আকর্ষণ: অজাজ়ের দশে দশের নেপথ্যে কোচের মন্ত্রও। ছবি: টুইটার।
নিউজ়িল্যান্ডে পা রেখেছেন দিন তিনেক হল। কিন্তু এখনও পরিবারের সঙ্গে দেখা করে উঠতে পারেননি অজাজ় পটেল। কারণ এই মুহূর্তে ভারত থেকে ফিরে কোয়রান্টিনে রয়েছে পুরো নিউজ়িল্যান্ড দল। তবে একটা জিনিস বুঝে গিয়েছেন তিনি এবং নিউজ়িল্যান্ড দল। দেশ থেকে যে অজাজ় ভারত সফরে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে এই অজাজ়ের একটা বড় পার্থক্য হয়ে গিয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে মুম্বই টেস্টের প্রথম ইনিংসে নেওয়া ১০ উইকেট বদলে দিচ্ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত স্পিনারের জীবনটা। এখন এই বাঁ-হাতি স্পিনারকে দেখলে ভক্তরা এগিয়ে আসছেন সই নেওয়ার জন্য, ছবি তোলার জন্য। যে দৃশ্যটা দেশে ফেরার পথে দেখা গিয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর যে যাঁর ঘরে ফিরতে পারবেন নিউজ়িল্যান্ডের সাপোর্ট স্টাফ এবং ক্রিকেটাররা। তার আগে ক্রাইস্টচার্চ থেকে ভিডিয়ো কলে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বদলে যাওয়া এই অজাজ়ের ছবিটা তুলে ধরলেন নিউজ়িল্যান্ডের বোলিং কোচ শেন জুর্গেনসেন। অজাজ় তো ভারত ছাড়ার আগে বলেছিলেন, তাঁর জীবন খুব একটা বদলাবে না। তিনি বাসে করেও বাড়ি ফিরতে পারবেন। কেউ ঘিরে ধরবে না। নিউজ়িল্যান্ডে ফিরে ছবিটা কী রকম দাঁড়িয়েছে? শেন বলছিলেন, ‘‘নিউজ়িল্যান্ডে ফেরার পরে আমরা তো এখন কোয়রান্টিনে আছি। যে কারণে বাইরের লোকের সঙ্গে খুব বেশি এখানে দেখা করার সুযোগ এখনও হয়নি অজাজ়ের। তবে আমার কথা মিলিয়ে নেবেন পরে। ও কিন্তু জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। আমরা সেটা বুঝতে পারছি।’’
সেটা কী রকম? হাসতে হাসতে নিউজ়িল্যান্ডের বোলিং কোচ বললেন, ‘‘ভারত ছাড়ার সময়ই আমরা ওর জনপ্রিয়তা টের পেয়েছিলাম। নিউজ়িল্যান্ড আসার পথে বিমানবন্দরে এবং বিমানেও আমরা সেই ছবিটা দেখেছি। লোকে ওকে চিনতে পারছে। সই, ছবি নেওয়ার আব্দার করছে।’’
ইতিহাসের সাক্ষী থাকা মুম্বই টেস্টে নামার আগে কিন্তু রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন অজাজ়। কানপুরে আশা অনুযায়ী বল করতে পারেননি। সেই সময় আসরে নামেন কোচ শেন জুর্গেনসেন। টেস্টের আগের দিন একটি বিশেষ ভিডিয়ো পাঠিয়ে তাতিয়ে দেন এই বাঁ-হাতি স্পিনারকে। কী ছিল সেই ভিডিয়োয়? কেনই বা ওটা পাঠালেন? শেন বলছিলেন, ‘‘অজাজ় অনেক দিন ম্যাচ প্র্যাক্টিস পায়নি। করোনা আর লকডাউনের জেরে আটকে গিয়েছিল। তার পরে বাংলাদেশে গিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ় খেলে। কিন্তু সেটাও কুড়ি ওভারের ক্রিকেট ছিল। যে কারণে কানপুর টেস্টে ও ঠিকমতো ছন্দে ছিল না। আমার তখন মনে হয়েছিল, শুধু মুখের কথায় হবে না। ওকে অন্য ভাবে তাতাতে হবে। তখন একটা ভিডিয়ো ক্লিপিং বানিয়ে অজাজ়কে পাঠিয়েছিলাম।’’ কী ছিল আপনার ওই ভিডিয়োয়? জবাব আসে, ‘‘অজাজ় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দারুণ সাফল্য পেয়েছে। সেই সব জায়গায় ওর বোলিংয়ের ভিডিয়োগুলো ওকে পাঠিয়েছিলাম।’’
দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিউজ়িল্যান্ড কোচিং দলের সঙ্গে জড়িত শেন। এত দীর্ঘ সময় ধরে কেউ ব্ল্যাকক্যাপসের কোচিং করায়নি। তিনি কবে প্রথম দেখেছিলেন অজাজ়কে? শেনের জবাব, ‘‘২০১৭ সালে প্রথম দেখি। সেটা আমাদের একটা উইন্টার ট্রেনিং প্রোগ্রাম ছিল। নিউজ়িল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা নজর কাড়ে, তাদের নিয়ে ওই কর্মসূচিটা হয়। সেখানে এসেছিল অজাজ়।’’ নিউজ়িল্যান্ডে শীতকালে ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য বাইরে অনুশীলন সম্ভব হয় না। আর ইন্ডোরে নানা অভিনব পদ্ধতিতে অনুশীলন করানো হয় অজাজ়দের। যেমন, কার্পেটের পিচে বোলিং। এমনকি কখনও কখনও উপমহাদেশর পিচের কথা মাথায় রেখে সে রকম পরিবেশ-পরিস্থিতিও তৈরি করা হয়। সে ভাবে অনুশীলন করেই তৈরি হয়েছেন অজাজ়। শেনের কথায়, ‘‘শীতকালের ওই বিশেষ অনুশীলনে আমরা এমন পরিবেশ তৈরি করি যার মোকাবিলা আমাদের বিদেশে গেলে করতে হবে। উপমহাদেশের সফর থাকলে ঘূর্ণি পিচ বানানোর চেষ্টা করা হয়। সেখানে বোলারদের পাশাপাশি ব্যাটারদেরও অনুশীলন চলে।’’
কয়েক দিন আগেই নিউজ়িল্যান্ডের প্রাক্তন উইকেটকিপার ইয়ান স্মিথ অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের দেশে স্পিনারদের উৎসাহ দেওয়ার মতো কোনও পিচই নেই। যে কারণে টেস্ট ক্রিকেটের মানের ভাল স্পিনার উঠে আসছে না। অজাজ়ের সাফল্যের পরে কি ছবিটা বদলাতে পারে? শেন খুব একটা নিশ্চিত নন। বলছিলেন, ‘‘এই মুহূর্তে মনে হয় সে রকম কিছু হবে না। আমাদের পেস আক্রমণ খুবই ভাল। যে আক্রমণ আমাদের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতিয়েছে। তাই পেস আক্রমণটা আমাদের কাছে গুরুত্ব পাবে। আর আমাদের এখানকার পিচ বছরের পর বছর ধরে পেসারদের সাহায্য করছে। সেটা বদলানোও অল্প সময়ে হবে না।’’ তবে অজাজ়দের বোলিং কোচ এ-ও বলে দিলেন, ‘‘পরিস্থিতি অবশ্য একটু একটু করে বদলাচ্ছে। নিউজ়িল্যান্ডের কয়েকটা পিচে পরের দিকে বল ঘুরছে। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়।’’
জিম লেকার, অনিল কুম্বলেদের কীর্তি স্পর্শ করে অজাজ় পটেল শুধু নিজের জীবনই বদলালেন, না নিউজ়িল্যান্ড ক্রিকেটেও বিপ্লব আনলেন, সেটা সময়ই বলবে।