যুযুধান: বেঙ্গালুরুর অনুশীলনে সুনীল। (ডান দিকে) প্রস্তুতি ব্রাইটের। টুইটার
আইএসএলে প্রথম বার মুখোমুখি হওয়ার আগে বেঙ্গালুরু এফসি ও এসসি ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে আশ্চর্য মিল।
মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে হারের হ্যাটট্রিকের পরেই ছাঁটাই হয়েছেন সুনীল ছেত্রীদের কোচ কার্লেস কুদ্রাত। এই মুহূর্তে দায়িত্বে সহকারী কোচ নৌশাদ মুসা। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখে নির্বাসিত হয়েছেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোচ রবি ফাওলার। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে তিনি রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে পারবেন না। দায়িত্ব সামলাবেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু ও সহকারী অ্যান্টনি গ্র্যান্ট। দু’দলেরই প্রধান সমস্যা রক্ষণ।
লাল-হলুদের ডিফেন্ডারেরা নয় ম্যাচে ১৫টি গোল খেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সুনীলদের বিরুদ্ধে অধিনায়ক ড্যানি ফক্সকেও পাওয়া যাবে না। গোয়ার বিরুদ্ধে তিনি লাল কার্ড দেখেছিলেন। লাল-হলুদ কর্তারা কোচ ও রক্ষণের প্রধান ভরসার নির্বাসন মুক্তির দাবি জানিয়ে চিঠি দিলেও লাভ কিছুই হয়নি। শুক্রবার রাতে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন থেকে ই-মেল করে জানানো হয়, রেফারির রিপোর্টের ভিত্তিতে ড্যানিকে এক ম্যাচ নির্বাসিত করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ লাল-হলুদ কর্তাদের প্রশ্ন, ‘‘আমরা রেফারির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম। অথচ তাঁর রিপোর্টের জেরেই নির্বাসিত করা হল ড্যানিকে! রেফারির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?’’
নয়টি ম্যাচে বেঙ্গালুরু খেয়েছে ১২টি গোল। তবে তিনটি করে ম্যাচে জয়, হার ও ড্র করে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সুনীলেরা টেবলের কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন ব্রাইট এনোবাখারে, অ্যান্টনি পিলকিংটনদের চেয়ে। কারণ, এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি ম্যাচেই জিতেছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। ড্র ও হার চারটি করে ম্যাচে। তাদের পয়েন্ট মাত্র সাত। তবে তার মধ্যেও স্বস্তি দিচ্ছে শেষ চারটি ম্যাচে অপরাজিত থাকার পরিসংখ্যান।
মাঠের বাইরের সমস্যায় বিপর্যস্ত দু’দলের ম্যাচে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে ব্রাইট বনাম সুনীল দ্বৈরথ। ২২ বছর বয়সি লাল-হলুদের নাইজিরীয় তারকা গোয়ার বিরুদ্ধে চার জনকে কাটিয়ে বিস্ময় গোল করে ইতিমধ্যেই মন জয় করে নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের। ছন্দে রয়েছেন সুনীলও।
ব্রাইট অবশ্য গোয়া ম্যাচের গোল নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন। শুক্রবার মাঠি স্টেনম্যানের জন্মদিন পালনের পরে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বললেন, ‘‘এ রকম গোল আগেও আমি করেছি।’’ কবে? ব্রাইট যোগ করলেন, ‘‘উলভসের হয়ে অভিষেক ম্যাচে বার্নেটের বিরুদ্ধে এই ধরনের গোলই করেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ১৭। আমার মতে ওই গোলটা এর চেয়েও ভাল ছিল।’’
রক্ষণ নিয়ে তিনিও যে উদ্বিগ্ন তা গোপন করেননি ব্রাইট। গোয়ার বিরুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার দু’মিনিটের মধ্যে রক্ষণের ভুলেই গোল খেয়েছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। নাইজিরীয় তারকা বললেন, ‘‘গোলটা করার পরে আমাদের সকলের মধ্যেই একটু আত্মতুষ্টি চলে এসেছিল। ভাবতে শুরু করেছিলাম, আমাদের কাজ শেষ। গোয়া সমতা ফেরানোর পরেই সম্বিত ফিরেছিল।’’
চোটের কারণে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধেও অনিশ্চিত পিলকিংটন। যদিও তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন লাল-হলুদ কোচ। পিলকিংটনের অভাব পূরণ করার জন্য শুরু থেকেই খেলাবেন জা মাগোমাকে। মাঝমাঠে ব্যবহার করবেন অ্যারন জোসুয়া আমাদিকে।
বেঙ্গালুরু শেষ তিনটি ম্যাচেই হেরেছে। তার পরেই সরিয়ে দিয়েছে স্পেনীয় কোচকে। তার উপরে কার্ড সমস্যায় শনিবার পুরনো ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না হরমনজ্যোত সিংহ খাবরা। কেউ কেউ মনে করছেন, সমস্যায় জর্জরিত বেঙ্গালুরুকে হারানো কঠিন হবে না এসসি ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে। এই মনোভাবই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে ফাওলারের। শুক্রবার দুপুরে অনুশীলনের ফাঁকে বার বার তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন ফুটবলারদের। একই সুর শোনা গিয়েছে ব্রাইটের গলায়। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের এখন এই ম্যাচের জন্য মনঃসংযোগ করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে, যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট অর্জন করে মরসুম শেষ করার।’’
স্বস্তিতে নেই সুনীলদের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ মুসাও। রক্ষণের এই বেহাল অবস্থায় তাঁর উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্রাইট। নব্বইয়ের শেষ দিকে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে কলকাতা ময়দানে চিমা ওকোরির মতো স্ট্রাইকারকে আটকেছেন মুসা। ১৯৯৭ সালের ১৩ জুলাই যুবভারতীতে ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে প্রয়াত কোচ অমল দত্তের ডায়মন্ড সিস্টেমের দর্পচূর্ণ করে মোহনবাগানকে ৪-১ হারানো ইস্টবেঙ্গল দলের অন্যতম সদস্যও ছিলেন তিনি। পুরনো ক্লাবের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে মুসা বলছেন, ‘‘ক্লাবের এই পরিস্থিতিতে আমরা কেউই স্বস্তিতে নেই। তবে ফুটবলারেরা সকলেই পেশাদার। কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, তা ওরা জানে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘অনুশীলনে সকলকেই খুব ইতিবাচক দেখেছি। কথা দিচ্ছি, এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেব।’’
শনিবার আইএসএলে: বেঙ্গালুরু এফসি বনাম এসসি ইস্টবেঙ্গল (সন্ধে ৭.৩০, স্টার স্পোর্টস টু চ্যানেলে)।