চর্চায়: বুকাননের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ে সৌরভের। ফাইল চিত্র
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় কোচের ‘মধুচন্দ্রিমা’ শুধু গ্রেগ চ্যাপেল অধ্যায়েই থেমে থাকেনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলার সময়ে তখনকার কোচ জন বুকাননও তাঁতে অধিনায়কত্ব থেকে সরাতে চেয়েছিলেন। সেই কাজে সফলও হয়েছিলেন বুকানন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এই তথ্য ফাঁস করলেন কেকেআরের প্রাক্তন সদস্য এবং সৌরভ অধিনায়ক থাকার সময়ে ভারতীয় দলে কিছু দিনের জন্য ওপেনারের ভূমিকা পালন করা আকাশ চোপড়া।
কী ভাবে কেকেআর শিবিরে বুকানন ও সৌরভের সম্পর্ক ক্রমে তিক্ত হয়ে পড়েছিল, তা সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা শুনিয়েছেন আকাশ। তাঁর দাবি, তিক্ততা জেরেই সৌরভকে দায়িত্ব থেকে সরাতে চেয়েছিলেন বুকানন। ২০০৮ সালে আইপিএল শুরুর বছরে কেকেআরেই ছিলেন আকাশ চোপড়া। তাঁর অভিজ্ঞতায়, শুরুতে বুকানন ও সৌরভের সম্পর্ক ভালই ছিল। কিন্তু প্রথম মরসুমে দল ষষ্ঠ স্থানে শেষ করার পরেই দু’জনের সম্পর্কে বড়সড় অবনতি দেখা দেয়। আকাশের কথায়, ‘‘প্রথম আইপিএলের সময় বুকানন ছিলেন আমাদের কোচ আর সৌরভ অধিনায়ক। খুব কাছ থেকে দেখেছি, কোচ ও অধিনায়কের সম্পর্ক প্রথমে খুব ভাল ছিল। কিন্তু সময় যত এগোতে থাকে, ততই দু’জনের সম্পর্ক খারাপ হয়।’’
আকাশ জানিয়েছেন, ২০০৯-এ আইপিএলে সাফল্য পাওয়ার জন্য দলে একাধিক অধিনায়ক রাখার অদ্ভুত প্রস্তাব দেন বুকানন। যা সৌরভের পছন্দ হয়নি। যে প্রসঙ্গে আকাশ বলেন, ‘‘বুকানন ও সৌরভের কাজ করার পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথম বছরের শেষ থেকেই সৌরভকে অধিনায়কের পদ থেকে সরাতে চেয়েছিলেন কোচ। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে তিনি সেই প্রচেষ্টায় সফল হন। নেতৃত্ব যায়, ব্রেন্ডন ম্যাকালামের কাছে। কিন্তু সে বার কেকেআর অষ্টম হয়।’’
২০০৯ মরসুমে আইপিএল হয়েছিল ভারতের বাইরে, দক্ষিণ আফ্রিকায়। মনে করা হয়, সেই কারণেই সৌরভকে অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর কাজ সহজ হয়ে যায়।
কিন্তু সৌরভ নন, সে বারই আইপিএলে সবার শেষ হয়ে চাকরি হারান বুকাননই। আকাশ বলছেন, ‘‘আসলে বুকাননকে দায়িত্ব থেকে সরতেই হত। বেশ কিছু ব্যাপারে তিনি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন। তা ছাড়া কখনও-কখনও একটা ভুল হলে, তার পরে ভুল হতেই থাকে। এ ক্ষেত্রেও তা হয়েছিল। সোজা কথায়, বুকানন জমানায় ভাল কিছু হয়নি।’’ যোগ করেছেন, ‘‘কোচের ম্যান ম্যানেজমেন্টও ভাল ছিল না। পরিবার, বন্ধু ও পারিষদদের ভিড় বাড়িয়েছিলেন দলে।’’
একই দিনে অধিনায়ক সৌরভকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এক ভারতীয় এবং এক বিদেশি। প্রাক্তন ওপেনার ওয়াসিম জাফর বলেছেন, তাঁর ক্রিকেট জীবনের সেরা অধিনায়ক সৌরভ। মুম্বইয়ের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান একটি ওয়েবসাইটকে বলেছেন, ‘‘২০০০ সালের পরে দলটাকে গড়ে তুলেছিল সৌরভই। নবাগত ক্রিকেটারদের দারুণ সহযোগিতা করত অধিনায়ক সৌরভ।’’ যোগ করেছেন, ‘‘মিডল অর্ডার থেকে বীরেন্দ্র সহবাগকে ব্যাটিং অর্ডারে তুলে এনে ওপেনার বানিয়েছিল সৌরভ। এ ছাড়াও, জাহির খান, যুবরাজ সিংহ, হরভজন সিংহদের বিশ্ব মঞ্চের জন্য তৈরি করেছিল।’’ একই সুর ফের শোনা গিয়েছে নাসের হুসেনের গলায়। সৌরভ যখন ন্যাটওয়েস্ট জিতে লর্ডস ব্যালকনিতে জামা খুলে ওড়ানোর সেই বিখ্যাত দৃশ্য উপহার দেন, তখন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন নাসেরই। আইসিসি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘‘ন্যাটওয়েস্ট ফাইনাল আমার দেখা অন্যতম সেরা ওয়ান ডে। সৌরভের জামা খোলার দৃশ্যটা বিখ্যাত হয়ে রয়েছে। ওর আগে ভারত বলতে ছিল শুধু ভাল ছেলেদের দল। সৌরভই আগ্রাসী, অদম্য মনোভাবটা নিয়ে আসে।’’