সাংবাদিক সম্মেলনে অনুরাগ। রবিবার। ছবি: উৎপল সরকার
এক দিকে লোঢা কমিশন নির্দেশিত বোর্ড প্রশাসনে স্বচ্ছতার সংস্কার মেনে নেওয়া। রাজধানীতে বসে বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুরের আইপিএলের দশ বছরের সম্প্রচার স্বত্ব নিয়ে ‘ওপেন টেন্ডার’ ডেকে দেওয়া। উল্টো দিকে, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চিরাচরিত বোর্ড স্টান্স। যুদ্ধ থেকে সরে না আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত। লোঢার নির্দেশ উপেক্ষা করে আসন্ন বোর্ড বার্ষিক সভাতেই নতুন নির্বাচক কমিটি তৈরির সোজাসুজি ঘোষণা।
রবিবারের নয়াদিল্লিতে বোর্ড দু’টো মনোভাব দেখিয়ে রাখল। যে কারণে লোঢা নির্দেশিত স্বচ্ছতার রাস্তায় চলার দিনেও কড়া প্রশ্ন সহ্য করতে হল বোর্ড প্রেসিডেন্টকে।
টেন্ডার সংক্রান্ত যা নির্যাস, তাতে ২১ সেপ্টেম্বরের বার্ষিক সভার আগেই আইপিএল সম্প্রচার নিয়ে টেন্ডার বা দরপত্র খুলে যাচ্ছে। সোমবার থেকে যা কিনতে পাওয়া যাবে অনলাইনে, আশি হাজার টাকায়। ৪ অক্টোবর দরপত্র কেনার শেষ দিন। পুরো ব্যাপারটাই দেখবে বোর্ডের অর্থনীতি সংক্রান্ত এক কমিটি। ২৫ অক্টোবর টেন্ডার খুলে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, আগামী দশ বছরের জন্য আইপিএল সম্প্রচার স্বত্ব কার।
কিন্তু এটা নয়। সাংবাদিক বৈঠকের আকর্ষণ বাড়ল, নতুন নির্বাচক কমিটি নিয়ে প্রশ্নটা ওঠার পর। বোর্ডর তরফে বলা হল, নির্বাচক পদপ্রার্থীদের জন্য যে শর্তাবলী আবেদনের দরখাস্তে রেখেছিল বোর্ড, তার সব ক’টা মেনে ৭৩ জন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার আবেদন করেছেন। বোর্ড শর্টলিস্টও করে ফেলেছে। তাঁরা কারা— মুম্বইয়ের বার্ষিক সভায় ঘোষণা করে দেওয়া হবে। জানিয়ে দেওয়া হবে নতুন নির্বাচক কমিটি।
সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন উঠল, বোর্ড কি তা হলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছে এ রকম রুটিনের বাইরে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে? যেটা সুপ্রিম কোর্টের রায়ে করতে মানা আছে। অনুরাগ জবাব দিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বোর্ড তো আগেই সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ পিটিশন দিয়েছে। তার রায় আদালত কী দেয়, কবে দেয়, সেটা তাদের ব্যাপার। তার জন্য আমরা তো কাজকম্মো বন্ধ রেখে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না! অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আছে। সেগুলোই একে একে নিচ্ছি। তার পর রিভিউ পিটিশনের রায় যা হবে, সেই মতো তখন করা যাবে সব আবার।’’
শশাঙ্ক মনোহর— তাঁর উপরও যেন রাগ যাচ্ছে না প্রেসিডেন্টের। তাঁরই পূর্বসূরি শশাঙ্কর আইসিসি-র ফিনান্স কমিটির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুরাগ এ দিন আবার বললেন, ‘‘বিশ্ব ক্রিকেট মানে ভারত। বিশ্ব ক্রিকেটের বাজার ভারতই মূলত চালায়। সেখানে ভারতকে বাদ দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট চালানো যাবে না।’’
চেন্নাই থেকে আসা এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, শোনা যাচ্ছে, বোর্ড প্রেসিডেন্টের পরে আপনার চোখ নাকি এ বার আইসিসি চেয়ারম্যানের চেয়ারের দিকে? যেখানে এখন আপনারই সিনিয়র বসে আছেন! অনুরাগ একটুও উত্তেজিত না হয়ে উত্তর দিলেন, ‘‘ওই চেয়ারে বসতে এখান থেকে যাঁর যাওয়ার, তিনি চলেই গিয়েছেন। আমার প্রথম আর একমাত্র নজর ভারত। ভারতীয় ক্রিকেট। ভারতীয় বোর্ড। ভারতীয় ক্রিকেট না বাঁচলে বিশ্ব ক্রিকেটও বাঁচবে না।’’
প্রশ্ন উঠল, মহম্মদ আজহারউদ্দিন নিয়েও। বোর্ড প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করা হল যে, দিন কয়েক বাদে গ্রিন পার্কে ভারতের পাঁচশোতম টেস্ট উদযাপনে ম্যাচ গড়াপেটা-কলঙ্কিত আজহারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বোর্ড। তা হলে কি ভবিষ্যতে আজহারকে বোর্ডের কোনও ভূমিকায় দেখা যেতে পারে? নির্বাচক কমিটি বা কোচের মতো কিছুতে? উত্তরে হেসে ফেলে অনুরাগ শুধু বললেন, ‘‘আজহার কানপুর টেস্টে বোর্ডের আমন্ত্রিত একজন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। এর বেশি মিডিয়া দয়া করে কিছু না ভাবলেই মনে হয় ভাল।’’