উল্লাস: চমকে দিলেন কোকো ও (ডান দিকে) কিয়াং। ছবি: গেটি ইমেজেস
অস্ট্রেলীয় ওপেনে মেয়েদের সিঙ্গলসে শুক্রবার এক দিকে যেমন ইন্দ্রপতনের সাক্ষী থাকলেন দর্শকেরা, তেমনই টেনিস আকাশে উদয় হল নতুন তারকাদের। তৃতীয় রাউন্ডে হারলেন সেরিনা উইলিয়ামস এবং গত বারের চ্যাম্পিয়ন নেয়োমি ওসাকা। যথাক্রমে চিনের কিয়াং ওয়াং এবং মার্কিন তরুণী কোকো গফের বিরুদ্ধে এই দুই তারকার হারই মেলবোর্ন পার্কে এ দিনের সব চেয়ে বড় চমক।
শেষ বার সেরিনা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন অস্ট্রেলীয় ওপেনেই, ২০১৭ সালে। যা তাঁর ২৩তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব ছিল। তখন তিনি আট সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। মা হওয়ার পরে কোর্টে ফিরে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠলেও ছোঁয়া হয়নি মার্গারেট কোর্টের ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের অনন্য রেকর্ড। এ বারও মরসুমের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামে সেই স্বপ্ন রইল অপূর্ণ।
সাত বারের চ্যাম্পিয়ন তৃতীয় রাউন্ডেই ছিটকে গেলেন চিনের কিয়াং ওয়াংয়ের কাছে হেরে। রড লেভার এরিনায় ৩৮ বছর বয়সি সেরিনা বিশ্বের ২৯ নম্বর প্রতিপক্ষের কাছে হারেন ৪-৬, ৭-৬ (৭-২), ৫-৭ ফলে। ম্যাচ চলে প্রায় দু’ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট। প্রথম সেট হারিয়ে দ্বিতীয় সেটে সার্ভিস খোয়ানোর পরেও দুরন্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন সেরিনা। তৃতীয় সেটে ১১টি গেমে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করলেও মোক্ষম সময়ে পিছিয়ে পড়েন তিনি। ১৫-৪০ থেকে সেরিনা এর পরে ৪০-৪০ করলেও ধৈর্য হারাননি চিনা খেলোয়াড়। তৃতীয় ম্যাচ পয়েন্টে খেলোয়াড় জীবনের অন্যতম বড় জয় তুলে নেন তিনি।
আরও পড়ুন: টাইব্রেকারে অবিশ্বাস্য জয় অদম্য ফেডেরারের
ধাক্কা: রেকর্ড হল না সেরিনার। (ডান দিকে) বিষণ্ণ ওসাকা। ছবি: গেটি ইমেজেস এবং এএফপি।
কে এই কিয়াং ওয়াং? ২৮ বছরের চিনা খেলোয়াড় এই প্রথম অস্ট্রেলীয় ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠলেন। গ্র্যান্ড স্ল্যামে তাঁর সেরা ফল ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা। ন’বছর বয়েসে টেনিসে হাতেখড়ি কিয়াং-এর। কিছুদিন টেনিসের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জাপানেও। তাঁর আদর্শ জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফ। কোর্টে তাঁর সব চেয়ে বড় শক্তি, দ্রুত নড়াচড়া করতে পারা। প্রিয় শট— সার্ভিস। ২০১৮ মরসুমে প্রথম বার বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ২০ জনের মধ্যে উঠে আসেন। জেতার পরে উচ্ছ্বসিত ওয়াং বলেছেন, ‘‘সব সময় বিশ্বাস ছিল, এক দিন বড় কোনও জয় পাব। জানতাম না সেই দিনটা আজই। খুব খুশি। প্রাক-মরসুমে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। তারই ফল পাচ্ছি।’’ আরও বলেছেন, ‘‘সেরিনার মতো আগ্রাসী খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে কোনও ঢিলেমি দেওয়া যায় না। আমি চেষ্টা করেছিলাম পাল্টা আগ্রাসন দেখানোর। আমার মনে হয়, সেরিনা আজ অনেক ভুলও করেছে।’’ একই কথা শোনা গেল সেরিনার মুখেও। মার্কিন কিংবদন্তি বলেন, ‘‘আমার প্রতিপক্ষ দারুণ সার্ভিস করছিল। কিন্তু সেরিনাসুলভ রিটার্ন করতে পারিনি। সত্যি কথা বলতে, এই ম্যাচটা আমি হাতছাড়া করেছি। এ ভাবে খেললে হবে না। কিছুতেই নয়। পেশাদার অ্যাথলিট হিসেবে এ রকম ভুল করলে চলে না।’’
সেরিনার দেশের আর এক উঠতি তারকা ১৫ বছর বয়সি কোকো গফ আবার চার মাস পরে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে হারের বদলা নিলেন প্রাক্তন বিশ্বসেরা ওসাকাকে হারিয়ে। তা-ও আবার স্ট্রেট সেটে। ফল ৬-৩, ৬-৪। সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে ওসাকা মাত্র ৬৫ মিনিটে উড়িয়ে দিয়েছিলেন কোকোকে। শুক্রবার কোকোর জিততে তার চেয়ে মিনিট দুয়েক বেশি সময় লাগল। শুধু তাই নয়, মার্টিনা হিঙ্গিসের পরে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম বার ১৫ বছর বয়সে দুটি গ্র্যান্ড স্ল্যামে চতুর্থ রাউন্ডে খেলার কৃতিত্ব দেখালেন কোকো। ‘‘যুক্তরাষ্ট্র ওপেন থেকে অনেক শিখেছিলাম। শুধু নেয়োমির বিরুদ্ধে খেলাই নয়, গোটা প্রতিযোগিতা থেকে অনেক কিছু জেনেছিলাম। এখানে প্রথম দু’রাউন্ডে তিন সেটে লড়তে হয়েছে। মিডিয়াকে সামলাতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন কোর্টে নেমে খেলার থেকেও গোটা ব্যাপারটা আরও বেশি উপভোগ করতে পারছি। এ রকম জয় এত সবের মধ্যে আলাদা প্রাপ্তি,’’ বলেন কোকো। আর ওসাকার বক্তব্য, ‘‘১৫ বছরের প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কেউই হারতে চায় না। আমাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে।’’এ দিন আবার তৃতীয় রাউন্ডে হেরে টেনিসকে বিদায় জানালেন প্রাক্তন বিশ্বসেরা ক্যারোলিন ওজনিয়াকি।