পরিবারের সঙ্গে শুভমন। ফাইল চিত্র।
প্রবাদপ্রতিম সুনীল গাওস্কর, ভি ভি এস লক্ষ্মণ ওঁর দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করছেন। কিন্তু মন ভরল না লখবিন্দর সিংহ ও কীর্ত কৌরের। ছেলের কীর্তিতে ওঁরা অবশ্যই গর্বিত। তবে বাড়তি উচ্ছ্বসিত নন শুভমন গিল-এর বাবা-মা ।
মেলবোর্ন টেস্টে ভাল ব্যাট করেছিলেন। তাই প্রিয় ‘শুভি’-র ব্যাটিং দেখার জন্য সকাল থেকে টিভির সামনে বসেছিলেন লখবিন্দর। রোহিত শর্মা-র সঙ্গে শুরুটাও বেশ ভাল করেছিলেন শুভমন। চলতি টেস্ট সিরিজে ওপেনিং জুটিতে প্রথম অর্ধশতরানের পার্টনারশিপ গড়েন দুজন। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউডের পেস ও বাউন্সের ঝক্কি সামলে কেরিয়ারের প্রথম অর্ধশতরান সেরে ফেলেন পঞ্জাব তনয়। কিন্তু ইনিংস দীর্ঘায়িত করতে পারলেন না। সেটা নিয়েই ওঁদের আক্ষেপ মিটছে না।
মোহালি থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে ফোনে লখবিন্দর বলছিলেন, ‘‘প্রবাদপ্রতিম সুনীল গাওস্কর ওর ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন। এটা আমাদের কাছে অবশ্যই বড় প্রাপ্তি। তবে শুভির প্রথম টেস্ট অর্ধ শতরানের পরেও আমরা পুরোপুরি খুশি নই। ও কত বড় মাপের ব্যাটসম্যান সেটা আমি জানি। তাই দলের স্বার্থে ওর আরও লম্বা ইনিংস খেলা উচিত ছিল।’’
আরও পড়ুন: টেস্ট সেঞ্চুরিতে ছুঁলেন বিরাট কোহালিকে, স্টিভ স্মিথ এগিয়ে রানের গড়ে
বাবা তো, তাই হয়তো আবেগপ্রবণ হয়ে ছেলের ব্যাটিংয়ের পোস্টমর্টেম করে ফেললেন। তবে স্টিভ স্মিথ-এর ২৭তম টেস্ট শতরানের মঞ্চে নিজের নাম খোদাই করাও তো কম কথা নয়। শুভমনের ব্যাটিং শৌর্যের জন্যই তো দিনের শেষে সুবিধাজনক জায়গায় ভারত। অজি ব্যাটিংয়ের বেশির ভাগ সময়ে তিনি ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডিং করেন। ফলে সিডনির ২২ গজের চরিত্র বুঝতে তাঁর অসুবিধা হয়নি। তাই তো ওঁর ইনিংস জুড়ে দৃষ্টিনন্দন ব্যাকফুট পাঞ্চ ও ফরোয়ার্ড ডিফেন্স দেখা গেল। ছেলের এমন ব্যাটিং দেখে লখবিন্দরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সবকটা প্রস্তুতি ম্যাচে ও রান পেয়েছিল। তাই জানতাম টেস্ট দলে সুযোগ পেলেই রান করবে। সত্যি বলতে ওর ব্যাটিং দেখা চোখের শান্তি। বাবা হিসেবে নয়, কথাটা একজন দর্শক হিসেবে বলছি। কিন্তু ক্ষণিকের ভুলে প্রথম টেস্ট শতরান ফেলে এল। এই আফসোস কিছুতেই মিটবে না।’’
নিজেও ভাল ব্যাটসম্যান ছিলেন। তবে অর্থ ও পারিবারিক চাপে ক্রিকেটকে জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হন লখবিন্দর। যদিও একমাত্র ছেলে তাঁর ও কীর্ত কৌরের স্বপ্নপূরণ করলেন। কীভাবে শুরু হয়েছিল শুভমনের ক্রিকেট পাঠ? লখবিন্দরের জবাব, ‘‘মাত্র তিন বছর বয়স থেকে ক্রিকেটের প্রতি ওর ভালবাসা তৈরি হয়। সেটা আমার নজরে আসার পর ওকে দৈনিক প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করি। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হলেও একটা সময় ওকে দিনে ৫০০ থেকে ৭০০টা বল করতাম। পেস বোলিংয়ে খেলা রপ্ত করার জন্য দুরকম ভাবে অনুশীলন করাতাম। ভেজা টেনিস বলে সিমেন্টের পিচে অনুশীলন করানো তো ছিলই, খাটিয়ার একপ্রান্তে ওকে ব্যাট হাতে দাঁড় করিয়ে অন্যপ্রান্ত থেকে বল ছুড়তাম। তাছাড়া ও একটা স্টাম্প নিয়েও ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাট করে যেত, যাতে যেকোনও ডেলিভারিকে অনায়াসে খেলতে পারে।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেস্ট ক্রিকেট শাসন করার জন্যই শুভমনের জন্ম হয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন মাথা ঠিক রাখলে, শুভমন বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করবে।
আরও পড়ুন: নিজের করা রান আউটে মুগ্ধ জাডেজাই, বার বার দেখতে চান ভিডিয়ো