নরসিংহ যাদব
প্রশ্ন: রায় ঘোষণার পরে আপনার প্রথম প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
জগমল: সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করলাম। তারপরে চারটে শব্দ বললাম— অলিম্পিক্স উই আর কামিং।
প্র: এটা কি আপনাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল?
জগমল: কঠিন নয় বলুন সবচেয়ে আতঙ্কের সময়। চার বছরের পরিশ্রম জলে চলে যাচ্ছিল! আমাদের কাছে শুধু অলিম্পিক্স পদকটাই নেই। এটা জেতার জন্য দিন রাত খেটেছি। তাই ফিনিশিং লাইনের সামনে এসে যখন ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম, মনে হয়েছিল যেন পায়ের তলা থেকে আচমকা জমি সরে গেল।
প্র: ডোপ-বিতর্ক নিশ্চয়ই প্রভাব ফেলেছে আপনাদের প্রস্তুতিতে?
জগমল: সে আর বলতে। প্রস্তুতির মধ্যে কখনও উকিলের কাছে আবার কখনও থানায় দৌড়েছি। তবে শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক ভাবে বেশি বিধস্ত হয়ে পড়েছিলাম আমরা। নরসিংহ খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। রাতে ঘুমোতো না। এমনও দিন গিয়েছে যে, তিন-চার দিন এক বেলা খেয়ে কাটিয়েছে ও।
প্র: এই সময় আপনার ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিশ্চয়ই?
জগমল: আমি নরসিংহের সঙ্গে এই সময়টা ফেভিকলের মতো সেঁটে ছিলাম। কখনও একা ছাড়িনি। আমি ওকে লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছি। তবু ওকে ভেঙে পড়তে দিইনি। জোর করে প্র্যাকটিস করাতে নিয়ে যেতাম। আর সব সময় একটা কথা বলেছি— সচ কে সাথ ভগবান হ্যায়।
প্র: রিওতে নরসিংহের প্রথম ম্যাচ ১৯ অগস্ট। প্রস্তুতি শেষ হবে?
জগমল: হাতে সতেরো দিন। এখন দু’বেলা প্র্যাকটিস করব। আশা করছি প্রথম ফাইটের আগে নরসিংহ আগের জায়গায় ফিরে আসবে।
প্র: আপনি বলছেন যড়যন্ত্র। ভেঙে বলবেন?
জগমল: আমার ছাত্ররা ভাগ্যিস দেখে ফেলেছিল ছেলেটাকে। না হলে বুঝতেই পারতাম না। চুপিচুপি রান্নাঘরে ঢুকে তড়কার মধ্যে সাদা পাউডারটা মিলিয়েই দে ছুট। আমার ছাত্ররা ওর পিছনে ধাওয়া করেছিল। হাতেনাতে ধরতে পারিনি। পরে একে ওকে জিজ্ঞেস করতে জানা যায়, ও সোনপতের আখরারই ছেলে।
প্র: খাবারে ড্রাগ মেশানো আছে জেনেও নরসিংহ খেলেন কেন?
জগমল: খায়নি তো। পুরো খাবারটাই ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার আগেই হয়ে গিয়েছে। ওই যে বললাম, ঘটনাটা না হলে তো ধরতেই পারতাম না কোনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেখান থেকে আমাদের সন্দেহ হয়, তা হলে নিশ্চয়ই ওর খাবারে আগে থেকেই কিছু মেশানো হয়েছে। আমরা সোনপতে আসার পর থেকেই কিছু গড়বড় হচ্ছিল। কিন্তু ততক্ষণে ও ড্রাগ মেশানো খাবার খেয়ে ফেলেছে (৫ জুন ঘটনার আগে)।
প্র: নরসিংহের মতো অন্য অ্যাথলিটরাও তো এ রকম যড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন...
জগমল: নিশ্চয়ই পারে। এর জন্য সবার আগে নিরাপত্তা বাড়ানো উচিত সাইয়ের। বিশেষ করে রান্নাঘরের। ওখানে একমাত্র রাঁধুনি বাদে কাউকে ঢুকতে দেওয়া উচিত নয়। অ্যাথলিটও নয়। আমি তো শুনেছি, নরসিংহের ব্যক্তিগত রাঁধুনি রাতে সাইয়ের চিফ কুককে থাপ্পড় মেরেছিল। গাফিলতির জন্য আর একটু হলে নরসিংহের কেরিয়ারটাই শেষ হয়ে যাচ্ছিল যে!
প্র: নরসিংহের রিওতে যাওয়া নিয়ে নাকি এখনও জট কাটেনি?
জগমল: কেন বলছেন?
প্র: নাডা ছেড়ে দিলেও ওয়াডা আটকে দিতে পারে নরসিংহকে? (তখনও ওয়াডা সরকারি বিবৃতি দেয়নি।)
জগমল: তিন-চার দিনের মধ্যে আরও একটা ডোপ-পরীক্ষা হবে নরসিংহের। তবে নাডা যখন ছেড়ে দিয়েছে তখন ওয়াডার আর কিছু করার নেই। কেননা আমরা যতদূর জানি, ওয়াডার নির্দেশেই নাডা এই পরীক্ষা করেছে। আর এই কমিটিতে আছে প্রাক্তন অলিম্পিয়ান থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাও। তাঁদের রায়কে অবহেলা করতে পারে না। আমি আশি করছি ১৪-১৫ অগস্টের মধ্যে রিওর টিকিট হাতে পেয়ে যাব।
প্র: আপনি বলেছিলেন সিবিআই তদন্ত চাইবেন?
জগমল: এখন তো আর সময় নেই। যা হবে ফিরে আসার পরে। তবে পদক পেলে কোনও বিতর্কে যাব না। পদক না পেলে সিবিআই কেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাব।