অশোক মলহোত্র

লেডিজ সাইকেল চেপে পালান কপিল, জন্মদিনে স্মৃতিকাতর অশোক

দেখতে দেখতে তাঁদের বন্ধুত্ব ৫০ বছরে পা রাখল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৩৪
Share:

দেখতে দেখতে অশোক-কপিলের বন্ধুত্ব ৫০ বছর হল। ফাইল ছবি

সে বহুদিন আগের কথা। গুগ্‌ল তো দূরের কথা, ঘরে ঘরে রঙিন টেলিভিশনই ঢোকেনি! সেই সময়ে ওদের প্রথম দেখা। ওদের বয়স সবে ১২ বছর। ভারতের প্রাক্তন ওপেনার তথা বাংলার প্রাক্তন কোচ অশোক মলহোত্র তাঁর ‘ক্যাপস’-কে প্রথমবার দেখলেন। সেই শুরু। দেখতে দেখতে তাঁদের বন্ধুত্ব ৫০ বছরে পা রাখল। ক্রিকেটের একাধিক বিষয়ে দু’জনের সম্পর্কে অনেক টানাপোড়েন এসেছে। বন্ধ হয়েছে বাক্যালাপও। যোগাযোগে পড়েছে সাময়িক ভাটা। তবে প্রিয় কপিল দেব নিখাঞ্জের সঙ্গে মলহোত্রর বন্ধুত্ব এখনও একইরকম।

৬ জানুয়ারি। ১৯৫৯ সালের এই দিনটায় চণ্ডীগড়ে জন্মেছিলেন ‘হরিয়ানা হারিকেন’। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের ৬২তম জন্মদিনে স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে দিলেন মলহোত্র। আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘আমরা একই দিনে স্কুলের ক্রিকেট দলের ট্রায়াল দিতে গিয়েছিলাম। সবাই সময়মতো চলে এলেও কপিল অনেক দেরিতে এসেছিল। শুধু তা-ই নয়। কোচ প্রয়াত দেশপ্রেম আজাদের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য পাঁচিল টপকে মাঠে ঢুকেছিল ও। কিছুক্ষণ অনুশীলন করার পর একটা লেডিজ সাইকেলে চেপে পালিয়ে যায়।’’

মলহোত্র একনাগাড়ে বলে গেলেন, ‘‘সেই ওর সঙ্গে প্রথম দেখা। অল্প সময়ের অনুশীলনে আমাদের দারুণ লেগেছিল। কিন্তু কোচের হয়তো ওকে পছন্দ হয়নি। তাই বাকি ন’জন উতরে গেলেও কপিল সেই ট্রায়ালে ফেল করে। স্বভাবতই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় ও জায়গা পায়নি। এতে ও ভীষণ অপমানিত বোধ করে। সেই অপমানের বদলা হিসেবে একদিন অনুশীলনে আমাদের স্কুল অধিনায়ককে বাউন্সার মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। সেটাও আবার দেশপ্রেম আজাদ স্যারের সামনেই ঘটেছিল। এর পর আর স্যার ওকে কোনও দল থেকে বাদ দেননি।’’

Advertisement

আরও খবর: ভাবনাচিন্তা শুরু, ভারতেই এ বারের আইপিএল আয়োজন করতে চাইছে বোর্ড

অলরাউন্ডার সত্ত্বা শুরু থেকেই কপিলের মধ্যে ছিল। সেটা ছোটবেলার কোচ বুঝতেও পেরেছিলেন। তাই অনুশীলনের শুরুতে ওপেনাররা নয়, ব্যাট হাতে নেটে ঢুকতেন কপিল। মারকাটারি ব্যাটিং সেরে করতেন একনাগাড়ে বোলিং। মলহোত্র যোগ করলেন, ‘‘শুধু শীত নয়, প্রচন্ড গরমেও ও টানা ১০-১৫ ওভার বোলিং করে যেত। অথচ পেস ও লাইন-লেংথের তারতম্য ঘটত না। নাগাড়ে বোলিং করতে গিয়ে কপিলের আঙুল কেটে রক্ত ঝরতেও দেখেছি। তবুও ও থামেনি। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপট দেখানোর জন্যই ওর জন্ম হয়েছিল। অদম্য জেদ আর ডেয়ার ডেভিল মানসকিতার জন্যই কপিলের নাম অলটাইম গ্রেটদের তালিকায় থেকে যাবে।’’

দীর্ঘ সময়ের বন্ধুত্ব হলেও একটা সময় কপিল-অশোক সম্পর্কে চিড় ধরেছিল। সেই ঘটনা নিয়ে মলহোত্রর এখনও ক্ষোভ রয়েছে। যদিও বয়সের ভারে তার তীক্ষ্ণতা কমেছে। বলছিলেন, ‘‘১৯৮৩ বিশ্বকাপের আগে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলাম। সেই সফরে টেস্ট দলে জায়গা না পেলেও একদিনের সিরিজে ভাল পারফর্ম করি। স্বভাবতই বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার আশা করেছিলাম। যদিও অধিনায়ক কপিল আমার হয়ে কথা বলেনি। এরপর বিশ্বকাপের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারতে এসে সব ফরম্যাটে আমাদের দুরমুশ করে চলে গেল। অথচ সেবার একদিনের সিরিজেও রান পেলাম। জামশেদপুরে একদিনের ম্যাচে ৬৫ রান করার পর কপিল আমার হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। আমি রাগে ফুঁসছিলাম। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমি কি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্য নই? কপিলের জবাব ছিল, তোমার উপর ভরসা রাখতে পরিনি। সেই ঘটনার পর অনেক বছর ওর সাথে কথা বলিনি। তবে এখন আর রাগ করে লাভ নেই। কারণ, আমরা দুজনেই এখন বুড়োদের দলে।’’

Advertisement

আরও খবর: ব্রিসবেনের বদলে মুম্বইয়ে খেলতেও রাজি, খোঁচা অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক পেনের

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement