Cheteshwar Pujara

আজ ভারতের কাউকে হতে হবে আথারটন

দলকে বাঁচানোর দায়িত্ব এখন চেতেশ্বর পুজারা-অজিঙ্ক রাহানের।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৭
Share:

ছবি: পিটিআই।

ক্রিকেট সাহিত্য রচিত হয় দু’রকম শিল্পকে মাথায় রেখে। ম্যাচ জেতানোটা যেমন একটা শিল্প, ম্যাচ বাঁচানোটাও ঠিক সে রকম।

Advertisement

আধুনিকৈৈৈৈৈ যুগের এই ক্রিকেটে ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটারেরাই নায়কের সম্মান পেয়ে থাকে। তবে মাঝেসাঝে, কখনও-সখনও এমন এক জন ক্রিকেটার আসে, যে ম্যাচ বাঁচিয়েও ক্রিকেট লোকগাথায় জায়গা করে নেয়। ঠিক সে রকমই এক জনকে সিডনির শেষ দিনে পেতে হবে ভারতকে।

যেমন ১৯৯৫ সালে পেয়েছিল ইংল্যান্ড! দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে।

Advertisement

ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সিডনি দ্বৈরথে চোখ রাখতে রাখতে আমার দুটো টেস্টের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ২০১০ সালে এই ইডেনেই দেখেছিলাম হাসিম আমলার দুরন্ত লড়াই। দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন নম্বরে নেমে অপরাজিত থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকার হার বাঁচাতে পারেনি। যে কাজটা করেছিল ইংল্যান্ডের ওপেনার মাইকেল আথারটন।

১৯৯৫ সালের জোহানেসবার্গ টেস্ট। সে দিন ইংল্যান্ডের পরিস্থিতি অনেকটা ভারতের মতোই ছিল। বরং বলব, ইংল্যান্ডের কাজটা আরও কঠিন ছিল। ৪৭৯ রানের লক্ষ্য আর খেলতে হবে মোট ১৬৫ ওভার। সেখানে ভারতের সামনে তৃতীয় টেস্ট জেতার জন্য লক্ষ্য ৪০৭। সব মিলিয়ে ব্যাট করার কথা ১৩৩ ওভার। শেষ দিনে খেলতে হবে ৯৭ ওভার। ইংল্যান্ডকেও ৯০ ওভারের বেশি খেলতে হয়েছিল, হাতে ছয় উইকেট নিয়ে। ভারতের বিপক্ষে বল হাতে রয়েছে প্যাট কামিন্স-মিচেল স্টার্ক-জশ হেজ্‌লউড-নেথান লায়ন। আথারটনকে সামলাতে হয়েছিল অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, মেরিক প্রিঙ্গলদের।

ওই অবস্থায় তৎকালীন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ৪৯২ বল খেলে, অপরাজিত ১৮৫ রানের যে মহাকাব্যিক ইনিংসটা খেলেছিল, তা ক্রিকেটীয় রূপকথায় জায়গায় করে নিয়েছে। ম্যাচ জেতানোর জন্য নয়, ম্যাচ বাঁচানোর জন্য। সে দিন ম্যাচ বাঁচাতে আরও এক জন এগিয়ে এসেছিল। ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার জ্যাক রাসেল। ইংল্যান্ড যখন পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে, রাসেল এসে ২৩৫ বলে অপরাজিত ২৯ করে যায়। রাসেলের এই লড়াকু মানসিকতাই দেখতে চাই ভারতের পরের দিকের কোনও এক ব্যাটসম্যানের থেকে।

চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের স্কোর দু’উইকেটে ৯৮। আসলে ওটা হবে তিন উইকেটে। রবীন্দ্র জাডেজার আঙুল ভেঙে গিয়েছে। ওর ব্যাট করার সম্ভাবনা নেই। তবে চার-পাঁচ ওভার ব্যাট করলে ম্যাচ বাঁচানো যাবে, এই পরিস্থিতিতে জাডেজা নামবে কি না, সেটা বলা যাচ্ছে না। হয়তো ইঞ্জেকশন নিয়ে নামতেও পারে। উদাহরণ তো রয়েইছে— কপিল দেব নিখাঞ্জ।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ওপেনিং জুটি তুলল ৭১। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ৭১ রানটা ১৭১ হওয়ার দরকার ছিল। দুই ওপেনার— রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিলের অন্তত এক জনের বড় সেঞ্চুরি করা উচিত ছিল। দু’জনেই উইকেটে জমে গিয়ে আউট হল।

অভিষেক সিরিজে শুভমনের তিনটে ক্যাচই কিপারের কাছে বা গালি অঞ্চলে গেল। ওর ডান পা-টা ‘অ্যাক্রস দ্য স্টাম্প’ খুব একটা যাচ্ছে না। ফলে মাঝে মাঝেই শরীর থেকে দূরে শট খেলছে। এবং, ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ হয়ে যাচ্ছে। এ দিনও তাই হল। বিদেশের মাঠে টেস্টে এই প্রথম ওপেন করল রোহিত। আর দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেই হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু যে ভাবে আউট হল, তাতে নিশ্চয়ই ওর ভয়ঙ্কর আফসোস হবে। যে শটটা ও ঘুমের মধ্যেও খেলতে পারে, সেই পুল মেরে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বসল।

‘ক্যাচেস উইন ম্যাচেস’ বলে ক্রিকেটে যে কথাটা আছে, তা কতটা ঠিক, সেটা এই সিরিজে বোঝা যাচ্ছে। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া গোটা আটেক ক্যাচ ফেলে হেরেছিল। সিডনিতে ভারতও বেশ কিছু ক্যাচ ছেড়েছে। চতুর্থ দিনের শুরুতেই মার্নাস লাবুশেনের সহজ ক্যাচ স্কোয়ারলেগ অঞ্চলে ফেলল হনুমা বিহারী। ওই সময় স্টিভ স্মিথ-লাবুশেন জুটি ভেঙে গেলে অস্ট্রেলিয়া চাপে পড়ে যেত। ক্যাচ ফস্কানোর দিনে সেরা ক্যাচটা নিয়ে গেল এমন এক জন, যার এই টেস্টে মাঠে নামারই কথা নয়। ঋদ্ধিমান সাহা। ঋদ্ধি যে বিশ্বের অন্যতম সেরা কিপার, তা ওকে আর প্রমাণ দিতে হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ঋষভ পন্থ ৩০-৩৫ রান করে বড় ব্যাটসম্যানের তকমা পেয়ে ঋদ্ধির দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।

দলকে বাঁচানোর দায়িত্ব এখন চেতেশ্বর পুজারা-অজিঙ্ক রাহানের। এদের কাউকে ‘আথারটন’ হয়ে উঠতে হবে। পাঠক যখন সোমবার এই লেখা পড়বেন, তত ক্ষণে অবশ্য অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে ভারতের ভাগ্য।

মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য পুজারাকে এই সিরিজে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। শেষ দিনে ভারতের টিকে থাকার লড়াই হলেও, বোলারকে আধিপত্য বিস্তার করতে দিলে চলবে না। যেটা পুজারা হতে দিচ্ছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যদি শট খেলার বলে শট খেলে, তা হলে রানটাও উঠবে, অস্ট্রেলিয়াও ফিল্ডিং ছড়াতে বাধ্য হবে। শেষ দিনে ৩০৯ রান তোলাটা খুব কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। অস্ট্রেলিয়ার হাতে ৯০ শতাংশ ম্যাচ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ১০ শতাংশ সুযোগ থেকে যারা জেতে, তারাই তো রূপকথা লেখে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement