‘দাদা’ এক মলাটে অনেকটা সৌরভ

লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এক বঙ্গ সন্তান বনবন করে ঘোরাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি। তাঁর সঙ্গে আবেগে ভাসছে গোটা দেশ। তার পর পুরো দলকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে নেমে যাওয়া লর্ডসের মাঠে, তখন শুধুই ভারতরাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ১৮:১৭
Share:

লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এক বঙ্গ সন্তান বনবন করে ঘোরাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি। তাঁর সঙ্গে আবেগে ভাসছে গোটা দেশ। তার পর পুরো দলকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে নেমে যাওয়া লর্ডসের মাঠে, তখন শুধুই ভারতরাজ। ভারতরাজ এক বঙ্গ সন্তানের হাত ধরে। ভারতীয় ক্রিকেটে মাঠে নেমে চোখে চোখ রেখে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের জবাব দেওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছিলেন যিনি সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে হয়তো লিখে শেষ করা যাবে না। ভারতীয় ক্রিকেট মঞ্চের দাদাগিরি থেকে টেলিভিশন স্ক্রিনে ক্যামেরার সামনের আর এক দাদাগিরি। দেখলে মনে হবে এটাই তো তাঁর ময়দান। যেখানে স্ট্রেট ব্যাটে বাপি বাড়ি যা বলে যে কোনও বল পাঠিয়ে দিতে পারেন মাঠের বাইরে। সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে গৌতম ভট্টাচার্য সম্পাদিত পার্পল মুভি টাউনের নতুন বই ‘দাদা’।

Advertisement

এই সংস্থার কর্ণধার প্রীতিময় চক্রবর্তীর হঠাৎই এক দিন মনে হয়েছিল সৌরভকে নিয়ে বই বের করবেন। হাজির হয়েছিলেন সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যের কাছে। তার পরেই হাতে গরম ১১২ পাতার ‘দাদা’। বই হাতে আসতেই যেন ফিরে যেতে ইচ্ছে করল ভারতীয় ক্রিকেটের সেই সময়টায় যখন নানা সমস্যায় ধুঁকতে থাকা ভারতীয় ক্রিকেটকে টিম ইন্ডিয়ায় পরিণত করেছিলেন সৌরভ। তাঁকে নিয়ে যত লেখা যায় ততই কম। তবুও এই বইয়ে অনেকের কলম থেকেই বেরিয়ে এসেছে সৌরভ সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য। সে বাংলা সিনেমা জগতের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ই হোক বা ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে। ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল হোক বা কবি শ্রীজাত। আর যিনি এই সব কিছুকে এক মলাটে বেঁধেছেন সেই মানুষটি তো তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে দেখেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেট জীবনের নানা ওঠাপড়া, সাফল্য, ব্যর্থতার কাহিনী। তিনি গৌতম ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্যর সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

Advertisement

রাহুল দ্রাবির, সচিন তেন্ডুলকর, সুনীল গাওস্কর, বীরেন্দ্র সহবাগ, কপিল দেব, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্মণ, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা অল্প কথায় ব্যাখ্যা করেছেন দেশের সফলতম অধিনায়ককে। অফ সাইডের ঈশ্বর সম্পর্কে বলেছেন বয়কট, জন রাইট, স্টিভ ওয়রা। এই বই যেন একটুকরো সৌরভকে জেনে নেওয়ার উপাদান।

সৌমিত্র যেমন সৌরভ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘সৌরভ সম্পর্কে আমি নতুন করে কী বলব! এক কথায় রিমার্কেবল।’’ হর্ষ ভোগলের মনে জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ছাপিয়ে ধারাভাষ্যকার সৌরভ। হর্ষ মনে করিয়ে দিয়েছেন স্টিভ ওয়কে অপেক্ষা করানোর সেই কথা। শুধু তাই নয় কী ভাবে ভারতীয় দলের জুনিয়রদের অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ভারতীয় দলের দাদি হয়ে ওঠা। হরভজন, যুবরাজ সিংহদের হাতে ধরে তুলে আনার অধিনায়ক তো ছিলেন তিনিই। আর ব্র্যান্ড সৌরভ ঠিক কেমন, বলেছেন কোকা কোলা ইন্ডিয়ার সাউথ-ওয়েস্ট এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবব্রত মুখোপাধ্যায়।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পার্পল মুভিজের কর্ণধার প্রীতিময় চক্রবর্তী

ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল অবশ্য খুঁজে পেয়েছেন ‘‘সৌরভের সেক্স অ্যাপিল ওর কথা বলার ভঙ্গিতে।’’ কেন সৌরভের এত মহিলা ফ্যান সেটা ব্যাখ্যা করেছেন অগ্নিমিত্রা। বাংলা সিনেমা জগতে যাঁর দাদাগিরি চলে সেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কিন্তু মুগ্ধ সৌরভের ব্যবহারে। সাফল্য যে মানুষ সৌরভকে বদলে দিতে পারেনি। কবি সুবোধ সরকার, শ্রীজাত ছন্দে বেঁধেছেন সৌরভকে। গৌতম ভট্টাচার্যের কলম এখন সেই দর্শনের অপেক্ষায়। তাই হয়তো তিনি লিখেছেন, ‘‘সেই বাইশ গজের দর্শন: লুজ বল ছাড়তে নেই। আবার কবে আসবে কে জানে।’’ ক্রিকেটার সৌরভ থেকে ধারাভাষ্যকার সৌরভ। সঞ্চালক থেকে ক্রিকেট প্রশাসক। যেখানেই পা রেখেছেন সেখানেই সাফল্য। ঢুকে পড়েছেন সবার মনে। আরও একবার সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ফিরে দেখা ‘দাদা’র হাত ধরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement