পর্যবেক্ষণ: কোচ কিবুর কড়া নজরে প্রস্তুতি মাঝমাঠের স্তম্ভ বেইতিয়ার। মঙ্গলবার মোহনবাগান মাঠে। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা লিগে এখনও জয় নেই। ডার্বির আগে আজ বুধবার লিগের শেষ ম্যাচ। না জিতলে তো চাপে পড়ে যাবেন?
মঙ্গলবার সকালে প্রশ্নটা শুনে যে কিবু ভিকুনা এত রেগে যাবেন, কে জানত ! ‘‘আপনাদের শুধু ডার্বি আর ডার্বি। বারবার একই প্রশ্ন। ওটা নিয়ে ভাবছিই না। আমার মাথায় এখন শুধুই কালকের বিএসএস ম্যাচ। ওটা নিয়ে প্রশ্ন করুন,’’ বলেই ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছিলেন মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ। তাঁকে থামানোর পরে ক্ষোভে প্রলেপ দিতে প্রশ্ন করা হল, ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠেও ট্রফিটা জিততে পারলেন না কেন? সালভা চামোরোদের কোচের বিরক্তি আরও বাড়ল। ‘‘আমরা তো তাও রানার্স হয়েছি। সেটা খারাপ কী? পেনাল্টি দিলে অথবা ম্যাচটা ড্র হলে অন্য কিছু হয়তো হত। কলকাতার অন্য কেউ তো আমাদের আগে শেষ করেনি।’’ বলেই ঠোঁটে অদ্ভুত একটা শব্দ করেন কিবু। বোঝাই যায়, পড়শি ক্লাব ইস্টবেঙ্গলকেই ইঙ্গিত করছেন। বোঝাতে চাইছেন, স্বদেশীয় আলেসান্দ্রোর মেনেন্দেসের চেয়ে তো ভাল ফল হয়েছে মোহনবাগানের!
যত দিন যাচ্ছে, ততই কলকাতা ফুটবলের চাপ টের পাচ্ছেন পালতোলা নৌকার প্রধান কান্ডারি। ঘরের মাঠে ডুরান্ড হাতছাড়া। লিগে প্রথম দু’ম্যাচে চার পয়েন্ট খুইয়ে খেতাবের দৌড়ে পিছিয়ে গিয়েছে মোহনবাগান। তার উপরে আজ রঘু নন্দীর বিএসএস স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে নতুন করে রক্ষণ সাজাতে হচ্ছে তাঁকে। কারণ ফ্রান মোরান্তের সঙ্গে নিয়মিত খেলোয়াড় কিমকিমা কার্ডের জন্য খেলতে পারছেন না। চোটের জন্য অনিশ্চিত আশুতোষ মেহতাও। ফলে রক্ষণে দু’টো জায়গায় পরিবর্তন হতে পারে মোহনবাগানে। এ দিন সকালে ঘণ্টা দেড়েক অনুশীলনের পর জোসেবা বেইতিয়াদের কোচ স্বীকার করে নিলেন, ‘‘বারবার রক্ষণে পরিবর্তন করলে ক্ষতি হয়। কিন্তু উপায় নেই। আমি জানি, আমাদের প্রতিপক্ষ দলে ভাল বিদেশি আছে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ওরা হারার মতো খেলেনি,’’ বলার সময় কপালের ভাঁজ গভীর হয় কিবুর।
হবে না-ই বা কেন? মোহনবাগান রক্ষণের খবর পৌঁছে গিয়েছে ময়দানের পোড় খাওয়া কোচ রঘুর কাছেও। সেটা জানার পরেই শুরুতে স্ট্রাইকারে জোড়া বিদেশি নামিয়ে দিচ্ছেন তিনি। উইলিয়াম ওপোকু আর ব্রাইট মিডলেটম। কাদা বা বৃষ্টির মাঠে যাঁরা সাবলীল। পরে নামানোর জন্য ময়দানের ‘খেপ মাস্টার’ বলে পরিচিত ওয়াইদুকে রিজার্ভে রাখছেন তিনি। রঘু বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগানের সব ম্যাচ দেখেছি। ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে কিবুর দল অনেক ভাল খেলছে। ওদের বেইতিয়া খেলাটা তৈরি করে। ওকে খেলতে দেওয়া যাবে না।’’
কোচিং জীবনের পঁচিশ বছরে পঞ্চাশটিরও বেশি ক্লাবের কোচিং করিয়েছেন রঘু। তাঁর ছেলে রাজদীপ এখন এরিয়ানের কোচ। আজ একই দিনে বাবা এবং ছেলে নামছেন দুই প্রধানের বিরুদ্ধে কোচিং করাতে। যা ময়দান কখনও দেখেনি। সে জন্যই হয়তো রঘু একটু চাপে। বললেন, ‘‘ছেলে ইস্টবেঙ্গলের থেকে পয়েন্ট নিয়ে বাড়ি ফিরল, আমি পারলাম না, এটা হতে দিতে চাই না।’’
রঘুর এই স্বপ্ন কতটা সফল হবে, তা বলা কঠিন। কারণ মোহনবাগান মাঠে নয়, খেলা কল্যাণীতে। যেখানে মসৃণ মাঠে কিবু বাহিনীর ‘স্প্যানিশ আর্মাদা’ ফুল ফোটানোর চেষ্টা করবে। এ দিন দেখা গেল বেইতিয়া, চামোরো, ফ্রান গঞ্জালেসের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলছেন কিবু। প্রচুর সেট পিসও অনুশীলন হল বেইতিয়া-চামোরো যুগলবন্দিতে। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে মোহনবাগান মাঝমাঠের স্তম্ভ বেইতিয়া বলছিলেন, ‘‘ডুরান্ড পাইনি। কিন্তু ডার্বি তো জিততে পারি। লিগও পেতে পারি। আর সে জন্যই কালকের ম্যাচটা জিততে হবে।’’ তাঁর সঙ্গী চামোরোও বললেন, ‘‘আমরা হতাশ নই। সামনে ডার্বি আছে। ওটা জিততে চাই। কলকাতা এবং আই লিগ তো আমরা জিততেই পারি।’’
কিবু যতই ডার্বি ভুলে থাকার চেষ্টা করুন, চামোরো-বেইতিয়াদের মাথায় কিন্তু ঢুকে পড়ছে পয়লা সেপ্টেম্বরের ম্যাচ।
বুধবার কলকাতা লিগ: মোহনবাগান বনাম বিএসএস (কল্যাণী ৩-০০)।