নজরে: শুভমন-রাসেলদের কয়েক মাসের মধ্যেই আইপিএলের জার্সিতে মাঠে নেমে পড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে। ফাইল চিত্র
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্থগিত রাখার খবর ঘোষণার মাঝেই আইপিএল আয়োজন নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বরের শেষে টি-টোয়েন্টি যজ্ঞ করা নিয়ে।
যা শোনার পরে মনে হচ্ছে, আমিরশাহিই এখন আইপিএল আয়োজনের দৌড়ে ফেভারিট। বিশেষ করে আমিরশাহির যেখানে অতীতে আইপিএল করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা পুরোপুরি দৃশ্য থেকে হারিয়ে গিয়েছে, এমনও বলা যাচ্ছে না।
আমিরশাহি কর্তারা জানিয়েছেন, দুবাই, আবু ধাবি এবং শারজায় তাঁরা ম্যাচের আয়োজন করতে চান। ম্যাচ গড়াপেটার নানা কাহিনি শোনা যেত শারজা নিয়ে। সেই কারণে জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কার ইতিহাস-জড়িত শারজায় ম্যাচ করা নিয়ে দীর্ঘকাল ভারতের তরফে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে জানা গিয়েছে, আটটি দলের ক্রিকেটারেরা থাকবেন হয়তো দুবাইয়েই। প্রত্যেকটি দলকে আলাদা হোটেলে রাখারই ব্যবস্থা করা হবে। দুবাই থেকে আবু ধাবি বা শারজা যেতে উড়ান ধরতে হবে না। সড়ক পথেই যাওয়া সম্ভব। বিমানবন্দরে যাওয়ার ঝক্কি নেই বলে সংক্রমণের উদ্বেগও কম।
আমিরশাহি কর্তারা আবার এমন সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছেন যে, সম্পূর্ণ দর্শকশূন্য মাঠ না-করে যদি কুড়ি শতাংশ হাজিরাও রাখা যায়। এ রকম ইঙ্গিত তাঁরা ভারতীয় বোর্ডের কর্তাদের কাছে দিয়েছেন। তবে সেই সম্ভাবনা নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতি কী দাঁড়াচ্ছে, তার উপরে।
মোটামুটি ভাবে ঠিক হয়েছে, সেপ্টেম্বরের শেষ শনি বা রবিবার চালু করা হতে পারে আইপিএল। দিনে দু’টো করে ম্যাচ বাড়িয়ে তাতেও শেষ করতে নভেম্বর হয়ে যাবে। ৩ ডিসেম্বর থেকে বিরাট কোহালিদের প্রস্তাবিত অস্ট্রেলিয়া সফর রয়েছে। অন্যান্য দেশেরও সিরিজ রয়েছে। তাই বিদেশি ক্রিকেটার পাওয়াও সমস্যার হতে পারে। তা নিয়ে সরব হতে পারে আট দলের কর্তারা, কারণ প্রত্যেকেরই তারকা বিদেশি ক্রিকেটার আছে।
যদিও এ দিন বোর্ড ও আইপিএলের বিভিন্ন দলের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, নানা প্রশ্ন এখনও থেকে যাচ্ছে। ‘আইপিএল করব’ বললেই করা সম্ভব হবে না-ও হতে পারে। যেমন, ভারতীয় ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে তাঁদের সংশ্লিষ্ট আইপিএল দলে যোগ দিয়ে প্রত্যেককে দেশের মধ্যে ১৪ দিনের নিভৃতবাস পর্ব সারতে হবে বলে কথা হয়েছে। কিন্তু এখানে প্রশ্ন, বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে কী করা হবে? তাঁদের কি ভারতে আসতে বলা হবে? এখানে এসে কি তাঁরা একসঙ্গে নিভৃতবাস পর্ব সারবেন? যদি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের দরজা খোলা না হয়, তা হলে আসবেন কী ভাবে?
কারও কারও পরামর্শ, আইপিএল আমিরশাহিতে হলে বিদেশি ক্রিকেটারদের তাঁদের দেশ থেকে সরাসরি দুবাইয়ে চলে যেতে দেওয়া হোক। সেখানে গিয়ে তাঁরা নিভৃতবাস পর্ব সেরে নিন। ভারত থেকে আটটি দল দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে চার্টার্ড বিমানে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তার আগে করোনা বিধি মেনে পরীক্ষা করিয়ে ক্রিকেটার এবং দলের প্রত্যেক সদস্যের দু’বার ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট পেতে হবে।
দ্বিতীয় বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির কী হবে? অনেকেই দীর্ঘ দিন ধরে সম্পূর্ণ ভাবে ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্কহীন। বাড়িতে বসে যতই তাঁরা জিম করার বা ওজন তোলার ছবি দিন, স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হতে বাধ্য। ইনস্টাগ্রামের দুনিয়া ছেড়ে মাঠের সবুজ ঘাসে না-নামলে যা বোঝা যাবে না। তাই অনেক আইপিএল দলই সংশয়ে যে, ক্রিকটারদের কী অবস্থায় পাওয়া যাবে। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, অনেকে ওজন বাড়িয়ে, ফিটনেসের দফারফা ঘটিয়ে উপস্থিত হবেন। দুবাই বা কলম্বো যেখানেই যেতে হোক, সেখানে অনেক আগেই পৌঁছে চাইছে দলগুলি। অন্তত এক মাসের শিবির করার ভাবনা রয়েছে তাদের।
সোমবারের খবর, বিশ্বকাপ স্থগিতের পরে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে ভারতীয় বোর্ড কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আবার কারও কারও কথায়, করোনা নিয়ে দেশের সার্বিক অবস্থার যে রকম অবনতি হচ্ছে, তাতে ‘আইপিএল হচ্ছেই’ বলে কিছু ধরে নিলেও ভুল হবে। বোর্ড তৈরি হচ্ছে, আট দল প্রস্তুতি নিচ্ছে, সবই ঠিক আছে। কিন্তু আইপিএল আদৌ হবে কি না, সেপ্টেম্বরের করোনা পরিস্থিতিই বলবে।