India

India vs South Africa: সত্যিই যেন লর্ড, ভরসা এখন ‘পুরানে’

যে ভাবে এই অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার একটার পর একটা ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছে, তার পরে তাদের দু’জনের গায়ে পুরনো বা অচল তকমাটা লাগিয়ে দেওয়া খুবই স্বাভাবিক।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৮
Share:

বিধ্বংসী: ৬১ রান দিয়ে সাত উইকেট শার্দূল ঠাকুরের। ছবি পিটিআই।

গণমাধ্যমে একটা শব্দ ইদানীং খুব ঘুরছে। ‘পুরানে’! চেতেশ্বর পুজারার ‘পু’ আর অজিঙ্ক রাহানে থেকে নেওয়া ‘রানে’ মিলে এই ‘পুরানে’। অর্থাৎ, যা পুরনো হয়ে গিয়েছে, আর চলছে না। ধারাবাহিক ভাবে ব্যর্থ হওয়ার জন্য পুজারা-রাহানে জুটিকে এখন ডাকা হচ্ছে ‘পুরানে’ বলে!

Advertisement

গত বছরে পুজারার ব্যাটিং গড় ছিল ২৮, রাহানের ২০। যে ভাবে এই অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার একটার পর একটা ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছে, তার পরে তাদের দু’জনের গায়ে পুরনো বা অচল তকমাটা লাগিয়ে দেওয়া খুবই স্বাভাবিক। ওয়ান্ডারার্সের প্রথম ইনিংসেও শোচনীয় ব্যর্থ হয়েছে দু’জন। কিন্তু ক্রিকেট দেবতা বোধ হয় প্রত্যেকের জন্য একটা শেষ সুযোগ এনে দেন। পুজারা আর রাহানেও বুধবার ওয়ান্ডারার্সে সেই সুযোগ পাবে। যেখানে শুধু ভারতকে বাঁচাতেই নয়, নিজেদের টেস্ট জীবন দীর্ঘ করতেও লড়তে হবে খাদের কিনারায় থাকা দুই ক্রিকেটারকে।

তবে দ্বিতীয় দিনে একটা নামই ভারতীয় ক্রিকেটকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। শার্দূল ঠাকুর। যাকে আদর করে ভক্তরা বলে ‘লর্ড’ শার্দূল। এ দিন শার্দূলের বোলিং হিসাব ১৭.৫-৩-৬১-৭। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে ভারতের সেরা বোলিং।

Advertisement

অথচ মহম্মদ সিরাজের চোট না থাকলে শার্দূল ক’ওভার বল করার সুযোগ পেত, সন্দেহ। সিরাজ সোমবার চতুর্থ ওভার বল করার সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পায়। এ দিন মাঠে নামলেও পাঁচ ওভারের বেশি বল করতে পারেনি। যে কারণে শার্দূলের উপরে ভরসা করতে হয় নতুন অধিনায়ক কে এল রাহুলকে।

শার্দূলকে আরও একটা নামে ডাকা হয়— ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম’। ক্রিকেটে এই উপাধিটা তাকেই দেওয়া হয়, যে প্রয়োজনের সময় বল পেলেই উইকেট তুলে নিতে পারে। কিন্তু শার্দূলকে শুধু এই একটা তকমা দিয়ে বিচার করা ঠিক নয়। যে ছেলেটার এক দিনে সাতটা উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা আছে, যার ছ’টা টেস্টে ২৩টি উইকেট হয়ে গেল, তার ঝুলিতে নিশ্চয়ই আরও কিছু আছে।

শার্দূলের বলে হয়তো দারুণ কিছু গতি নেই, কিন্তু পিচ থেকে একটু সাহায্য পেলে বলকে কথা বলাতে পারে। একই জায়গায় ফেলে দু’দিকে সুইং করাতে পারে। এ দিন যেমন ওর ইনসুইংয়ে (যেটা বাঁ-হাতি ডিন এলগারের কাছে আউটসুইং) প্রথম উইকেটটা নিল। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে সাবলীল কিগান পিটারসেনকে আউট করল অফস্টাম্পের উপরে ড্রাইভ খেলতে বাধ্য করে। বলটা একটু দেরিতে ছোট্ট আউটসুইং করে পিটারসেনের ব্যাট ছুঁয়ে স্লিপে মায়াঙ্ক আরওয়ালের হাতে চলে যায়। ক্রিজ়ের কোণটাকেও শার্দূল খুব ভাল ব্যবহার করতে পারে। একটাও আলগা বল দেয়নি মারার জন্য। সবচেয়ে বড় কথা, সিংহহৃদয় ক্রিকেটার। যতটুকু সুযোগ পায়, নিজেকে নিংড়ে দেয়। মুম্বই থেকে সাধারণত আমরা দারুণ সব ব্যাটারই পেয়েছি। শার্দূলকে দেখে মনে হচ্ছে, খুব ভাল বোলার-অলরাউন্ডারও এ বার পেতে চলেছি।

দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতের রান দু’উইকেটে ৮৫। অনেকেই বলছে, ম্যাচটা সমান-সমান। আমি বলব, ভারতের দিকে ৬৫ শতাংশ ম্যাচ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘লিড’ বাদ দিয়ে ভারত এখন এগিয়ে ৫৮ রানে। এই রানটা যদি ২৩০-২৪০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে, তা হলে কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে পারা কঠিন। চতুর্থ-পঞ্চম (যদি ম্যাচ গড়ায়) দিনে ওয়ান্ডারার্সের উইকেটে ব্যাট করা খুবই কঠিন। পিচ ঢিলে হবে। ফাটলে পড়ে কোনও বল লাফিয়ে উঠবে, কোনও বল নিচু থাকবে। এখানে দু’শোর উপরে রান তাড়া করে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের পক্ষে ভারতীয় বোলিংকে সামলানো প্রায় অসম্ভব।

ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনার কে এল রাহুল এবং মায়াঙ্ক আগরওয়াল দ্রুত ফিরে গেল। স্লিপে রাহুলের ক্যাচটা বেশ কয়েক বার রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। অনেকটা ঋষভ পন্থের মাটি ঘেঁষে নেওয়া র‌্যাসি ফান ডার ডুসেনের ক্যাচটার মতো বিতর্কিত। ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে সুনীল গাওস্করও দেখলাম, এই দু’টো ক্যাচের তুলনা করলেন। তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেওয়ার পরে রাহুল যখন বেরিয়ে যাচ্ছে, দেখলাম ওর সঙ্গে বিপক্ষ অধিনায়ক ডিন এলগরের একটু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল। মনে হচ্ছে, ডুসেনের আউটটা মেনে নিতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। যার জেরে ওই সাময়িক উত্তেজনা। মায়াঙ্ক ফিরে গেল ডুয়ান অলিভিয়ে-র একটা ভিতরে আসা বল বুঝতে না পেরে ছাড়তে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে। ডুয়ান ছেলেটা ‘ক্রস সিম’ বেশি ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, বোলার নিজেও জানে না ওই বল ভিতরে আসবে না বাইরে যাবে। মায়াঙ্কও বোঝেনি।

ক্রিজ়ে এখন এমন দুই ব্যাটার, যারা নিজেকে এবং দলকে বাঁচাতে লড়ছে। শুরুটা দু’জনেই বেশ ইতিবাচক এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করল। পুজারা ৪২ বলে ৩৫ এবং রাহানে ২২ বলে ১১ রানে খেলছে। গুটিয়ে না থেকে দু’জনেই শট খেলেছে। বুধবারই বোঝা যাবে এই দুই ব্যাটারের ভাগ্য কোন দিকে যাচ্ছে। এবং, ম্যাচেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement