রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।
প্রথমে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং এ বার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে হার। রোহিত শর্মার নেতৃত্বেও ট্রফিহীন ভারত। ২০১৩ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর থেকে ভারত কোনও আইসিসি প্রতিযোগিতা জেতেনি। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়ে সাফল্য পেলেও ট্রফি ছিল না। তাই রোহিতকে নেতা করা হয়। কিন্তু পাঁচ বারের আইপিএলজয়ী রোহিতও ভারতের হাতে ট্রফি দিতে পারছেন না। উল্টে মনে করা হচ্ছে তাঁর নেতৃত্বে ভারতের আগ্রাসী ভাব অনেকটাই মিইয়ে গিয়েছে। বিরাট নেতা থাকাকালীন ভারতের অনেক শান্ত ক্রিকেটারকেও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখা যেত। এখন তা দেখা যায় না। তাই নেতা রোহিতও কি এ বার ছাঁটাইয়ের পথে?
বিরাটের বদলে যখন রোহিতকে অধিনায়ক করা হয়েছিল, তখন তাঁর বয়স ৩৪ বছর। খুব বেশি দিন যে তিনি ক্রিকেট খেলবেন না, তা তখনই স্পষ্ট ছিল। তাই রোহিত কখনওই অধিনায়ক হিসাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ছিলেন না। বিরাট যে হঠাৎ ২০২১ সালে নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন, সেটাই বোর্ডের কাছে খুব অবাক করার মতো ঘটনা ছিল। বিশেষ করে ২০২২ সালে বিরাট যখন লাল বলের নেতৃত্ব ছাড়েন, তখন বোর্ড আরও অবাক হয়ে যায়। সে কথা এক সাক্ষাৎকারে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্বীকারও করেন। সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ছিলেন তিনি। সৌরভ বলেন, “সেই সময় বিরাটের বদলে সেরা বিকল্প ছিল রোহিতই। পাঁচটা আইপিএল জিতেছে ও। এশিয়া কাপে অধিনায়ক করা হয়েছিল। তখনও জিতেছে। রোহিতই সেরা পছন্দ ছিল সেই সময়।”
কিন্তু তেমন সাফল্য না পেলেও রোহিতের নেতৃত্ব নিয়ে বোর্ড তাড়াতাড়ি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। সামনে বিশ্বকাপ থাকায় সেটা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে। অন্তত সাদা বলের ক্রিকেটে এখনই অধিনায়ক বদল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এ বছর বেশি নেই। তাই সেগুলিতে রোহিত বিশ্রাম নিতেই পারেন এবং সে ক্ষেত্রে অধিনায়ক হবেন হার্দিক পাণ্ড্য। টেস্ট রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে। সেখানেও রোহিত বিশ্রাম নিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে টেস্টে নতুন অধিনায়ক দেখার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাট হাতে ছন্দহীন রোহিতও তিন ধরনের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিতে চাইবেন কি না সেই প্রশ্ন রয়েছে। রোহিতের জায়গায় তাহলে আগামী দিনে ভারতের অধিনায়ক কে হতে পারেন?
সাদা বলের ক্রিকেট
আগামী দিনে ভারতের দু’জন অধিনায়ক হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে সাদা বলের ক্রিকেটে আলাদা অধিনায়ক হতে পারে। সেই লড়াইয়ে কে কে থাকতে পারেন?
হার্দিক পাণ্ড্য
সাদা বলের ক্রিকেটে হার্দিক পরীক্ষিত অধিনায়ক। রোহিতের অবর্তমানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিয়মিত নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। আইপিএলে দু’বছর নেতৃত্ব দিলেন। এক বার জিতেছেন, অন্য বার ফাইনাল খেলেছেন। সাদা বলের ক্রিকেটে হার্দিক অধিনায়ক হিসাবে সফল। টি-টোয়েন্টিতে তাঁকে বার বার অধিনায়ক করা হয়েছে বিশ্বকাপের পর থেকে। তাই আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (২০২৪) হার্দিককে অধিনায়ক হিসাবে ভাবা যেতেই পারে। ৩৮ বছরের রোহিত সেই সময় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন কি না তা স্পষ্ট নয়। তাই রোহিতের জায়গায় সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়ক হতেই পারেন হার্দিক।
শ্রেয়স আয়ার
হার্দিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পরীক্ষিত হলেও এক দিনের ক্রিকেটে সে ভাবে নেতৃত্ব দেননি। সেই সঙ্গে হার্দিক চোটপ্রবণ। অলরাউন্ডার হার্দিককে লম্বা রেসের ঘোড়া তাই না-ও ভাবতে পারেন নির্বাচকেরা। সেই জায়গায় শ্রেয়সকে সুযোগ দেওয়া হতে পারে। ২৮ বছরের ভারতীয় ব্যাটার আইপিএলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হার্দিকের মতো সাফল্য না পেলেও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। চোট সারিয়ে ফিরে আসার পর শ্রেয়সকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। ভারতের হয়ে তিন ধরনের ক্রিকেটই খেলেন তিনি। সে ক্ষেত্রে সব ধরনের ক্রিকেটে তাঁকে অধিনায়ক করা যেতে পারে।
হার্দিক পাণ্ড্য। —ফাইল চিত্র।
লোকেশ রাহুল
একটা সময় রোহিতের পর অধিনায়ক হওয়ার দৌড়ে ছিলেন রাহুলই। কিন্তু এখন টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে অধিনায়ক ভাবা কঠিন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিরাটের পরিবর্তে তাঁকে অধিনায়ক করা হয়েছিল। কিন্তু সে ভাবে ছাপ ফেলতে পারেননি তিনি। লাল বলের ক্রিকেটে তাঁর এখন দলে জায়গা পাওয়া কঠিন। সাদা বলের ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক হিসাবে খেলছেন তিনি। তাই রোহিত না থাকলে সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসাবে ভাবে যেতে পারে রাহুলকে। যদিও তার আগে চোট সারিয়ে ফিরে রান করতে হবে তাঁকে।
লাল বলের ক্রিকেটে
টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আলাদা অধিনায়ক ভাবতে ভারত। আগামী টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনাল ২০২৫ সালে। সেই ম্যাচে রোহিত খেলবেন বলে মনে করা হচ্ছে না। তাঁর তখন ৩৮ বছর বয়স হবে। ওই বয়সে টেস্ট খেলার ধকল রোহিত কি নিতে পারবেন? তিনি না খেললে আগামী অধিনায়ক এই বছরের শেষেই ঠিক করে ফেলতে চাইবে ভারত। কে পেতে পারেন সেই দায়িত্ব?
বিরাট কোহলি
আরও এক বার অধিনায়ক হিসাবে ফেরানো যেতে পারে বিরাটকে। লাল বলের ক্রিকেটে তাঁর নেতৃত্বে ভারত একাধিক সাফল্য পেয়েছে। তাই টেস্টে অনভিজ্ঞ কারও কাঁধে দায়িত্ব না দিয়ে আগামী দু’বছরের জন্য তাঁকে ফিরিয়ে আনতেই পারে ভারত। সেই সঙ্গে নতুন কাউকে তৈরি করার সময়ও পেয়ে যাবে ভারত। তাই লাল বলের ক্রিকেটে আগ্রাসী বিরাটকে আরও এক বার দেখার আশায় থাকতেই পারেন সমর্থকেরা। বিরাট নিজেই লাল বলের নেতৃত্ব ছেড়েছিলেন, তাই বোর্ড তাঁকে আবার অধিনায়ক করতে চাইলে তিনি নিজে রাজি হবেন কি না সেই প্রশ্ন থাকছেই।
বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
যশপ্রীত বুমরা
চোট পাওয়ার আগে বুমরা ছিলেন টেস্টে ভারতের সহ-অধিনায়ক। তাই বুমরা ফিরলে আরও এক বার তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে ভারত। এখনও পর্যন্ত একটি মাত্র টেস্টেই নেতৃত্ব দিয়েছেন বুমরা। সেই টেস্টে হেরে যায় ভারত। কপিল দেবের পর প্রথম কোনও পেসার টেস্টে নেতৃত্ব দেয় ভারতকে। ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টোর দাপটে সেই ম্যাচ হেরে যায় ভারত। কিন্তু বুমরার নেতৃত্ব নিয়ে সেই ম্যাচে সে ভাবে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। তাই আরও এক বার পরীক্ষা করে দেখা যেতেই পারে তাঁকে। তার আগে যদিও চোট সারিয়ে মাঠে ফিরতে হবে বুমরাকে। অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে তাঁর। এ বার মাঠে ফেরার অপেক্ষা।
ঋষভ পন্থ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সিরিজ়ের পর এখন আর তেমন কোনও টেস্ট নেই ভারতের। বছরের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা যাবে ভারত। সেই সিরিজ়ের আগে পন্থ সুস্থ হবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকে অধিনায়ক করতে পারে ভারত। গাড়ি দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার আগে পর্যন্ত টেস্টে ভারতের ছন্দে থাকা সেরা ব্যাটার ছিলেন তিনিই। টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে তোলার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন পন্থ। যদিও ফাইনালটাই খেলতে পারেননি তিনি। এমন এক জন ক্রিকেটার সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরলে এবং ছন্দ ধরে রাখতে পারলে তাঁকে অধিনায়ক করতেই পারে ভারত।