জুটি: এক সপ্তাহ পরেই বিয়ে। হবু স্ত্রী পূজাকে নিয়ে ক্রোমা। নিজস্ব চিত্র
আগামী সোমবার বিয়ে করতে যাবেন পাইকপাড়ায়। তার ঠিক সাত দিন আগে মোহনবাগান মাঠে জোড়া গোল করে পিয়ারলেস অধিনায়ক আনসুমানা ক্রোমা জয় উৎসর্গ করছেন তাঁর হবু বাঙালি বউ পূজা দত্তকে।
মাঠ ছেড়ে বাড়ি যাওয়ার সময় এ দিন ক্রোমা বলে যান, ‘‘এই জোড়া গোল উৎসর্গ করছি আমার হবু স্ত্রী পূজা দত্তকে। ১২ অগস্ট ওকে আমি বিয়ে করছি। আজ এসেছিল আমার খেলা দেখতে। আমার তরফ থেকে ওকে এটা প্রাক্-বিবাহ উপহার।’’
আনন্দবাজারের কাছ থেকে যা শুনে পাইকপাড়ার বাড়িতে বসে পূজা খুশিতে ডগমগ। বলেন, ‘‘তাই নাকি! ক্রোমার মতো সুন্দর মনের মানুষের কাছ থেকে এ রকম উপহার পেলে কার না ভাল লাগে!’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ক্রোমা এ রকম গোল আরও করুক। আর সেগুলো আমাকে উপহার দিক। আমাকে ফুটবল বুঝতে শিখিয়েছে ক্রোমাই।’’
এ দিন বাড়ি থেকে একাই ক্রোমার খেলা দেখতে গিয়েছিলেন পূজা। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলে চলেন, ‘‘প্রথম গোলের সময় চুপ করে বসেছিলাম। কিন্তু ক্রোমার দ্বিতীয় গোলের সময় হাত মুঠো করে আকাশে ছুড়েছিলাম। তাতে এক জন মোহনবাগান সমর্থক রেগে গিয়েছিলেন। ওর দুঃখ বুঝতে পেরেই ‘সরি’ বলে দিই।’’
হবু স্বামীর করা দুই গোলের মধ্যে কোনটা সেরা তা জানতে চাইলে পূজা বলে দেন, ‘‘প্রথম গোলটা দুর্দান্ত।’’ যা শুনে আবার ক্রোমা হাসতে সুরু করে দেন। বলেন, ‘‘দেখেছেন আমাদের দু’জনের মনের মিল। আমিও প্রথম গোলটা করে দারুণ আনন্দ পেয়েছি। আসলে আমি কাটিয়ে গোল করতে ভালবাসি। ওই গোলটাও শিল্টনকে কাটিয়ে করা।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমার প্রিয় খেলোয়াড় মেসি। ওঁর মতো কাটিয়ে গোল করতে পারলে দারুণ লাগে।’’
দু’বছর আগে কলকাতা লিগ খেলে গিয়েছিলেন মোহনবাগানের হয়ে। কিন্তু সেই বছরেই আই লিগে আনসুমানা ক্রোমাকে ছেড়ে দিয়েছিল মোহনবাগান। লাইবেরিয়া থেকে কলকাতায় খেলতে আসা ফুটবলার মনের দুঃখে চলে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলে। কিন্তু সবুজ-মেরুন জার্সির প্রতি তাঁর ভালবাসা যায়নি। যা সোমবার দেখা গেল মোহনবাগান মাঠে।
খেলা শেষে ক্রোমার গলায় উচ্ছ্বাসের বদলে ছিল বেদনার সুর। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, নমস্কার জানিয়ে মাঠ ছাড়লেন ‘জয় মোহনবাগান’ স্লোগান দিতে দিতে। গোল করেও উচ্ছ্বাস দেখাননি। করেননি উৎসবও। দু’বারই গ্যালারির দিকে ফিরে দুই হাত জোড় করে নমস্কারের ভঙ্গিতে চুপ করে তাকিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে তাঁকে পিয়ারলেস কোচ জহর দাস যখন তুলে নিচ্ছেন, তখন গোটা মাঠ উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দেয় ক্রোমার জন্য। বাড়ি ফেরার সময়েও ক্রোমার জন্য করতালি বন্যা মোহনবাগানে। যা দেখে আবেগাপ্লুত ক্রোমা বলে দেন, ‘‘মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করলে কষ্ট হয়। আমার হৃদয় জুড়ে মোহনবাগান। এই ক্লাবকে ভালবাসি।’’