রবিবার আউট হওয়ার পর হতাশ বেয়ারস্টো। ছবি: টুইটার।
ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জনি বেয়ারস্টোকে ধন্যবাদ জানাল অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের পুলিশ। অ্যাশেজ সিরিজ়ের লর্ডস টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাজ সহজ করে দেওয়ার জন্য নয়। ভিক্টোরিয়া পুলিশ বেয়ারস্টোকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, সামাজিক সচেতনতা তৈরি করার জন্য।
রবিবার লর্ডস টেস্টের শেষ দিনে ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর বেয়ারস্টো বল লক্ষ্য করেননি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি সঙ্গে সঙ্গে বল ছুড়ে উইকেট ভেঙে দেন। রান আউট হয়ে যান বেয়ারস্টো। যদিও অনেকের মতে এটাকে স্টাম্প আউটও বলা যায়।
ক্রিকেটের নানা মজার বা বিতর্কিত ঘটনাকে হাতিয়ার করে মাঝে মাঝে সমাজমাধ্যমে জন সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে কলকাতা পুলিশ। গত আইপিএলের সময় বিরাট কোহলির শতরান পূর্ণ করার পরে মুহূর্তের ছবি দিয়ে বাইট চালকদের সচেতন করার চেষ্টা করেছিল কলকাতা পুলিশ। কোহলি এবং গৌতম গম্ভীরের মুখে আঙুল দেওয়ার ছবি ব্যবহার করেও সচেতনতামূলক মজার পোস্ট করেছিল কলকাতা পুলিশ। এমন নানা উদাহরণ রয়েছে। কলকাতা পুলিশের দেখানো পথে হাঁটল অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পুলিশও।
বেয়ারস্টোর এই অসাবধানতাকেই সচেতনতার প্রচারের হাতিয়ার করেছে ভিক্টোরিয়া পুলিশ। রসিকতার মোড়কে ইংরেজ ক্রিকেটারকে খানিকটা ঠুকেছে তারা। বেয়ারস্টোর আউট হওয়ার মুহূর্তের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে দিয়ে ভিক্টোরিয়া পুলিশ লিখেছে, ‘‘সিগন্যালের আলো সবুজ হওয়ার আগে ক্রিজের বাইরে পা রাখা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সেটা সকলকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য জনি বেয়ারস্টোকে ধন্যবাদ।’’ সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিয়ে আরও লেখা হয়েছে, দয়া করে আমাদের পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশিকাগুলি দেখুন। ভিক্টোরিয়া পুলিশ কর্তৃপক্ষ আসলে এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। একই ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছেন তাঁরা।
ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৫২তম ওভারের শেষ বলে আউট হয়েছিলেন বেয়ারস্টো। এই ঘটনা ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া শিবিরের মধ্যে শুরু হয়েছে বাগ্যুদ্ধ। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস বলেছেন, তিনি এমন কাজ করতেন না। বিষয়টা ক্রিকেটীয় নীতির বিরোধী বলে মনে হয়েছে ইংরেজ অধিনায়কের। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স মনে করছেন, তাঁরা কোনও অন্যায় করেননি। ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ীও বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।
অ্যাশেজ সিরিজ়ে নিয়ে দু’দেশের ঠোকাঠুকি বিস্ময়কর কিছু নয়। কোনও পক্ষই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। কারণ অ্যাশেজ নিছক ক্রিকেটের লড়াই নয়। এই সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়া উপহার হিসাবে নিয়ে গিয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।