Coronavirus

ক্রিকেট বাতিল, ওঁরা কেউ চাষের জমিতে, কেউ দোকানে কর্মী

ব্যাট ছেড়ে কেউ বাধ্য হয়েছেন চাষের জমিতে কাজ করতে। কেউ বসছেন দোকানে।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৫:২২
Share:

প্রতীকী ছবি

করোনার আতঙ্কে বন্ধ ক্রিকেট মরসুম। সমস্ত স্তরের ক্রিকেট লিগ বাতিল করে দিয়েছে সিএবি। বন্ধ জেলা স্তরের সব প্রতিযোগিতাও। ক্রিকেট থেকেই যাঁদের সংসার চলত, তাঁরা এখন সব চেয়ে বেশি সঙ্কটে। লিগ মরসুম বাতিল হওয়ায় কলকাতার বহু ক্লাব তাঁদের পারিশ্রমিক মেটাতে পারেনি। জেলা স্তরের অথবা অন্য ধরনের প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকায়, ম্যাচ-প্রতি আয়ও বন্ধ।

Advertisement

ব্যাট ছেড়ে কেউ বাধ্য হয়েছেন চাষের জমিতে কাজ করতে। কেউ বসছেন দোকানে। কেউ আবার শুধু ভাত, ডাল খেয়ে টাকা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরুণ পেসার মিনাজুর রহমান। বাবা দোকানে কাজ করতেন। লকডাউনের জন্য দোকান বন্ধ ছিল। তাই আয়ের রাস্তাও ছিল বন্ধ। ক্লাবের পক্ষ থেকেও পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। তাঁর সংসার চলবে কী করে? রাজারহাটের গলাসিয়ায় থাকা রহমান এ বছর লিগে ১০ উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু পরিবারকে চালানোর জন্য চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রিকেটার। আমপানে তাঁদের বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় আরও বিপদে পড়তে হয়। বলছিলেন, ‘‘লকডাউনের মাঝেই আমপানের তাণ্ডবে বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। কী করে পরিবারকে সামলাব জানতাম না। এখন চাষ করেই যেটুকু অর্থ সংগ্রহ করার করছি। এ বছরের মতো ক্রিকেট তো বন্ধ। দেখা যাক পরের বছর কী হয়।’’

Advertisement

এ বছর লিগ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় পরের বছর দল পরিবর্তনের সময় যোগ্য অর্থ পাবেন কি না তা নিয়ে আতঙ্কে ক্রিকেটারেরা। নতুন চুক্তি কি পাবেন? ভবানীপুর ক্লাবের বাঁ-হাতি পেসার দুর্গেশ দুবেও বেশ সমস্যায়। বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন বহু দিন। দাদাও এখনও কোনও কাজ করেন না। দুর্গেশের উপরেই নির্ভর করে এই সংসার। তবুও ক্লাব থেকে পারিশ্রমিক পেয়েছেন। কিন্তু বাইরের প্রতিযোগিতায় খেলা বন্ধ হওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে গিয়েছে। এ বছর অনূর্ধ্ব-২৩ বাংলা দলের হয়ে খেলা এই ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘‘জমানো টাকা দিয়েই কোনও রকমে চলছে। আয়ের রাস্তা বন্ধ। পড়াশোনাও সে ভাবে করিনি যে অন্য কোনও আয়ের রাস্তা খুঁজব।’’ তা হলে কী করবেন তিনি? দুর্গেশ বলছিলেন, ‘‘আমাদের মতো ক্রিকেটারদের কথা ভেবে যদি কেউ এগিয়ে আসে, খুবই ভাল হয়। চাকরিও পাইনি। ভবিষ্যৎ গড়ার সময় যদি মানসিক ভাবে এতটা ভেঙে পড়ি, কী করে ঘুরে দাঁড়াব?’’

এরিয়ান ক্লাবের তরুণ ব্যাটসম্যান অঙ্কুর পালও বেশ সঙ্কটে। নভেম্বরেই মৃত্যু হয় বাবার। এখন মা আর তিনিই থাকেন। ক্রিকেট থেকেই অর্থ উপার্জন করে সংসার চলে ২২ বছর বয়সি এই ক্রিকেটারের। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে অসহায় তিনিও।

কাস্টমস ক্লাবের বাঁ-হাতি স্পিনার বাপি মান্না, মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যাটসম্যান অয়ন শুভ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো ক্রিকেটারদেরও অর্থ উপার্জনের রাস্তা বন্ধ। অয়ন বলছিলেন, ‘‘আমাদের মতো ক্রিকেটারদের কথা যদি কেউ ভাবত, তা হলে অন্তত এই সঙ্কট থেকে বেরোতে পারতাম। এ বছর তো আয় বন্ধই। পরের বার হবে কি না, সেটাও ঠিক নেই। ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায় আসা স্বাভাবিক।’’

এই সঙ্কটে তাঁদের পাশে কেউ না দাঁড়ালে অনেক প্রতিভাই মিলিয়ে যাবে অর্থাভাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement