কেমন হতে পারে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আইপিএল মানেই তারকার মেলা। আন্তর্জাতিক স্তরের একাধিক ক্রিকেটার খেলতে আসায় এই প্রতিযোগিতার দিকে চোখ থাকে নির্বাচকদেরও। দেশের জার্সি পরার আগে একটা ‘ড্রেস রিহার্সাল’ বলা যেতে পারে আইপিএলকে। সেই প্রতিযোগিতার বিচারে ভারতীয় দলেও জায়গা করে নেন অনেকে। আনন্দবাজার অনলাইন বেছে নিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল। মাপকাঠি এ বারের আইপিএলের ছন্দ।
ব্যাটিং বিভাগ
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই ব্যাটিং-নির্ভর খেলা। অস্ট্রেলিয়ার বিশাল বিশাল মাঠে ছক্কা হাঁকাতে তাই এমন কিছু ব্যাটার ভারতের দরকার, যাঁরা বল মাঠের বাইরে পাঠাতে সিদ্ধহস্ত। এ বারের আইপিএলে ভারতীয় ওপেনারদের মধ্যে সফলতম লোকেশ রাহুল। ১৪ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৫৩৭ রান। রয়েছে দু’টি শতরান। তাঁর সঙ্গী হতে পারেন শিখর ধবন। ডানহাতি-বাঁহাতি জুটি চাপে ফেলে দিতে পারে বিপক্ষকে। ১৪ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৪২১ রান। গড় ৩৮.২৭। তৃতীয় ওপেনার হিসাবে থাকতে পারেন তরুণ অভিষেক শর্মা। ১৪ ম্যাচে তিনি করেছেন ৪২৬ রান। দেশের হয়ে কোনও ম্যাচ না খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে গ্রুপ পর্বের হিসাবে সব থেকে বেশি রান তাঁর দখলে।
গুজরাতের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ইনিংস বাদ দিলে বিরাট কোহলী আইপিএলে ছন্দে নেই। ছন্দে নেই রোহিত শর্মাও। তাই তাঁদের বাদ দিয়েই তৈরি এই ভারতীয় দল। এ বারের আইপিএলে রোহিত করেছেন মাত্র ২৬৮ রান, বিরাটের সংগ্রহ ৩০৯ রান। তাই ভারতীয় দলের মিডল অর্ডারে জায়গা পাচ্ছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তিলক বর্মা, শ্রেয়স আয়ার, সূর্যকুমার যাদবরা। ১৪ ম্যাচে তিলকের সংগ্রহ ৩৯৭ রান। গড় ৩৬.০৯। শ্রেয়স করেছেন ৪০১ রান। তিনটি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। চোট পেয়ে আইপিএল থেকে ছিটকে যাওয়ার আগে সূর্যকুমার যে ছন্দে ছিলেন, তাতে ফিনিশার হিসাবে দলের সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন তিনি। ৮ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৩০৩ রান। গড় ৪৩.২৯। স্ট্রাইক রেট ১৪৫.৬৭।
আইপিএলের ছন্দের বিচারে বেছে নেওয়া ভারতীয় দল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
অলরাউন্ডার
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই অলরাউন্ডারদের দাপট। গুজরাত টাইটান্সের হয়ে হার্দিক যে ছন্দে রয়েছেন, তাতে তাঁকে এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়াই মুশকিল। পেসার অলরাউন্ডার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় কার্যকর হতে পারেন তিনি। এ বারের আইপিএলে ১৩ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৪১৩ রান। চারটি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। গড় ৪১.৩০। উইকেট নিয়েছেন চারটি।
উইকেটরক্ষক
আইপিএলের ছন্দ ধরলে চোখ বুজে জায়গা পেতে পারেন দীনেশ কার্তিক। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ফিনিশার হিসাবে দারুণ ভূমিকা নেন অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক। বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
স্পিন বিভাগ
এ বারের বিশ্বকাপে যুজবেন্দ্র চহালকে না নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারবে না ভারত। বেগুনি টুপির লড়াইয়ে রয়েছেন তিনি। এমন স্পিনারকে ছাড়া বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ভুলই হবে ভারতের। ১৪ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ২৬টি উইকেট। চহালের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে কুলদীপ যাদবকে। বাঁহাতি স্পিনার খেলানোর সুযোগ থাকবে ভারতের। তিনি নিয়েছেন ২১টি উইকেট। তৃতীয় স্পিনার হিসাবে যেতে পারেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাঁর দলে ঢোকা নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছিল। কিন্তু এ বারের আইপিএলে তিনি যে ভাবে বিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করছেন, তাতে অনায়াসে বিশ্বকাপের দলে ভাবা যেতে পারে তাঁকে। ব্যাট হাতেও কার্যকরী অশ্বিন। এ বারের আইপিএলে বল হাতে যেমন ১১টি উইকেট নিয়েছেন, তেমনই করেছেন ১৮৩ রান। ব্যাট হাতে গড় ৩০.৫০। স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৪০।
পেস বিভাগ
অস্ট্রেলিয়ার পেস নির্ভর পিচে দলে রাখা যেতে পারে চার পেসার। ভারতীয় দলে জায়গা পেতে পারেন মহম্মদ শামি, হর্ষল পটেল, উমরান মালিক এবং টি নটরাজন। গুজরাতের হয়ে শামি গোটা আইপিএলে দারুণ ছন্দে রয়েছেন। ১৪ ম্যাচে ১৮টি উইকেট নিয়েছেন। নতুন বলে বার বার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন যে কোনও বিপক্ষের বিরুদ্ধে। তাঁর সঙ্গে থাকছেন উমরান মালিক। তাঁর গতি যে কোনও ব্যাটারের পক্ষেই সামলানো ভয়ঙ্কর। ১৪ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ২২টি উইকেট। বাঁহাতি পেসার টি নটরাজন নিয়েছেন ১৮টি উইকেট। ভারতীয় দলে বাঁহাতি পেসারের অভাব ঢাকতে পারেন তিনি। সেই সঙ্গে রাখা যেতে পারে হর্ষল পটেলকে। ১৩ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ১৮টি উইকেট।
এ বারের আইপিএলের বিচারে এই দলের ধারে কাটা পড়তে পারে অনেক দলই। কিন্তু নামের ভারও যে কম ভারী নয়। তাই দল বাছার সময় অনেক নামই নির্বাচকদের মাথায় থাকবে। এই আইপিএলে রান, উইকেট না পেলেও তাঁদের রাখা হতে পারে দলে। নির্বাচকরা যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল বাছবেন, তখন আইপিএল অতীত। অনেক ক্রিকেটার এর মাঝে ছন্দ হারাবেন, অনেকে ফিরেও পাবেন। তাই বদলে যাবে অনেক কিছুই। তবে কাল থেকেই যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হয় এবং আইপিএলের বিচারে দল গড়া হয়, তা হলে এই দলের ক্রিকেটাররা সুযোগ পাবেনই।
যাঁদের এই দলে নেওয়া হল না
ছন্দের বিচারে যেমন দলে রাখা হয়নি রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলীকে, তেমনই বিশ্বকাপের দলে রাখা হল না ঋষভ পন্থকে। আইপিএলে একেবারেই ছন্দে পাওয়া যায়নি তাঁকে। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও খুব একটা বড় ভূমিকা নিতে পারেননি তিনি। ডেভিড ওয়ার্নারদের দাপটেই বৈতরণী পার করেছে দিল্লি। দীনেশ কার্তিক যে ছন্দে রয়েছেন তাতে জায়গা পাওয়া উচিত তাঁর। উইকেটরক্ষক হতে পারেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে কাজ চালিয়ে দিতে পারেন লোকেশ রাহুল। সেই ক্ষেত্রে পন্থের সুযোগ পাওয়া কঠিন। বাদ পড়েছেন রবীন্দ্র জাডেজাও। আইপিএলে একেবারেই ছন্দে ছিলেন না এই অলরাউন্ডার। ব্যাটে, বলে ব্যর্থ। মাঝপথেই গিয়েছে নেতৃত্ব। চোটের কারণে পুরো আইপিএলও খেলতে পারেননি জাডেজা। নেওয়া হল না ঈশান কিশনকেও। তিনিও ছন্দে নেই। ওপেনার বা উইকেটরক্ষক হিসাবে অনেক বেশি দাবিদার রয়েছেন। তাই এ বারের বিশ্বকাপে তরুণ কিশনকে দেখতে নাও পাওয়া যেতে পারে। এ বারের আইপিএলে শুরু থেকে ছন্দে ছিলেন না যশপ্রীত বুমরাও। তাই এই দলে নেওয়া হল না তাঁকে। শেষের দিকে কয়েকটি ম্যাচে উইকেট পেয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও এই দলের বোলার গোটা আইপিএলে ভাল বল করেছেন। তাই বাদ বুমরাও।