ফাইল চিত্র।
গোলাপি বলের টেস্টে এখনও পর্যন্ত দুই ম্যাচের অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতের। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আড়াই দিনে জেতে বিরাট-বাহিনী। দ্বিতীয় ম্যাচে অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্বপ্ন এখনও তাজা সমর্থকদের মনে। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘প্রাচীর’ চেতেশ্বর পুজারা মনে করেন, ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা এখন ইতিহাস। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু আমদাবাদের মোতেরায় গোলাপি বলের টেস্টে নতুন কীর্তি গড়ার লক্ষ্যেই নামতে চায় ভারত।
ম্যাচে যে রকম শান্ত ও ধৈর্যশীল মানসিকতা লক্ষ্য করা যায় পুজারার মধ্যে, সাংবাদিক বৈঠকেও তিনি একই রকম আবেগহীন। মন দিয়ে প্রশ্ন শোনার পরে কিছুটা ভেবে উত্তর দিয়ে গেলেন। পুজারার কাছে জানতে চাওয়া হয়, শেষ গোলাপি বলের টেস্টে ভারতের ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার দুঃস্বপ্ন কি কোনও ভাবে আসন্ন ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে? চেতেশ্বর পুজারা স্পষ্ট বলে দিলেন, “৩৬ রানে অলআউট হওয়ার ঘটনা এখন ইতিহাস। আসন্ন গোলাপি বলের টেস্টে নতুন কীর্তি গড়ার লক্ষ্যেই নামব।” ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাচীর আরও যোগ করেন, “অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ আলাদা। সেখানে গোলাপি বল অনেক বেশি নড়াচড়া করছিল। এক থেকে দেড় ঘণ্টার ব্যর্থতার মাশুল দিতে হয়েছিল আমাদের। কিন্তু ভারতের পরিবেশ প্রত্যেকেরই চেনা। এখানে পিচে বল কতটা নড়াচড়া করে তার আন্দাজও রয়েছে। তবে ম্যাচের আগে এখনও তিন দিন হাতে পাচ্ছি। তার মধ্যে পিচের চরিত্রে পরিবর্তন হতেই পারে। গোলাপি বল কী রকম আচরণ করে এই নতুন পিচে সেটাও দেখতে হবে।”
শনিবারই মোতেরার নতুন স্টেডিয়ামের পিচ দেখেছেন পুজারা। এখন থেকেই বলতে পারছেন না, এই পিচে কারা বেশি সাহায্য পাবে। তবে পুজারা মনে করেন, রাতে শিশির বড় ফারাক গড়ে দিতে পারে। শিশিরে গোলাপি বল হাত থেকে পিছলে যায়। ইডেন টেস্টের সময় মহম্মদ শামি বলেছিলেন, গোলাপি বলে জল লাগলে সাবানের মতো অনুভূতি হয়। পুজারা যদিও মনে করেন, শিশিরে ভারতীয় বোলারদের সে রকম সমস্যা হবে না। বলছিলেন, “রাতের দিকে শিশির পড়তে পারে। তবে আমাদের বোলাররা এই পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত। প্রয়োজন অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হবে।”
সাধারণত লাল বলের চেয়ে বেশি নড়াচড়া করে গোলাপি বল। তৃতীয় সেশনে নৈশালোকে নতুন বলের সঙ্গে মোকাবিলা করা সব চেয়ে কঠিন। সেই সঙ্গে পিচ যদি কিছুটা সাহায্য করে দেয়, তা হলে আর কথাই নেই। কিন্তু পুজারার মত, কাউন্টি খেলার পর থেকে সুইং ও সিম বোলিং সামলানো তাঁর কাছে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। ইংল্যান্ডের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে খেলে আসার ফলে নৈশালোকে গোলাপি বল সামলাতে তাঁর সমস্যা হবে না। পুজারার কথায়, “যেখানেই বল বেশি নড়াচড়া করে, সেখানে আমার কাউন্টি খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। ইংল্যান্ডের পরিবেশে খেলার ফলে সুইং সামলানো অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আশা করি, এই টেস্টেও সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।”
পরের দু'টি টেস্টের উপরেই নির্ভর করছে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের প্রতিপক্ষ কারা। ভারতকে ফাইনাল খেলার জন্য অন্তত ২-১ ফলে জিততে হবে সিরিজ। তাই দিনরাতের এই টেস্ট ম্যাচের গুরুত্ব অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। পুজারাও বলছিলেন, “আসন্ন দু'টি টেস্টের উপরে নির্ভর করবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের ভাগ্য। তাই যা আমাদের আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে, সে সব নিয়ে চিন্তা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। পিচ ও পরিবেশ নিয়ে এত ভাবতে চাই না। যে রকমই পিচ হোক, জিততে হবে।”
পুজারা জানিয়েছেন, ছন্দে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন হার্দিক পাণ্ড্য। ট্রেনিংয়ের মাত্রাও বাড়িয়েছেন। তবে তৃতীয় টেস্টের দলে তাঁর জায়গা হবে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। দল নিয়ে পুজারা নিজেও মুখ খুলতে চান না। তবে ঘূর্ণি পিচকে ক্রিকেটের অযোগ্য বলার প্রতিবাদ করতে ছাড়েননি ভারতের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। পুজারার সাফ কথা, “চেন্নাইয়ের পিচে বল অতিরিক্ত ঘুরতে পারে। অনায়াসে রান করতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সেই পিচকে ক্রিকেটের অযোগ্য বলা যায় না। আচমকা বাউন্সও ছিল না চেন্নাইয়ে। বিদেশের মাটিতে আমরাও তিন-চার দিনে ম্যাচ হেরেছি। তখন কিন্তু পিচ নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলিনি।”
পুজারা শেষে জানিয়ে গেলেন, টেস্ট সিরিজের পরে আইপিএল খেলার প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন। বলছিলেন, “বরাবরই টি-টোয়েন্টি খেলতে চাইতাম। চেন্নাই সুপার কিংসকে ধন্যবাদ আমাকে নেওয়ার জন্য।” আইপিএলের জন্য কাউন্টি খেলতে সমস্যায় পড়বেন না? ভারতীয় ‘প্রাচীর’-এর উত্তর, “আইপিএল শেষ হওয়ার পরেও কাউন্টি খেলার সময় পাওয়া যাবে। তখন ভেবে দেখব।”