Bengal

মনোজের শাসনের পরে ৭ পয়েন্টের স্বপ্ন গতির আগুনে

যেখানে ব্যক্তিগত সাফল্যের মধ্যে লুকিয়ে দলীয় মর্যাদা। বাংলার হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তেই পারতেন মনোজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩২
Share:

নায়ক: রাজকীয় মনোজ। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ট্রিপল সেঞ্চুরির পরে। সোমবার কল্যাণীতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বাইশ বছর আগে রঞ্জিতে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন বাংলার তৎকালীন এক তারকা। যিনি এখন জাতীয় নির্বাচক কমিটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিনিধি। সোমবার কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সমর্থকেরা দেখলেন দ্বিতীয় ত্রিশতরানকারীকেও।

Advertisement

প্রথম জন দেবাং গাঁধী। দ্বিতীয় জন উত্তরসূরি মনোজ তিওয়ারি। দু’জনের নাম পাশাপাশি দেখলে অনেকেরই মনে পড়ে যাবে গত মাসের ঘটনার কথা। বিনা অনুমতিতে বাংলার ড্রেসিংরুমে ঢুকেছিলেন ভারতীয় নির্বাচক। যা দেখেই দুর্নীতি দমন শাখার প্রতিনিধিকে খবর দেন মনোজ। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় দেবাংকে। কিন্তু ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরে এখনও দেবাংয়ের চেয়ে ২০ রান পিছিয়ে মনোজ। ১৯৯৮-এ অসমের বিরুদ্ধে দেবাং করেছিলেন ৩২৩ রান। এ দিন মনোজ ৩০৩ অপরাজিত (৩০x৪, ৫x৬)। ঘটনাচক্রে দু’দলেরই কোচ ছিলেন অরুণ লাল। বাংলার বর্তমান কোচ বলছিলেন, ‘‘দেবাংয়ের ইনিংসের কথা অতো পরিষ্কার মনে নেই। তবে মনোজের এই ইনিংস আমার দেখা সেরা। আমি তো এখনও বলব, দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ও।’’ স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও মনোজের ইনিংসে মুগ্ধ। বলছিলেন, ‘‘৬৩০ মিনিট ব্যাট করাই প্রমাণ করে দেয় ও কতটা ফিট। আরও এক বার প্রমাণ করল, বয়সের সঙ্গে ভাল ক্রিকেটের কোনও যোগাযোগ নেই।’’

যাঁর সঙ্গে মনোজের এত আকচাআকচি, সেই দেবাং প্রশংসাই করে গেলেন বাংলার প্রাক্তন অধিনায়কের। আনন্দবাজারকে দেবাং বললেন, ‘‘দলের যখন ওকে সব চেয়ে প্রয়োজন ছিল, তখনই রান করেছে মনোজ। এখন আমি দিল্লিতে, কলকাতায় ফিরে ওর সঙ্গে দেখা হলে অবশ্যই অভিনন্দন জানাব।’’ মনোজের বয়স এখন ৩৪ বছর। এই বয়সে ভারতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের কোনও সুযোগ দেখছেন? দেবাংয়ের উত্তর, ‘‘ওর কাজ কিন্তু রান করে যাওয়া ও ভারতীয় দলের দরজার ক্রমশ কাছে চলে আসা। নির্বাচকেরা নিজেদের কাজ নিশ্চয়ই করবে।’’ যোগ করেন, ‘‘ওর বয়স নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কামনা করব যেন এই ছন্দ ধরে রেখেই বাংলাকে রঞ্জি ট্রফি জেতাতে ‌পারে।’’

Advertisement

এটাই ক্রিকেট। যেখানে ব্যক্তিগত সাফল্যের মধ্যে লুকিয়ে দলীয় মর্যাদা। বাংলার হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তেই পারতেন মনোজ। কিন্তু তিনি যে গত বছরই বাংলাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই জানেন, পড়ন্ত আলোয় নতুন বলে পেসারদের সামলানো কতটা কঠিন। সেই পরীক্ষার মধ্যেই ফেলা হল হায়দরাবাদকে। বাংলার ৬৩৫-৭ ডি. স্কোরের জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে ৮৩ রানে পাঁচ উইকেট বিপক্ষের। তিন উইকেট আকাশ দীপের। দু’টি নেন মুকেশ কুমার।

আজকাল বড় মাইলফলকে পৌঁছলেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না মনোজ। লেগস্পিনার বি রাহুলকে কাট করে ট্রিপল সেঞ্চুরি পূরণ করার পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে ব্যাট তুললেন মাত্র। ক্রিকেট জীবনে একাধিক বার ধাক্কা খাওয়ার পরে আর হয়তো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পছন্দ করেন না তিনি। গত মরসুমের শুরুতেই তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছিল, ‘‘দু’টি ম্যাচ সুযোগ দিচ্ছি। নিজেকে প্রমাণ করে দেখাও।’’ ডাবল সেঞ্চুরি করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেছিলেন মনোজ। এ মরসুমের শুরুতেই তাঁকে বলা হয়, ‘‘সীমিত ওভারের নেতৃত্ব তুমি দাও। চার দিনের ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিক অভিমন্যু।’’ কিন্তু মনোজ জানিয়ে দেন, সারা মরসুমের জন্যই অধিনায়ক হোক অভিমন্যু। তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন। সাহায্য করবেন তাঁর উত্তরসূরিকে। এ বারও প্রত্যেক ম্যাচে ভাল শুরু করে আউট হওয়ায় বড় ইনিংস গড়া হচ্ছিল না। অথচ হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে সব প্রশ্নের জবাব দিলেন ব্যাটে। মনোজ যে ব্যাট নিয়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি পূরণ করলেন, তাতে তাঁর ছেলের নাম খোদাই করা। একটি করে মাইলফলকে পৌঁছচ্ছেন, ছেলের নামের উপরে চুমু খাচ্ছেন। কোনও জাতীয় নির্বাচক তো এই ইনিংস দেখার সুযোগ পেলেন না। জানতেও পারলেন না, কোন পরিস্থিতি থেকে এই ইনিংসকে সাজালেন তিনি। রবিবার ২২-২ স্কোর থেকে দলকে একাই টানছিলেন মনোজ। কখনও তাঁর সঙ্গী অনুষ্টুপ মজুমদার। কখনও বা শ্রীবৎস গোস্বামী। এ দিন তাঁকে সঙ্গ দিলেন শাহবাজ আহমেদ (৪৯) ও অর্ণব নন্দী। এক রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেন শাহবাজ। কিন্তু অর্ণব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অপরাজিত থেকে গেলেন ৬৫ রানে।

আজ, মঙ্গলবার সকালের দু’ঘণ্টায় হায়দরাবাদকে অলআউট করলে পরের দশ উইকেট ফেলার জন্য দেড় দিন পাবে বাংলা। এই পরিস্থিতি থেকে সাত পয়েন্ট খুব একটা অসম্ভব নয়। কোচ অরুণ লাল বলে গেলেন, ‘‘এক বার যখন বিপক্ষকে হাতের মুঠোয় পেয়েছি, তখন আর ছেড়ে দেওয়ার কোনও জায়গাই নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement