সুযোগ: আইপিএলে দুরন্ত বোলিংয়ের জন্য উমরানের সামনে খুলে গেল জাতীয় দলের দরজাও। ফাইল চিত্র।
আইপিএলে গতির তুফান তুলে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। আদায় করে নিয়েছিলেন সুনীল গাওস্কর থেকে ব্রেট লি-র প্রশংসা। সেই উমরান মালিক এ বার আইপিএল মঞ্চ থেকে পা রাখতে চলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুনিয়ায়। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আসন্ন পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের জন্য উমরানকে ভারতীয় দলে সুযোগ দিলেনজাতীয় নির্বাচকেরা।
ভারতীয় দলে উমরানের সুযোগ পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই জম্মুর গুজ্জর নগরে এই পেসারের বাড়িতে শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসব। বিরিয়ানি, নিহারি, নান খাইয়ে ছেলের ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার সংবাদ দিচ্ছেন বাবা রশিদ। আনন্দবাজারকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘রসুলের পরে আমার ছেলে ভারতীয় দলের হয়ে খেলবে ভাবতেও পারিনি। ওর মা আর আমি এই খুশিতে পাড়ার প্রত্যেককে বিরিয়ানি আর নিহারি খাওয়াচ্ছি। এতটা খুশি কখনও হইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘ছোটবেলায় উমরানকে অনেক বারণ করেছি ক্রিকেট খেলতে। আমাকে লুকিয়ে ও মাঠে চলে যেত। যদি জানতাম একদিন ভারতীয় দলের হয়ে খেলবে, তা হলে কখনওই নিষেধ করতাম না।’’
এখানেই না থেমে উমরানের বাবা বলতে থাকেন, ‘‘আইপিএলের পরবর্তী পর্বে ওরা যেতে না পারায় খুব খারাপ লাগছে। তবে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবর আমাকে প্রচণ্ড আনন্দ দিয়েছে। এই অনুভূতি ভাষায় কী ভাবে প্রকাশ করি? ছোটবেলা থেকে যে পরিশ্রম করতে দেখেছি, তার ফল পেল ও।’’
উমরানের সুযোগ পাওয়ার খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপ টুইট করেছেন, ‘‘উমরান মালিককে অভিনন্দন।’’ ভারতের প্রাক্তন অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান টুইট করেছেন, ‘‘অল্প বয়সি ছেলেটার কাছে এটা একটা দারুণ সুযোগ। অনেক শুভেচ্ছা রইল উমরান।’’ তরুণ এই পেসারকে জম্মু ও কাশ্মীর দলের শিবিরে ডেকেছিলেন ইরফানই। অনূর্ধ্ব-২৩ বিভাগের ম্যাচ মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন ইরফান। একটি ছেলের বলের গতি দেখে আব্দুল সামাদকে প্রশ্ন করেছিলেন, বোলারটা কে? সে দিনই ইরফান আবিষ্কার করেন, লম্বা রেসের ঘোড়া হতে চলেছেন উমরান।
এ বারের সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদে ডেল স্টেনের কোচিং উমরানকে আরও ধারালো করেছে বলে মনে করছেন গাওস্করের মতো কিংবদন্তিরাও। জানা গিয়েছে, প্র্যাক্টিসে যখন উমরান বল করতেন, তখন নেটে টানা দাঁড়িয়ে দেখতেন স্টেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি প্রাক্তন ফাস্ট বোলার নেটে দাঁড়িয়ে ভুল শুধরে দিতেন উমরানের। আইপিএলের শুরুর দিকে লাইন ও লেংথেও সমস্যা হচ্ছিল তরুণ পেসারের। একটি স্টাম্প বসিয়ে বল করিয়ে উমরানের লাইন শুধরে দেওয়ার চেষ্টাও করেন স্টেন। যার ফল এই আইপিএলে দারুণ ভাবে পেয়েছেন ২২ বছরের এই তরুণ।
চলতি আইপিএলের প্রতি ম্যাচেই ১৫০ কিলোমিটারের উপরে অনেক ডেলিভারি করেছেন উমরান। এমনকি, এই আইপিএলের এখনও পর্যন্ত দ্রুততম বলটাও এসেছে উমরানের হাত থেকে। ১৫৭ কিলোমিটার গতিতে বলটা করেছিলেন তিনি।
উমরানের গতিতে মুগ্ধ হয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। কিন্তু সুনীল গাওস্করের মতো প্রাক্তনকে মুগ্ধ করেছে আরও একটা ব্যাপার। আইপিএলের সম্প্রচারকারী চ্যানেলে দিন কয়েক আগে গাওস্কর বলেছিলেন, ‘‘গতির পাশাপাশি উমরানের নিয়ন্ত্রণ আমাকে দারুণ মুগ্ধ করেছে। নিখুঁত নিশানায় বল করছে ও।’’ গাওস্কর চেয়েছিলেন, ইংল্যান্ডেও যেন নিয়ে যাওয়া হয় উমরানকে। যদিও ভারতীয় নির্বাচকেরা উমরানের নামটা বিবেচনা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের জন্য।