মুগ্ধ: ইডেনকে ভোলেননি আসিফ।
ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না, কী দেখলেন। আসিফ ইকবাল কোনও দিন কল্পনাও করতে পারেননি ফাঁকা মাঠে ক্রিকেট হতে পারে!
ইংল্যান্ড থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘কোভিড অতিমারির মধ্যে ক্রিকেট শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটা টিভিতে দেখতে অদ্ভুত লাগছিল। ফাঁকা মাঠে খেলা ভাবাই যায় না!’’ একটু থেমে বললেন, ‘‘প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে মনে হয়, দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে নিজেদের উদ্ধুদ্ধ করতে সমস্যা হবে ক্রিকেটারদের। খেলা একটা মনোরঞ্জন। দর্শক না থাকলে সেই মনোরঞ্জনের কী হবে!’’
৫৮ টেস্টে এগারো সেঞ্চুরির মালিক নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, ‘‘দর্শকদের সামনে খেলতে না পারলে নিজেকে উদ্ধুদ্ধ করতে পারতাম না। দর্শকরাই তো ক্রিকেটারদের শক্তি।’’ ভারতের হায়দরাবাদে জন্মালেও পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করা এই প্রাক্তন ক্রিকেটার স্মৃতিতে ডুবে গেলেন, ‘‘এখনও কলকাতার দর্শকদের কথা ভুলতে পারিনি। আমার শেষ টেস্ট ইনিংসে রান আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছি, আর গোটা ইডেন দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। কী ভালবাসা! দর্শকদের ওই ভালবাসা না পেলে কী শেষ টেস্টটা আমার কাছে এত স্মরণীয় হয়ে থাকে।’’
করোনা আতঙ্কের মধ্যে ক্রিকেট শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইংল্যান্ডের মানুষদের জীবনযাত্রা সহজ হয়নি। আসিফের কথায়, ‘‘লকডাউনের সময় আরও বেড়ে গেল। কড়াকড়িও খুব। তবে শুধু ইংল্যান্ডে তো নয়, পৃথিবী জুড়ে একই অবস্থা।’’ এরই মধ্যে নতুন দুনিয়ার ক্রিকেটকে কেমন দেখলেন? যেখানে বোলাররা থুতু দিয়ে বল পালিশ করতে পারছেন না? তিনটে টেস্টই মন দিয়ে দেখেছেন আসিফ। দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর মনে হয়েছে, এই সময় যতটা বল সুইং করে, ততটা করেনি। কিন্তু তার জন্য শুধু থুতুর উপরে নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করতে চান না। আসিফ বলছেন, ‘‘এটা একটা মনস্তাত্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে হয়। ছোটবেলা থেকে বোলারদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে থুতু দিয়ে বল পালিশ করার। তাই মনে হবে, থুতু ববহার না করলে বল সুইং করবে না। যে ভাবনাটা পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতেই পারে।’’
আসিফ মনে করেন, উপমহাদেশের বোলারদের এই সমস্যাটা কম হবে। থুতুতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সামলে নিতে পারবেন। তার মানে মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরা বা মহম্মদ আমির-শাহিন শা আফ্রিদিরা ঠিকই সুইং বা রিভার্স পেয়ে যাবেন? আসিফের তাই ধারণা। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘উপমহাদেশের বোলাররা অনেক কঠিন পরিবেশের মধ্যে সুইং করাতে অভ্যস্ত। আমাদের দেশের মাঠ অত সবুজ নয়, বলের পালিশ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাও তো ফাস্ট বোলাররা সাফল্য পেয়েছে আর পাচ্ছে। কারণ, ওদের মজ্জায়-মজ্জায় আছে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা।’’ ৫ অগস্ট শুরু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের টেস্ট সিরিজ। আসিফের সতর্কবার্তা, সেখানে সুইং আরও কম হবে। বলেন, ‘‘আগের সিরিজে আকাশ মেঘলা ছিল। এ বার ইংল্যান্ডে গ্রীষ্ম শুরু হচ্ছে। আকাশ পরিষ্কার থাকবে বলেই পূর্বাভাস। সুইং তাই কমই হবে।’’
নিজেকে এখন গৃহবন্দি করে রেখেছেন ৭৭ বছর বয়সি আসিফ। আর প্রার্থনা করছেন, যেন সেই পৃথিবী ফিরে আসে। যেখানে আবার মাঠভর্তি দর্শক ভালবাসায় ভরিয়ে দেবেন ক্রিকেটারদের।