Equestrian

ঘোড়দৌড়ে ঘোড়া কি খেলোয়াড়? না খেলার সরঞ্জাম? বিবাদে দুই সংস্থা, বিতর্ক আদালতে

ঘোড়াকে নিয়ে বিবাদ শুরু হয়েছে রাজস্থান ইকোয়েস্ট্রিয়ান সংস্থা ও ভারতীয় ইকোয়েস্ট্রিয়ান সংস্থার মধ্যে। বিবাদ গড়িয়েছে দিল্লি হাই কোর্টে। শুরু হয়েছে মামলা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৯
Share:

ঘোড়ার পিঠে কলকাতার অনুষ আগরওয়াল। এশিয়ান গেমসে পদক জিতেছিলেন তিনি। ছবি: রয়টার্স।

ঘোড়ার পিঠে চড়ে একের পর এক হার্ডল টপকে এগিয়ে যান ক্রীড়াবিদেরা। কখনও একা। কখনও দল বেঁধে। এশিয়ান গেমস থেকে অলিম্পিক্স, ইকোয়েস্ট্রিয়ান থেকে পদক নিয়ে যায় অনেক দেশ। এশিয়ান গেমসে এই খেলায় পদক পেয়েছে ভারতও। যে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ক্রীড়াবিদেরা দৌড়ন সেই ঘোড়াও কি ক্রীড়াবিদ? না কি শুটিংয়ে বন্দুক বা জ্যাভলিনে বর্শার মতো শুধুই খেলার সরঞ্জাম? ঘোড়াকে নিয়ে বিবাদ শুরু হয়েছে রাজস্থান ইকোয়েস্ট্রিয়ান সংস্থা ও ভারতীয় ইকোয়েস্ট্রিয়ান সংস্থার মধ্যে। বিবাদ গড়িয়েছে দিল্লি হাই কোর্টে। শুরু হয়েছে মামলা।

Advertisement

দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করেছে রাজস্থান সংস্থা। তাদের দাবি, ঘোড়া শুধুমাত্র একটি সরঞ্জাম। তাই ভারতীয় ইকোয়েস্ট্রিয়ান সংস্থায় নির্বাচনের সময় শুধুমাত্র রাজ্য সংস্থাগুলিরই ভোট দেওয়ার অধিকার থাকা উচিত। অন্য দিকে জাতীয় সংস্থার দাবি, ঘোড়ার দেখভালের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি ক্লাব কোটি কোটি টাকা খরচ করে। তারা আছে বলেই দেশের এই খেলার আয়োজনে সমস্যা হয় না। তা হলে তাদের কেন ভোটাভুটিতে অধিকার থাকবে না?

নিজেদের সমর্থনে দুই পক্ষই বেশ কিছু যুক্তি দিয়েছে। রাজস্থান সংস্থার দাবি, রোয়িংয়ে যেমন নৌকা একটি সরঞ্জাম, তেমনই ইকোয়েস্ট্রিয়ানে ঘোড়া। তাই সরঞ্জাম হিসাবেই তাকে ধরা উচিত। রাজস্থানের হয়ে মামলা করেছেন রঘুবেন্দ্র সিংহ। তিনি বলেন, “সাইকেল, নৌকা, শুটিংয়ের বন্দুক বিদেশ থেকে আনার সময় ছাড় পাওয়া যায়। ঘোড়ার ক্ষেত্রেও তাই। তা হলে ঘোড়া সরঞ্জাম ছাড়া আর কী? হ্যাঁ, একটাই তফাত আছে। ঘোড়াকে নিয়মিত খাবার দিতে হয়।” তাঁর আরও দাবি, ইকোয়েস্ট্রিয়ানে পদক পেলে তা পান ঘোড়ার চালক। কখনও কোনও ঘোড়াকে পদক বা পুরস্কার দেওয়া হয় না। কোনও ঘোড়া অসুস্থ হয়ে পড়লে ক্রীড়াবিদেরা সেই ঘোড়া বদলে নেন। কিন্তু কোনও ক্রীড়াবিদ অসুস্থ হলে কি তাঁকে বদলে ফেলা হয়? তিনি তো সুস্থ হয়ে আবার খেলায় ফেরেন। ঘোড়ার ক্ষেত্রে তো সেটা হয় না।

Advertisement

রাজস্থানের এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ইকোয়েস্ট্রিয়ান সংস্থার সচিব কর্নেল জয়বীর সিংহ। ‘জাতীয় স্পোর্টস কোড’-এর ১৬ নম্বর প্যারার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঘোড়াদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাবার, জল প্রয়োজন। ওদের দেখভাল করতে হয়। অনুশীলন করাতে হয়। ওদের তো আর ফরমুলা ওয়ানের গাড়ির মতো গ্যারেজে রেখে দেওয়া যায় না।”

ভারতীয় সংস্থার হয়ে আদালতে লড়ছেন আইনজীবী জয়ন্ত মেহতা। তিনি বলেন, “ঘোড়াদের রাখার জন্য আস্তাবল চাই। ওদের জন্য চিকিৎসক প্রয়োজন। তার জন্য প্রচুর খরচ। একটা রাজ্য সংস্থার পক্ষে এত কিছু করা সম্ভব নয়। আপনি তো আর ঘোড়াকে মিরাটে আর চিকিৎসককে দিল্লিতে রাখতে পারবেন না।”

রাজস্থান ইকোয়েস্ট্রিয়ান সংস্থা বন্দুক বা জ্যাভলিনের সঙ্গে ঘোড়ার তুলনা করেছে। কিন্তু জয়ন্তের মতে, ঘোড়া বাকিদের থেকে অনেক আলাদা। যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “ঘোড়াকে বিদেশ থেকে আনলে ওদের পাসপোর্ট করাতে হয়। বিদেশে কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে ওদের ভারতীয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ঘোড়া কেমন খেলবে তা ওর মেজাজের উপর নির্ভর করে। বন্দুক বা জ্যাভলিন তো আর মেজাজ দেখাতে পারে না। একটা ঘোড়া ভাল দৌড়লে তার দাম বেড়ে যায়। কিন্তু কেউ কোনও বন্দুক বা জ্যাভলিন ব্যবহার করে পদক জিতলে তার দাম কিন্তু বাড়ে না। তা হলে ঘোড়া কোন যুক্তিতে সরঞ্জাম। ঘোড়াও ক্রীড়াবিদ।”

দুই সংস্থার এই বিবাদে মুখ খুলেছেন এক প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ক্রীড়াবিদ বলেন, “ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকে কিন্তু অলিম্পিক্সে ঘোড়ার গলাতেই পদক পরানো হত। পরে একটা সময়ে ঘোড়া ও চালক দু’জনেই পদক পেত। পরে তা শুধু চালক পেতে শুরু করে। তাই ঘোড়াকেও ক্রীড়াবিদের সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। হতে পারে ওরা গেমস ভিলেজে থাকতে পারে না। তার মানে এই নয় ওদের গুরুত্ব কম।” ওই ক্রীড়়াবিদের মতে, এই সব বিষয়ে মামলা না করে জাতীয় ও রাজ্য সংস্থারগুলির উচিত কী ভাবে ভারত অলিম্পিক্সে ইকোয়েস্ট্রিয়ানে পদক পেতে পারে সেই বিষয়ে ভাবা। ঘোড়া তো আর নিজের জন্য কিছু দাবি করছে না। তা হলে অযথা একটি বিষয় নিয়ে মামলার কোনও অর্থ নেই বলেই মনে করেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement