India vs South Africa 2021-22

Ali Bacher: শুধু তাঁদের নয়, ৩০ বছর আগে বিপ্লব ঘটেছিল ভারতীয় ক্রিকেটেও, আনন্দবাজার অনলাইনে বাখার

যে দু’ জনের হাত ধরে কলকাতায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছিল, তাঁদের একজন জগমোহন ডালমিয়া ছয় বছর আগে প্রয়াত। জীবিত ৭৯ বছর বয়সী আলি বাখার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৪৬
Share:

ডালমিয়ার হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে টেলিভিশন সম্প্রচারে যে বিপ্লব এসেছিল, তার পিছনে ছিল বাখারের মাথা।

৩০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে নতুন ইতিহাসের শুরু হয়েছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন সিরিজে ক্লাইভ রাইসের দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হয়েছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ভারতের। সেই ইতিহাসের ৩০ বছর এ বার পালিত হবে যখন রবিবার বিরাট কোহলীর ভারত সেঞ্চুরিয়নে ডিন এলগারের দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে। যে দু’ জনের হাত ধরে সে বার কলকাতায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়েছিল, তাঁদের একজন জগমোহন ডালমিয়া ছয় বছর আগে প্রয়াত। জীবিত রয়েছেন ৭৯ বছর বয়সী আলি বাখার। এখনও তাঁর চোখের ছবির মতো ভাসছে সব কিছু।

Advertisement

তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের প্রধান জোহানেসবার্গের বাড়ি থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, কী ভাবে সেই সিরিজ আয়োজন করা সম্ভব হয়েছিল। জানা গেল, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যাবর্তন সিরিজ খেলার জন্য ভারত মোটেই প্রথম পছন্দ ছিল না। বাখার বললেন, ‘‘আমরা এটুকু ভেবেছিলাম, উপমহাদেশে আমাদের প্রত্যাবর্তন সিরিজ হবে। শুরুতে আমরা শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলাম। কারণ তার আগে শ্রীলঙ্কা আমাদের দেশে এসে বেসরকারি সিরিজ খেলে গিয়েছিল। তারপর পাকিস্তানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তারপর আমরা মুম্বই এসেছিলাম।’’

বাকিটা স্রেফ ঘটে গিয়েছিল। বাখার বললেন, ‘‘মুম্বইতে পা রেখেই সংবাদপত্রের শিরোনামে আমার চোখ গিয়েছিল, ‘ভারত সফর থেকে সরে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান’। পরের সপ্তাহে অক্টোবরে ভারতে এসে পাঁচটা একদিনের ম্যাচ খেলার কথা ছিল পাকিস্তানের।’’

Advertisement

এরপর দেওয়াল লিখনটা পড়তে অসুবিধে হয়নি বাখারের। পাশে পেয়ে যান ডালমিয়াকে। তিনি তখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব। বাখার বললেন, ‘‘ডালমিয়া আমাকে বললেন, একটুও দেরি না করে ভারত সফরে আসার প্রস্তাব দিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ম্যাচ হবে কলকাতায়। উনি আমাকে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গেও দেখা করিয়ে দিয়েছিলেন।’’

কিন্তু সেখানেই ব্যাপারটা চূড়ান্ত হয়নি। বাখারকে তাঁর বোর্ডের বাকিদের সঙ্গেও কথা বলতে হয়েছিল। সব এখনও স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। বললেন, ‘‘তখন আমাদের বোর্ডে পার্সি সন ছিলেন। উনি প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিলেন। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে আমার বন্ধু স্টিভ সেয়োতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। জানাই, ভারতে খেলার আমন্ত্রণ রয়েছে। এরপর সনের সঙ্গে সোয়েতির ১৫-২০ মিনিট ফোনে কথা হয়েছিল। ফোন রাখার পরে সন বলেছিল, আমরা ভারতে খেলতে যাচ্ছি। ওই ১৫-২০ মিনিট সনকে সোয়েতি কী বুঝিয়েছিল, সেটা আজও আমি জানি না।’’

সমস্যা আরও ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে শ্বেতাঙ্গ বনাম কৃষ্ণাঙ্গের চিরকালীন লড়াই। বাখার বললেন, ‘‘আমাদের বৈঠকে কৃষ্ণাঙ্গরা ভারতে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু বলেছিল, শ্বেতাঙ্গরা যদি যায়, তা হলে ওরা যাবে না। আমরা মেনে নিয়েছিলাম।’’

এরপর সমস্যা তৈরি হয়েছিল ভারত থেকে। বাখার জানালেন, ‘‘পরের দিন ভারত থেকে মাধবরাও সিন্ধিয়ার (তৎকালীন বোর্ড সভাপতি) ফোন। বললেন, সব ঠিক আছে। কিন্তু শুধু শ্বেতাঙ্গদের দল পাঠালে ভারতে সমস্যা হবে।’’ সেই সমাধানও বাখারই করেছিলেন, ‘‘আমাদের নির্বাচক কমিটির প্রধানকে ফোন করলাম। বললাম, চার জন এমন ক্রিকেটারকে নিন, যারা ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলবে। এদের মধ্যে যেন দু’ জন শ্বেতাঙ্গ এবং দু’ জন কৃষ্ণাঙ্গ থাকে। তারা খেলবে না। শুধু দলের সঙ্গে অনুশীলন করবে।’’ নিজেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘এই চার জনের মধ্যে একজনকে আপনারা সবাই চেনেন। তার নাম হ্যান্সি ক্রোনিয়ে!’’

জানা গেল ডালমিয়ার হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে টেলিভিশন সম্প্রচারে যে বিপ্লব এসেছিল, তার পিছনে ছিল বাখারের মাথা। বললেন, ‘‘কলকাতায় পৌঁছে দেখলাম দূরদর্শনে খেলা দেখানো হবে। তার জন্য বিসিসিআই তাদের টাকা দেবে। ভারতে নাকি সেটাই নিয়ম। আমি তো দেখে থ। ডালমিয়াকে বললাম, আরও একটা ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছি আমরা। তৈরি থাকুন। বললাম, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই সিরিজ দেখানোর ব্যবস্থা করব আমরা। তার বদলে ভারতীয় বোর্ডকে মোটা টাকা পাইয়ে দেব। ডালমিয়া প্রথমে এটা বিশ্বাস করতে চাননি। তারপর বুঝলেন, বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেট অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাকিটা ভারতীয় ক্রিকেটে ইতিহাস।’’

বাখারের কথায়, ৩০ বছর আগে ইতিহাস শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটেই হয়নি, ভারতীয় ক্রিকেটেও হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement