পুল্লেলা গোপীচন্দ। ফাইল ছবি।
টমাস কাপের সাফল্যে দেশ জুড়ে ব্যাডমিন্টন নিয়ে যে উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে, তাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের তারকা তুলে আনতে উদ্যোগী ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া। লক্ষ্য প্রতিটি বিভাগে বিশ্বের প্রথম ৩০ জনের মধ্যে অন্তত ১০ জন যেন ভারতীয় থাকে। ব্যাডমিন্টন বিশ্বে ভারতের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান পুল্লেলা গোপীচন্দ।
ব্যক্তিগত স্তরে ভারতের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পেলেও দলগত সাফল্য তেমন ছিল না। টমাস কাপে কিদম্বি শ্রীকান্ত, এইচএস প্রণয়, লক্ষ্য সেনদের সোনার সাফল্যের পর হইচই হলেও তিন দশক আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। প্রথম ছয় দেশের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা না থাকায় ১৯৯৪ সালের কমনওয়েলথ গেমসেও ব্যাডমিন্টন দল পাঠাতে রাজি হয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। সে সময় জাতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন গোপীচন্দ। এক জন খেলোয়াড় হিসেবে তখন সরকারের সিদ্ধান্তে হতাশ হলেও তিনি মানছেন সে সময় ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দলের মান ছিল খুবই সাধারণ।
সরকারের সেই সিদ্ধান্তই ধাক্কা দিয়েছিল তৎকালীন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের। সেই ধাক্কাতেই পরের কমনওয়েলথ গেমসে ব্যাডমিন্টনের পুরুষদের দলগত ইভেন্টে রুপো পেয়েছিল ভারত। দলগত ব্যাডমিন্টনে সেই প্রথম সাফল্য। গোপীচন্দদের দেখানো পথ ধরে এগিয়েই প্রথম বার টমাস কাপ দেশে এনেছেন শ্রীকান্ত, লক্ষ্যরা।
খেলা ছাড়ার পর জাতীয় দলের প্রধান কোচ হন গোপীচন্দ। ২০০৬ সালে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রথম লক্ষ্য ছিল ২০১০ কমনওয়েলথ গেমস। গোপীচন্দ বলেছেন, ‘‘শক্তিশালী দল তৈরি করতে চেয়েছিলাম। সেই প্রচেষ্টার সুফল মিলতে শুরু করেছিল ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসের আগে থেকেই। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমরা সাফল্য পেতে শুরু করি। ধীরে ধীরে নিজেদের নিয়ে প্রত্যাশা তৈরি করি। ২০১১ থেকে আমরা কিন্তু প্রতিটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং অলিম্পিক্স থেকেই পদক জিতেছি।’’
২০০১ সালে অল ইংল্যান্ড খেতাব জয়ী গোপীচন্দ ধন্যবাদ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। বলেছেন, ‘‘সরকার আমাকে বিশ্বাস করেছিল এবং সমর্থন করেছিল। সাই প্রতি বছর ব্যাডমিন্টনের জন্য ২৫ কোটি টাকা করে খরচ করেছিল। বাই-এর সভাপতি হিমন্ত বিশ্বশর্মা কখনও না বলেননি। যখন যা চেয়েছি ব্যাডমিন্টনের জন্য সব দিয়েছেন। এমন সমর্থন এবং সাহায্য পাওয়ার জন্যই আমাদের র্যাকেটে একের পর এক সাফল্য ধরা দিতে শুরু করে।’’
ব্যাডমিন্টনের প্রতি হিমন্ত বিশ্বশর্মার ভালবাসার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন গোপীচন্দ। টমাস কাপের সাফল্যের পরেই তিনি সমান সক্রিয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিভা তুলে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। রবিবারই ৩০ জন কোচকে নিয়োগ করেছেন তিনি। যাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবেন এবং প্রতিভাবানদের সনাক্ত করবেন। এই প্রকল্পের চেয়ারম্যান হয়েছেন গোপীচন্দ।
জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ বলেছেন, ‘‘আমাদের আরও কোচ দরকার। বাই সভাপতি রবিবারই ৩০ জনকে জাতীয় স্তরের কোচ হিসেবে নিয়োগ করেছেন। যেখানে যেখানে তাঁদের পাঠানো দরকার সে সব জায়গায় ওঁদের পাঠানো হবে। এঁদের সকলকে বেতন দেবে বাই। প্রতিভাবানদের প্রশিক্ষণে কোন ফাঁক রাখতে চাই না আমরা।’’
এখনও অলিম্পিক্স সোনা অধরা ভারতের। বর্তমান প্রজন্ম জিততে পারেনি ঐতিহ্যবাহী অল ইংল্যান্ড খেতাবও। অলিম্পিক্সের সোনাই কি ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের পরবর্তী লক্ষ্য? না, একদমই নয়। বলছেন গোপীচন্দই। তবে লক্ষ্য কী? তিনি বলেছেন, ‘‘সব বিভাগে বিশ্বের প্রথম ৩০ জনের মধ্যে অন্তত ১০জন করে ভারতীয়কে দেখতে চাই। সে সিঙ্গলস হোক বা ডাবলস। সেটা সম্ভব হলে আমাদের খেলোয়াড়রা আরও বেশি পদক জিততে পারবে। এ বারেই দেখুন মেয়েদের দল একদমই প্রত্যাশিত ফল করতে পারেনি। বরং খারাপই করেছে বেশ। কিন্তু ছেলেদের দলের সাফল্যের পর সেটা নিয়ে কেউই কথা বলছে না। আবার আমাদের ছেলেরা এখনও অলিম্পিক্সে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি। মেয়েরা পর পর পদক জেতায় সেটা নিয়েও কিন্তু কেউ কথা বলে না। বিশ্ব ক্রমতালিকায় প্রথম ৩০ জনের মধ্যে যত বেশি আমাদের খেলোয়াড় থাকবে, আমরা তত বেশি সাফল্য পেতে শুরু করব।’’ শুধু নির্দিষ্ট একটা পদককে লক্ষ্য করে আর ভাবতে চান না গোপীচন্দ। তাঁর পাখির চোখ এখন ব্যাডমিন্টন বিশ্বে ভারতের শাসন কায়েম করা।