বৈঠকে এক বারের জন্যও বিজেপি প্রসঙ্গ তোলেননি অমিত, বললেন সৌরভ

মহানাটকীয় পরিস্থিতিতে নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরের দিন মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।মহানাটকীয় পরিস্থিতিতে নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরের দিন মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:২৩
Share:

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

ভিজিয়ানাগ্রামের মহারাজের পরে তিনি ‘মহারাজ’। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একই সঙ্গে দেশের অধিনায়ক এবং ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হওয়ার নজির শুধু তাঁদের দু’জনের। কিন্তু ভিজির রাজার মতো বিতর্কিত অধিনায়কত্ব বা প্রশাসনিক জীবন নয় তাঁর। মহানাটকীয় পরিস্থিতিতে নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরের দিন মুম্বই থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতীয় দল থেকে বিজেপি, অমিত শাহ— কথা বললেন সব কিছু নিয়েই।

Advertisement

অধিনায়ক হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ বার বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন। কতটা খুশির মুহূর্ত?

ভীষণই খুশির মুহূর্ত। আমি বেশি খুশি কারণ বোর্ডের এত কঠিন একটা সময়ে সদস্যরা আমার উপর বিশ্বাস রাখলেন। তাঁদের এই আস্থাটা দেখেই সব চেয়ে ভাল লাগছে।

Advertisement

খুব কথা হচ্ছে, আপনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে। জোর জল্পনা, অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে আপনার বিজেপিতে যোগদান নিয়ে কথা হয়ে গিয়েছে। সত্যি কি?

মোটেও এ ধরনের কোনও কথা হয়নি। অমিত শাহজির সঙ্গে আমি দেখা করেছি ঠিকই। কিন্তু বৈঠকে উনি এক বারের জন্যও এই প্রসঙ্গ তোলেননি। একদমই তোলেননি।

অধিনায়ক যখন হয়েছিলেন, ম্যাচ গড়াপেটার কালো অধ্যায়ে ছিন্নভিন্ন ভারতীয় ক্রিকেট। এখন বোর্ডের আকাশেও কালো মেঘ। অধিনায়ক হিসেবে সাফল্য কতটা সাহায্য করতে পারে?

অধিনায়ক হিসেবে অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে যে, এই কাজটাও ভাল ভাবে করতে পারব। এটাই আমার সব চেয়ে বড় ভাল লাগার জায়গা। কঠিন সময়ে আমি কী করতে পেরেছি, সেটাই তো দেখা হবে। যখন আমি ভারতের অধিনায়ক হয়েছিলাম, দেশের ক্রিকেট খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। গত বছর আইপিএলে যখন যোগ দিলাম, দিল্লি ক্যাপিটালস ভাল জায়গায় ছিল না। যে কোনও কারণেই হোক, আমি যোগ দেওয়ার পরে দিল্লি টিম ভাল খেলতে শুরু করে। অনেক মরসুমেই আইপিএলের তালিকায় একেবারে নীচের দিকে শেষ করেছে দিল্লি। কিন্তু গত বার আমরা প্লে-অফে খেললাম। গ্রুপে এক নম্বর টিম হয়েছিলাম আমরা। এ বারের এই বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়াটাকেও আমি প্রথমে বিরাট বড় সম্মান এবং একটা সুযোগ হিসেবে দেখতে চাই। বোর্ডের এটা কঠিন সময়। সদস্যরা আমাকে ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমার কাছে এটাই সব চেয়ে বেশি তৃপ্তিদায়ক যে, যখনই কঠিন সময় এসেছে আমার উপরে সকলে আস্থা রেখেছেন। মনে করেছেন, আমি পারব। সেরা প্রাপ্তি এটাই।

গোটা দেশে ফের ট্রেন্ডিং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ফের সদা ব্যস্ত আপনার ফোন। ক্রিকেটের সেই দিনগুলো
কি মনে পড়ে যাচ্ছে?

ব্যস্ত তো থাকতেই হয়। সিএবি প্রেসিডেন্ট রয়েছি বেশ কয়েক বছর। অনেক কাজই করতে হয়। কী জানেন তো, দিনের শেষে আমি এক জন ক্রিকেটার। যদি ক্রিকেটের কাজ করার সুযোগ পাই, তার চেয়ে আনন্দদায়ক আর কিছু হয় না। বিরাট এক দায়িত্ব আমার কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিরাট এক সম্মান। ভীষণই গর্বিত বোধ করছি। তাই জীবন আরও ব্যস্ত হয়ে উঠলে, একেবারেই কোনও আপত্তি নেই। গত কয়েক বছর ধরে ক্রিকেট প্রশাসনে আছি। মন দিয়ে কাজ করতে চেয়েছি কারণ কাজটা আমি উপভোগও করেছি।

মুম্বইয়ের এই ওয়াংখেড়েতেই ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক হিসেবে কত বার প্রবেশ করেছেন। কত স্মরণীয় ম্যাচ রয়েছে! আজ যখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঢুকছিলেন, ঠিক কী রকম অনুভূতি হচ্ছিল?

ওয়াংখেড়ে আমার জন্য পয়মন্ত। এখানেই আমি অধিনায়ক হয়েছিলাম। বোর্ড প্রেসিডেন্টও হলাম। খেলার সময়কার অনেক মধুর স্মৃতিই রয়েছে। তবে আমি যখন ভারতের অধিনায়ক ছিলাম, বোর্ডের অফিসটা অন্য রকম ছিল। সেখানে আমি কয়েক বার এসেছি। নির্বাচক কমিটির বৈঠকেও বসেছি অধিনায়ক হিসেবে। কিন্তু তখন কোনও ধারণা ছিল না যে, এক দিন আমি এখানকার নতুন অফিসে আসব বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তবে আজ যখন ঢুকছিলাম, পুরনো স্মৃতির কথা সত্যিই আমার মাথায় আসছিল না।

তা হলে কী ঘুরছিল মাথায়?

আমি ভারতীয় ক্রিকেটে একটা ভূমিকা পেয়ে খুশি। এই দায়িত্ব পেয়ে গর্বিত। সকলের আস্থার পূর্ণ মর্যাদা দিতে হবে। এটাই ভাবছিলাম।

অধিনায়ক হিসেবে অনেক চ্যালেঞ্জ জিতেছেন। বোর্ডের পরীক্ষাটা কি আরও কঠিন বাইশ গজে?

দু’টো কাজ আলাদা। খেলার সময়টা ছিল বেশিটা মাঠের মধ্যে পারফর্ম করা। বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাজটা বেশিটা নেপথ্যে থাকা ঘরগুলোতে হয়। খোলা মাঠে সেটা ঘটে না। মাঠে নেমে অত লোকের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জটা অন্য রকম ছিল। এটাও নতুন এক অধ্যায়। দু’টো আলাদা সময়ও। তখন আমি আরও তরুণ ছিলাম। এখন অভিজ্ঞ হয়েছি (হাসি)।

অনেকে বলছে, ন’মাস সময়টা ছাপ ফেলার পক্ষে খুবই কম।

আমি একেবারেই তা মনে করি না। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে আবার সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করার জন্য এই সময়টা যথেষ্ট। ক্রিকেট পরিচালনা তো চলতেই থাকবে। এখন প্রথম কাজটা হচ্ছে, সঠিক পদক্ষেপগুলো করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানো এবং ক্রিকেটের উন্নতির জন্য নীতিগুলোকে সাজানো। সেটা ন’মাসে করা যাবে না কেন?

রবিবার রাতে আরব সাগরের পারে মুম্বইয়ের হোটেলে যে মহানাটকের পরে আপনি প্রেসিডেন্ট হলেন, তা নিয়ে কী বলবেন?

সেটা মিটিংয়ের ভিতরকার কথা। বলতে পারব না।

নতুন প্রেসিডেন্টের প্রথম লক্ষ্য কী হতে যাচ্ছে?

অনেক কাজই রয়েছে। আইসিসি-তে ভারতীয় বোর্ডের স্থান ঠিক করা। ঘরোয়া ক্রিকেটকে সাজানো। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের দেখভাল করা। বোর্ডে সিস্টেম ফেরানো। ভারতীয় ক্রিকেটকে ঠিক মতো এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নেপথ্যে যে জায়গাগুলো রয়েছে, সেগুলোকে সক্রিয় রাখতে হবে। সেই ইঞ্জিনগুলোকে সচল করে তোলা হবে প্রথম কাজ। গত তিন-চার বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে তো ইমার্জেন্সি চলেছে। আমার প্রথম লক্ষ্য হবে স্বাভাবিক বোর্ড পরিচালনার রুটিন ফিরিয়ে আনা।

ঘরোয়া ক্রিকেটে নির্দিষ্ট কোনও বদল আনতে চাইছেন কি?

ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচিটা নিয়ে ভাবতে হবে। সেটা নিয়ে কথা বলব সকলের সঙ্গে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের আর্থিক কাঠামোর উন্নতির দিকটাও দেখতে হবে। কিন্তু সবার আগে ক্রিকেট পরিচালনার সিস্টেমটা ফেরাতে হবে। আমার মতে, ক্রিকেটের দু’টো ভাগ। একটা মাঠের মধ্যে। যেটা বিরাট কোহালিদের হাতে। আমাদের ছেলেরা ভাল করছেও। অন্য ভাগটা হচ্ছে, পর্দার আড়ালে থাকা ঘরগুলোতে প্রশাসকদের ভূমিকা। এই দ্বিতীয়টা ভাগটায় আমরা রয়েছি এবং আমাদের কাজ হচ্ছে ক্রিকেট যাতে সঠিক পথে চলে, তা নিশ্চিত করা।

ভারতীয় দল সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

আমাদের ছেলেরা ভাল খেলছে। খুবই ধারাবাহিকতা রয়েছে। শুধু বিশ্বমানের ট্রফি জেতাটা হচ্ছে না, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। সারা বছরের পারফরম্যান্স হিসেবে যদি দেখা যায়, তা হলে আমাদের টিম দারুণ করেছে। র‌্যাঙ্কিংও সেই কথা বলবে। বিশ্বকাপ আমরা জিতিনি, কিন্তু সেখানেও আমি বলব, সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছনোর মতো ভাল খেলেছে ছেলেরা। তবে হ্যাঁ, আমি মনে করি, এই টিমের আরও দূর যাওয়ার দক্ষতা রয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা রয়েছে। আশা করব, সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই ফাইনাল হার্ডল আমরা পেরিয়ে যেতে পারব।

অধিনায়ক বিরাটের সঙ্গে নিশ্চয়ই বসতে চাইবেন আপনি?

অবশ্যই। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তো কথা বলতেই হবে। টিমের সঙ্গেও কথা বলব। ওদের কী কী দরকার, আরও ভাল করতে গেলে আমাদের দিক থেকে কী করা প্রয়োজন, সে সব নিয়ে খোলাখুলি সকলের মতামত জানতে চাইব। এবং, বোর্ডের প্রশাসনিক তরফে আমাদের কাজ হবে সুষ্ঠু ভাবে ভারতীয় দলের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এগিয়ে দেওয়া এবং দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করণীয়, সেগুলোকে নিশ্চিত করে ফেলা।

সরাসরি বোর্ড প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করি, ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে কি আপনি খুশি?

অবশ্যই খুশি। ওরা খুব ভাল ক্রিকেট খেলছে। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে সেরা দলগুলোর একটা তো বটেই। একটা দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের ছেলেরা ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছে। আমার কাছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক-দু’দিনের চমকের চেয়ে বরাবর দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলার উপর আমি জোর দিয়েছি। যখন অধিনায়ক ছিলাম, তখনও এ ভাবেই আমি ব্যাপারটাকে দেখতাম। শুধু একটাই জায়গা ঠিক করা দরকার। বিশ্বমানের ট্রফি জেতার জায়গাটা। আমি নিশ্চিত, ছেলেরা শেষ সীমান্ত
পেরিয়ে দেখাবে।

আপনি নাকি বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাজ শুরু করে দিয়েছেন?

না, না। আজ আমি ক্রিকেট সেন্টারে (যেটা ওয়াংখেড়েতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সদর দফতর) গিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি ভাবে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শুরু হচ্ছে তো ২৩ অক্টোবর বৈঠকে। সকলের সঙ্গে কথা বলে সব জেনেবুঝে নিচ্ছি। পুরোপুরি কাজে নামব ২৩
অক্টোবরের পরে।

আইসিসি নিয়ে কি নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?

ভারতীয় বোর্ড এখন আইসিসি-তে কোনও শক্তি বলেই গণ্য হচ্ছে না। আমাদের লক্ষ্য হবে, আগের প্রভাব ফেরানো। সেটা খুবই দরকার। আইসিসি-তে আমরা দুর্বল থাকব না।

ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনি রিভিউ করতে চাইবেন, এমনও শোনা যাচ্ছে?

ধুস, একদম বাজে কথা। কিসের রিভিউ করব? টিমের সঙ্গে কথা বলব। অধিনায়ক, কোচের সঙ্গে কথা বলব নিশ্চয়ই। কিন্তু সেটা জানার জন্য যে, টিমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে কী করা দরকার। টিমের সঙ্গে আলোচনা করে যা যা দরকার, সেগুলোই করা হবে। অপ্রয়োজনীয় কিছু করার
কথা ভাবছিই না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement