প্রতিপক্ষ: রশিদ খানের স্পিন বড় অস্ত্র আফগানদের। ফাইল চিত্র।
গত চার-পাঁচ মাস ধরে ক্রমাগত ঝড়-ঝাপ্টা আছড়ে পড়েছে তাঁদের দেশে। আফগানিস্তানে তালিবান শাসন জারি হওয়ার পরে ছবিটাই বদলে গিয়েছে সে দেশের। কিন্তু যাবতীয় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে আফগান ক্রিকেট এমন একটা সন্ধিক্ষণে এখন দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে আর গোটা দুয়েক ম্যাচ জিতলেই বাইশ গজে রূপকথা লিখে ফেলতে পারবেন রশিদ খানরা। চলে যেতে পারবেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। সেই রূপকথার প্রথম অধ্যায় লেখা হতে পারে আজ বুধবার, ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এত দূর আসার রাস্তাটা কতটা কঠিন ছিল? তালিবান শাসন জারি হওয়ার পরে কতটা কঠিন হয়েছিল বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়া? মঙ্গলবার দুবাই থেকে ভিডিয়ো কলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ পেসার হামিদ হাসান। তিনি অবশ্য মানতে চাইলেন না কোনও সমস্যা হয়েছে বলে। হামিদের কথায়, ‘‘মানসিক এবং শারীরিক দিক দিয়ে আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভাল হয়েছে। কোনও রকম সমস্যা নেই।’’ এর পরে যোগ করছেন, ‘‘আমরা দেশে কিন্তু সম্মান পাই। আবার দেশের বাইরে গেলেও আফগান ক্রিকেটারদের যথেষ্ট সম্মান করা হয়। যে কারণে আমাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’
আফগানদের সমস্যা না হতে পারে, কিন্তু এই দলটাকে হাল্কা ভাবে নিলে ভুগতে হতে পারে ভারতকে। এমনটাই মনে করেন ভারত-আফগানিস্তান দুটো দলকেই কোচিং করানো, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার লালচাঁদ রাজপুত। ২০০৭ সালে রাজপুতের কোচিংয়েই প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। এর পরে ২০১৬-১৭ সালে আফগান ক্রিকেটের দায়িত্বে ছিলেন রাজপুত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ভারতের মরণ-বাঁচন ম্যাচ নিয়ে রাজপুতের সতর্কবার্তা, ‘‘ভারত অবশ্যই এগিয়ে আছে। কিন্তু আফগানিস্তান দলটা যথেষ্ট বিপজ্জনক। ওরা যে কোনও সময় অঘটন ঘটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ম্যাচটা ভারতের কাছে সহজ হবে না।’’
কেন আফগানিস্তান এত বিপজ্জনক হয়ে উঠছে? মুম্বই থেকে ফোনে রাজপুত বললেন, ‘‘ওরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলে বেড়াচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেট ওদের খেলা নয়। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নিরিখে যথেষ্ট অভিজ্ঞ ওরা।’’
বাকি সবার মতো রাজপুতও মনে করেন, স্পিনটাই আফগানিস্তানের প্রধান শক্তি। কিন্তু এর বাইরেও এক জনের কথা বলছেন রাজপুত, যিনি ভারতীয়দের চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারেন। তিনি হাজ়রাতুল্লাহ জ়াজ়াই। রাজপুতের মতে, ‘‘জ়াজ়াই কিন্তু বিধ্বংসী ব্যাটার। ওপেন করে শুরু থেকেই মারতে পারে। পাওয়ার প্লে-র সুবিধাটা কাজে লাগায়। ওর ব্যাট চললে কিন্তু ভারতের সমস্যা আছে।’’ এই জ়াজ়াই দু’বছর আগে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬২ বলে অপরাজিত ১৬২ রান করেছিলেন।
ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আফগানিস্তান যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী, তা ধরা পড়ছে তাঁদের বর্ষীয়ান পেসারের কথায়। হামিদ বলছেন, ‘‘আফগানিস্তান যথেষ্ট ভাল দল। আমাদের ব্যাটিং, বোলিং ভাল। ফিল্ডিংয়েও অনেক উন্নতি করেছি।’’ ভারতকে হারানোর ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী? হামিদের জবাব, ‘‘আমাদের হাতে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিন আক্রমণ আছে। রশিদ, মুজিব-উর-রহমান এবং মহম্মদ নবি। মাঝের সারির ব্যাটাররা ছন্দে আছে। যদি স্কোরবোর্ডে একটু বড় রান তুলে দিতে পারি, তা হলে নিখুঁত বোলিং-ফিল্ডিং করে ভারতকে হারানোর ক্ষমতা অবশ্যই রাখি।’’
সেই ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পথ চলা শুরু হয়েছিল। খেলাটা তখন একেবারেই নতুন। কী ধরনের পরিকল্পনা করে মাঠে নামতেন যা ভারতকে সাফল্য এনে দিয়েছিল? রাজপুতের স্মৃতিচারণ, ‘‘আমরা কয়েকটা জিনিস ঠিক করে নিয়েছিলাম বিশ্বকাপের শুরুতে। আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট খেলব, ইতিবাচক থাকব, নিজেদের দক্ষতার উপরে ভরসা রাখব। আর বিশ্বকে বুঝিয়ে দেব, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও সফল হওয়ার জন্য ভারত কতটা মরিয়া।’’ এই মন্ত্রই আবার ভারতীয় ড্রেসিংরুমে উচ্চারিত করার সময় এসেছে।