স্মিথের মহাকাব্যিক ইনিংসে পাল্টা চাপে রুটদের ইংল্যান্ডই

এক বছর আগে যাঁকে কলঙ্কের ছাপ নিয়ে সরে যেতে হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে, তিনি শুধু ফিরলেনই না, প্রত্যাবর্তন ঘটালেন এমন রাজকীয় ভঙ্গিতে, যাতে ক্রিকেট দুনিয়া বাধ্য হল কুর্নিশ করতে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০৫:৩০
Share:

নায়ক: দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরির পরে উল্লসিত স্টিভ স্মিথ। গেটি ইমেজেস

এর চেয়ে বড় ক্রিকেট রূপকথা আর কী হতে পারে!

Advertisement

এক বছর আগে যাঁকে কলঙ্কের ছাপ নিয়ে সরে যেতে হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে, তিনি শুধু ফিরলেনই না, প্রত্যাবর্তন ঘটালেন এমন রাজকীয় ভঙ্গিতে, যাতে ক্রিকেট দুনিয়া বাধ্য হল কুর্নিশ করতে। স্টিভ স্মিথ বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ফুরিয়ে যাননি। এজবাস্টনে তাঁর মহাকাব্যিক ইনিংসের সামনে পাল্টা চাপে ইংল্যান্ড। আজ, শেষ দিনে জিততে হলে ইংল্যান্ডকে ৩৮৫ রান করতে হবে। হাতে দশ উইকেট। কিন্তু চতুর্থ দিনের শেষবেলায় নেথান লায়নের বল যে ভাবে ঘুরেছে, তাতে জো রুটদের কাজটা সহজ হবে না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ভেঙে পড়া একটা দলকে টেনে তোলা থেকে শুরু। আর চতুর্থ দিনে এসে সেই দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখানো। একটা টেস্টে ঘাত-প্রতিঘাতের এই কাহিনি যে কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। যে কাহিনির নায়ক অবশ্যই স্মিথ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে আগের দিন শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে স্মিথের ব্যাটে শুরু পাল্টা লড়াই। ঠিক প্রথম ইনিংসের মতোই। রবিবার, চতুর্থ দিনে এসে স্মিথ যখন আউট হলেন, তাঁর নামের পাশে লেখা হয়ে গিয়েছে ১৪২ রান। প্রথম ইনিংসের পরে আবার সেঞ্চুরি দ্বিতীয় ইনিংসেও।

Advertisement

তবে প্রথম ইনিংসের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে কিছু তফাত আছে। প্রথম ইনিংসে কোনও সতীর্থের সাহায্য পাননি স্মিথ। একার হাতেই লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে স্মিথ পাশে পেলেন ম্যাথু ওয়েডকে। অস্ট্রেলিয়ার এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানকে অ্যাশেজের জন্য ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার জবাব দিয়ে সেঞ্চুরি করে গেলেন ওয়েডও (১১০)। চতুর্থ দিন চা বিরতির পরে অস্ট্রেলিয়া যখন ইনিংস ডিক্লেয়ার করে, তাদের স্কোর সাত উইকেটে ৪৮৭। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান বিনা উইকেটে ১৩। এই মুহূর্তে টেস্টে ব্যাটিং গড়ে ডন ব্র্যাডম্যানের (৯৯.৯৪) ঠিক পরেই স্মিথ (৬২.৬৪)। অ্যাশেজে সেঞ্চুরি করার নিরিখে ব্র্যাডম্যান (১৯), জ্যাক হবসের (১২) পরে স্টিভ ওয়ের (১০) সঙ্গে যুগ্ম ভাবে তিন নম্বরে রয়েছেন। এক বছর আগে বল বিকৃতি কাণ্ডের জেরে নির্বাসিত হয়েছিলেন স্মিথ। দেশে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক। সে-ই যন্ত্রণা, এখন আগুন হয়ে ঝলসে দিচ্ছে বিপক্ষকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মিথ এই ইনিংসে ক্রিকেট শৈলী ছাড়া আরও একটা জিনিস বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মানসিক কাঠিন্য। বিপক্ষের বোলাররা যে শুধু তাঁর শত্রু ছিলেন, তা তো নয়। স্মিথকে লড়াই করতে হয়েছে মাঠের বাইরের দর্শক থেকে শুরু করে গায়ে লেগে থাকা কলঙ্ক— সবার বিরুদ্ধেই। আর সব কিছুকেই শাসন করে দিনের শেষে স্মিথই সম্রাট।

স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া ২৮৪ এবং ৪৮৭-৭ ডিক্লেঃ
ইংল্যান্ড ৩৭৪ এবং ১৩-০

অস্ট্রেলিয়া (দ্বিতীয় ইনিংস)
(শনিবার ১২৪-৩ পর)
স্মিথ ক বেয়ারস্টো বো ওকস ১৪২•২০৭
হেড ক বেয়ারস্টো বো স্টোকস ৫১•১১৬
ওয়েড ক ডেনলি বো স্টোকস ১১০•১৪৩
পেন বো মইন ৩৪•৪৪
প্যাটিনসন ন. আ. ৪৭•৪৮
কামিন্স ন. আ. ২৬•৩৩
অতিরিক্ত ২২ মোট ৪৮৭-৭ ডিক্লেঃ (১১২)
পতন: ৪-২০৫ (হেড, ৫২.৬), ৫-৩৩১ (স্মিথ, ৮৫.১), ৬-৪০৭ (ওয়েড, ৯৮.২), ৭-৪০৯ (পেন, ৯৯.৪)।
বোলিং: স্টুয়ার্ট ব্রড ২২-২-৯১-১, ক্রিস ওকস ১৩-১-৪৬-১, মইন আলি ২৯-১-১৩০-২, জো রুট ১২-১-৫০-০, বেন স্টোকস ২২-৫-৮৫-৩, জন ডেনলি ১৪-১-৭২-০।

ইংল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
বার্নস ন. আ. ৭•২১
রয় ন. আ. ৬•২১
অতিরিক্ত ০ মোট ১৩-০ (৭)
বোলিং: পিটার সিডল ২-০-৪-০, নেথান লায়ন ৩-০-৭-০, প্যাটিনসন ২-১-২-০।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement