখলাম, বিরাট কোহালিও বলে গেল, প্রয়োজনীয় সাহসটা দেখাতে পারিনি।
নিউজ়িল্যান্ডের কাছে আট উইকেটে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে প্রায় বিদায়ের মুখে কোহালিরা। আবার টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ভারত তোলে ১১০-৭। ১৪.৩ ওভারেই যে রান তুলে দেয় কেন উইলিয়ামসনরা।
প্রথমে আসি দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে। একটা প্রশ্নের জবাব সম্ভবত দেশের সব ক্রিকেটপ্রেমীই জানতে চান। কেন হার্দিক পাণ্ড্য? ও তো এখন ব্যাটটাও করতে পারছে না। এ দিন ২৪টা বল খেলে ২৩ করল। মাত্র একটা চার। যে দুই ওভার বল করল, তা ব্যাটারদের সামনে প্লেটে করে বিজয়ার মিষ্টি সাজিয়ে দেওয়ার মতো ব্যাপার।
১৪ বলে ১৪ করে ফিরলেন রোহিত। গেটি ইমেজেস, রয়টার্স,
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে স্পিনাররা সুবিধে পাচ্ছে। এই পিচে আগের দিনও ভাল বল করেছিল ইংল্যান্ডের স্পিনাররা। এ দিন নিউজ়িল্যান্ডের লেগস্পিনার ইশ সোধি তো ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার হয়ে গেল। সেখানে আমরা আর অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ স্পিনারকে বসিয়ে রেখেছি। ভারতের বোলিং আক্রমণে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা কার আছে? যশপ্রীত বুমরা ছাড়া তো কারও নাম করা যাচ্ছে না। সি ভি বরুণের রহস্য আইপিএলেই শেষ। বিশ্বকাপে বিপক্ষের ব্যাটাররা প্রথমে একটু দেখে খেলছে, তার পরে
মেরে দিচ্ছে।
সবচেয়ে অবাক হলাম রোহিত শর্মার জায়গায় ঈশান কিশানকে ওপেন করতে দেখে। এর ফলে রোহিত নামল তিনে, কোহালি চারে। কোহালি যেখানে আইপিএলে ওপেন করে পুরো ২০ ওভার খেলবে বলে, সেখানে বিশ্বকাপের মরণ-বাঁচন ম্যাচে নামছে
চার নম্বরে!
ম্যাচের আগে শুনছিলাম নিউজ়িল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট বলেছে, পাকিস্তানের শাহিন আফ্রিদির কাজটা ও ভারতের বিরুদ্ধে করতে চায়। অর্থাৎ, ইনসুইংকে অস্ত্র করে ফিরিয়ে দিতে চায় ভারতীয় ওপেনিং জুটিকে। অনেকেই মনে করেন, বাঁ-হাতি পেসারের ভিতরে ঢুকে আসা বলে সমস্যায় পড়ে রোহিত। সে জন্য কি নতুন বলে বোল্টের সামনে ফেলা হল না ওকে? যদি তাই হয়, বলতে হবে হাস্যকর যুক্তি।
হার্দিক আউট ২৪ বলে ২৩ করে। গেটি ইমেজেস, রয়টার্স,
ভারতীয় দলে আছে কোচ রবি শাস্ত্রী, মেন্টর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ব্যাটিং কোচ ইত্যাদি। এর উপরে স্বয়ং অধিনায়ক কোহালি। জানি না কে বা কারা রোহিতকে ওপেন থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে যেটা হল, শুরুতেই নিউজ়িল্যান্ডকে বুঝিয়ে দেওয়া গেল, আমরা
চাপে আছি।
এই চাপে থাকাটা কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সময় প্রতিটা পদক্ষেপে বোঝা গেল। ঠিক পাকিস্তান ম্যাচের মতোই পাওয়ার প্লে-তে আটকে গেল। উইকেট পড়ল, রান উঠল না। ছ’ওভারে স্কোর হল ৩৬-২। ভারতীয় ব্যাটারদের দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা শট খেলবে না খুচরো রান নেবে, তা বুঝতেই পারছে না। শট মারতেই ভয় পাচ্ছে। এতে চাপ বাড়তে থাকল। রোহিত, রাহুল, কোহালিদের আউট হওয়ার ধরন থেকে স্পষ্ট, বড় শট খেলে চাপ কাটাতে চেয়েছিল ওরা। যে কৌশল নিউজ়িল্যান্ডের নিখুঁত বোলিংয়ের সামনে কাজে আসেনি।
বোল্ট, টিম সাউদি, মিচেল স্যান্টনার, সোধিদের সামনে আটকে গেল কোহালিও। টাইমিংটা হচ্ছিল না। অফস্টাম্পের উপরে পড়া লেগস্পিনার সোধির বলটাকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ দিল। ওই রকম বল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোহালি কভারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠায়। এই শটটা ছিল চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে আসার একটা মরিয়া চেষ্টা। যা কাজে আসেনি।
ভারতের ব্যাটিং কী ভাবে এগিয়েছে, একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়ে দিই। ইনিংসের ছয় ওভারের মাথায় বাউন্ডারি মারার পরে পরবর্তী ৭১টি বলে কোনও চার-ছয় মারতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটাররা। এতটাই গুটিয়ে ছিল ঋষভ পন্থ থেকে হার্দিকরা পাণ্ড্যরা।
এ রকম নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলতে নামলে এই ফল হওয়াই তো স্বাভাবিক।