উচ্ছ্বাস: উইকেট নিয়ে জোফ্রা আর্চারের সঙ্গে নতুন ভঙ্গিতে উৎসব দিনের নায়ক স্টুয়ার্ট ব্রডের (বাঁ দিকে)। ছবি: এএফপি।
জৈব সুরক্ষা বলয়ের নিয়ম ভেঙে দ্বিতীয় টেস্টের দল থেকে বাদ পড়েছিলেন জোফ্রা আর্চার। তাঁর ভুলের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্যও শুনতে হয়। মানসিক ভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, তৃতীয় টেস্টে খেলবেন কি না তা নিয়ে ছিল সংশয়। ফিরলেও আগের সেই বিধ্বংসী রূপে তাঁকে দেখা যাবে কি না ছিল প্রশ্ন। আর্চার ফিরলেন স্বমহিমায়।
তরুণ পেসারের বাউন্সারে বিদ্ধ হয়ে উইকেট ছুড়ে দেন ওপেনার জন ক্যাম্পবেল। ৯০ মাইল প্রতি ঘণ্টার গতিতে আর্চারের খাটো লেংথের বল ধেয়ে আসছিল ক্যাম্পবেলের পাঁজরে। একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না ক্যারিবিয়ান ওপেনার। কোনও রকমে বল সামলাতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন। তাঁর ব্যাটের উপরে লেগে বল চলে যায় গালি অঞ্চলে জো বার্নসের হাতে। অবসাদের চাপা যন্ত্রণাকে ভেদ করে হাসি ফেরে আর্চারের মুখে।
দ্বিতীয় দিনের নায়ক অবশ্যই স্টুয়ার্ট ব্রড। দুরন্ত বোলিংয়ের সঙ্গে ৪৫ বলে ৬২ রানের ঝোড়ো ইনিংস উপহার দিলেন তিনি। ৯টি চার ও একটি ছয়ের সৌজন্যে বিধ্বংসী ইনিংস গড়েন ব্রড। ৩৬৯ রানের লড়াকু স্কোরের বিরুদ্ধে নেমে দিনের শেষে ছয় উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১৩৭। খারাপ আলোর জন্য ফের নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। দুই উইকেট স্টুয়ার্ট ব্রডের। মেঘলা আবহাওয়ায় সুইং পেতে শুরু করেছেন জেমস অ্যান্ডারসনও। তাঁর বলে ক্যাম্পবেলের সহজ ক্যাচ স্লিপে ফস্কান বেন স্টোকস। তবুও অ্যান্ডারসনের উইকেট ভাগ্যে কোনও পার্থক্য গড়তে পারেনি। শেই হোপ ও শারমা ব্রুকসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তাঁর ঝুলিতে। একটি করে উইকেট আর্চার ও ক্রিস ওকসের।
এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই ২০১৪ সালে বরুণ অ্যারনের বাউন্সার আছড়ে পড়ে ব্রডের নাকে। মুহূর্তের মধ্যে রক্তক্ষয় শুরু হয়। ভারতীয় পেসারের বাউন্সারে আঘাত পাওয়ার পরে ব্যাটিংয়ে আতঙ্ক তৈরি হয় ব্রডের। এতটাই প্রভাবিত হন ব্রড, যে রাতে দুঃস্বপ্ন গ্রাস করতে শুরু করে তাঁকে। ২০১৪ সালের আগে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ২৩.৯৫। সেই ঘটনার পর থেকে ব্রডের গড় ১৩.৫৯। পাকিস্তানেরর বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করা পেসার একেবারেই ব্যাটিংয়ে মন দিতে পারছিলেন না। শনিবার ব্যাটিংয়ে ছন্দ ফেরে ব্রডের।
দ্বিতীয় দিনেই নতুন রেকর্ডের মালিক হলেন ক্যারিবিয়ান পেসার কেমার রোচ। শেষ ২৬ বছরে প্রথম ক্যারিবিয়ান পেসার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক পেরোলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে শেষ ক্যারিবিয়ান পেসার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেটের মালিক ছিলেন কার্টলি অ্যাম্ব্রোজ। সেই তালিকায় এ বার প্রবেশ করলেন রোচ। প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নেন তিনি।
প্রথম দিনে অপরাজিত থাকা অলি পোপ যদিও ৯১ রানেই ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। শুক্রবার প্রথম দিনের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে পোপ জানান, জৈব সুরক্ষা বলয়ের নিয়ম মেনে চলতে বেশ সমস্যা হচ্ছে তাঁদের। পোপ বলেছিলেন, ‘‘পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। খারাপ পারফর্ম করলেও তা ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। রুমে ফিরেও পিচ দেখা যায়।’’
স্কোরকার্ড
ইংল্যান্ড ৩৬৯
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩৭-৬
ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)
রোরি বার্নস ক কর্নওয়াল বো চেজ ৫৭ • ১৪৭
ডম সিবলি এলবিডব্লু রোচ ০ • ৫
জো রুট রান আউট চেজ ১৭ • ৫৯
বেন স্টোকস বো রোচ ২০ • ৪৩
অলি পোপ বো গ্যাব্রিয়েল ৯১ • ১৫০
বাটলার ক হোল্ডার বো গ্যাব্রিয়েল ৬৭ • ১৪২
ক্রিস ওকস বো রোচ ১ • ৮
ডম বেস নট আউট ১৮ • ৫৫
জোফ্রা আর্চার ক হোল্ডার বো রোচ ৩ • ৬
স্টুয়ার্ট ব্রড ক ব্ল্যাকউড বো চেজ ৬২ • ৪৫
অ্যান্ডারসন ক কর্নওয়াল বো হোল্ডার ১১ • ১৭
অতিরিক্ত ২২
মোট ৩৬৯ (১১১.৫)
পতন: ১-১ (সিবলি, ০.৬), ২-৪৭ (রুট, ২১.৩), ৩-৯২ (স্টোকস, ৩৪.৬), ৪-১২২ (বার্নস, ৪৭.৪), ৫-২৬২ (পোপ, ৮৯.১), ৬-২৬৭ (ওকস, ৯০.৬), ৭-২৭২ (বাটলার ৯১.৪), ৮-২৮০ (আর্চার ৯২.৪), ৯-৩৫৬ (ব্রড ১০৭.২), ১০-৩৬৯ (অ্যান্ডারসন, ১১১.৫)।
বোলিং: কেমার রোচ ২৫.৪-৪-৭২-৪, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ২৩.২-৫-৭৭-২, জেসন হোল্ডার ২৪.৫-৫-৮৩-১, রাখিম কর্নওয়াল ২৭-৫-৮৫-০, রস্টন চেজ ১১-৩-৩৬-২।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস)
ক্রেগ ব্রাথওয়েট ক রুট বো ব্রড ১ • ১০
জন ক্যাম্পবেল ক বার্নস বো আর্চার ৩২ • ৫০
হোপ ক বাটলার বো অ্যান্ডারসন ১৭ • ৬৪
ব্রুকস ক বাটলার বো অ্যান্ডারসন ৪ • ২০
রল্টন চেজ এলব্লিডব্লিউ ব্রড ৯ • ৩৬
জার্মেইন ব্ল্যাকউড বো ওকস ২৬ • ৪৫
জেসন হোল্ডার ব্যাটিং ২৪ • ৪৬
শেন ডাউরিচ ব্যাটিং ১০ • ১২
অতিরিক্ত ১৪ মোট ১৩৭-৬ (৪৭.১)
পতন: ১-১ (ব্রাথওয়েট, ১.৪), ২-৪৪ (ক্যাম্পবেল, ১৬.৬), ৩-৫৮ (হোপ, ২৩.২), ৪-৫৯ (ব্রুকস ২৫.৩), ৫-৭৩ (চেজ, ৩৪.২), ৬-১১০ (ব্ল্যাকউড, ৪২.৩)।
বোলিং: জিমি অ্যান্ডারসন ১১-৪-১৭-২, স্টুয়ার্ট ব্রড ১০-৩-১৭-২, জোফ্রা আর্চার ১৩.১-১-৫৫-১, ক্রিস ওকস ১৩-১-৩৯-১।