‘টপ্স’-এর তালিকা থেকে বাদ পড়লে সমস্যা হতে পারে (বাঁ দিক থেকে) আভা খাটুয়া, অনুষ আগরওয়াল, মেহুলি ঘোষদের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
‘টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিম’ বা ‘টপ্স’। প্যারিস অলিম্পিক্সে যাতে ভারতীয় খেলোয়াড়েরা ভাল খেলতে পারেন তার জন্য এই প্রকল্প চালু করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর আওতায় খেলোয়াড়দের মাসিক ৫০,০০০ টাকা ভাতা দেওয়া হত। পাশাপাশি বিদেশি কোচের অধীনে বা বিদেশে অনুশীলনের খরচ দেওয়া হত। কিন্তু আশানুরূপ ফল হয়নি। গত বার টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সাতটি পদক জিতেছিল ভারত। ছিল একটি সোনাও। এ বার মোট ছ’টি পদক এসেছে। তার মধ্যে পাঁচটি ব্রোঞ্জ। এই ফলের পর নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। খারাপ খেলায় শাস্তি হতে পারে খেলোয়াড়দের। ‘টপ্স’-এর তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন অনেক খেলোয়াড়। এই তালিকায় বাঙালি খেলোয়াড়েরাও রয়েছেন। যদি শাস্তি হয় তা হলে কতটা সমস্যায় পড়তে পারেন বাঙালি খেলোয়াড়েরা?
‘টপ্স’-এর তালিকায় কত খেলোয়াড়? কত জন বাঙালি?
এই ‘টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিম’-এর আওতায় দু’টি বিভাগ রয়েছে। কোর ও ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ। কোর গ্রুপে রয়েছেন ১৭৯ জন। ডেভেলপমেন্ট গ্রুপে ১৩০ জন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে এই প্রকল্পে মোট ৩০৯ জন খেলোয়াড় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বাঙালি খেলোয়াড় আট জন। কোর গ্রুপে রয়েছেন অতনু দাস (তিরন্দাজি), অঙ্কিতা ভকত (তিরন্দাজি), আভা খাটুয়া (শটপাট), অনুষ আগরওয়াল (ইকুয়েস্ট্রিয়ান) ও মেহুলি ঘোষ (শুটিং)। ডেভেলপমেন্ট গ্রুপে রয়েছেন আয়ুষী পোদ্দার (শুটিং), স্বস্তিকা ঘোষ (টেবল টেনিস) ও অচিন্ত্য শিউলি (ভারোত্তোলন)। এই আট জনের মধ্যে অতনু, অঙ্কিতা, আভা ও মেহুলি অবশ্য এখন বাংলার হয়ে খেলেন না। অন্য রাজ্যের হয়ে খেললেও তাঁরা বাঙালি।
‘টপ্স’-এ কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
এই প্রকল্পে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা প্রতি মাসে ৫০,০০০ টাকা করে ভাতা পান। তা ছাড়া প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য আলাদা করে খরচ করা হয়। গত এক বছর ধরে তাঁদের বিভিন্ন দেশে অনুশীলনের জন্য পাঠানো হয়। বিদেশি কোচের অধীনে অনুশীলন, বিদেশে থাকা, খাওয়ার খরচ দেওয়া হয়। এই খরচ অবশ্য সব খেলোয়াড়ের জন্য সমান নয়। নীরজ চোপড়া টোকিয়োয় সোনা জিতেছিলেন। তাই তাঁর জন্য অনেক বেশি খরচ করা হয়েছে। সেই তুলনায় কম নামী খেলোয়াড়দের জন্য খরচ কম করা হয়েছে। তবে প্রত্যেককে অনুশীলনে সাহায্য করা হয়েছে। এ বার প্যারিসে ভারতের ১১৭ জন খেলোয়াড় গিয়েছিলেন। তাঁদের জন্য কোচ ও সাপোর্ট স্টাফ বাবদ ১৪০ জনকে পাঠানো হয়েছিল। খেলোয়াড়দের সব চাহিদা পূরণ করা হয়েছিল। তার পরেও তেমন সাফল্য আসেনি।
সাফল্য না পেলে তার খেসারত দিতে হবে। এমনটাই মনে করেন বাংলার প্রাক্তন অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকার। প্রাক্তন এই শুটার আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “আমার মতে এটা অন্যায় নয়। ভাল না খেললে তার খেসারত তো দিতেই হবে। সেটা সব ক্ষেত্রেই হয়। ভাল খেললে যেমন পুরস্কার পাওয়া যায়, খারাপ খেললে তেমন শাস্তিও পেতে হবে।” তবে এখনই এই বিষয়ে কোনও ঘোষণা না হওয়ায় কতটা শাস্তি হবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে জয়দীপের। তিনি বললেন, “টপ্স-এ কোর ও ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ আছে। এই দুই গ্রুপের মধ্যে খেলোয়াড় অদলবদল হতেই থাকে। কেউ কোর থেকে ডেভেলপমেন্টে যায়। কেউ আবার ডেভেলপমেন্ট থেকে কোর গ্রুপে আসে। যদি কেউ তালিকা থেকে পুরো বাদ পড়ে যায় তার পরেও তার সরকারি সাহায্য পাওয়ার একটা উপায় রয়েছে। সেটা হল ন্যাশনাল সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে নাম থাকা। তবে তার টাকাটা অনেক কম। প্যারিস অলিম্পিক্সে যারা খেলেছে তাদের ৮০ শতাংশ কোর গ্রুপে থাকবে। সেখান থেকে তাদের ডেভেলপমেন্ট গ্রুপে আনা হবে না পুরো বাদ দেওয়া হবে সেটা দেখতে হবে। অলিম্পিক্সে যারা অংশ নিয়েছে তাদের প্রায় সকলেরই ব্যক্তিগত স্পনসর আছে। তবে সরকারি সাহায্য বাদ গেলে ক্ষতি তো হবেই।”
আলোচনায় ‘মিশন অলিম্পিক্স সেল’
প্যারিস অলিম্পিক্সের পর আলোচনায় বসেছিল ‘মিশন অলিম্পিক্স সেল’। খেলোয়াড়, কোচ, সরকারি আধিকারিক ও প্রশাসকদের নিয়ে তৈরি এই কমিটিতে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে খেলোয়াড়দের পদক জেতার সম্ভাবনার বিষয়। যে খেলোয়াড়ের পদক জেতার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের জন্য খরচ করতে চাইছে তারা। তবে আপাতত পুরোটাই প্রস্তাবের পর্যায়ে রয়েছে।
এই শাস্তি হলে খেলোয়াড়দের সমস্যা হবে, সে কথা মেনে নিয়েও বাংলার অলিম্পিক্স সংস্থার কর্তা কমল মিত্র জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন না এতটা শাস্তি দেওয়া হবে। কমল বললেন, “টাকা পেলে তো সকলেরই ভাল। না পেলে সমস্যা তো হবেই। সে রকম হলে ব্যক্তিগত ভাবে খেলোয়াড়দের স্পনসর জোগাড় করতে হবে। তবে আমার মনে হয় না এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার এখন খেলায় অনেক টাকা দিচ্ছে। খেলো ইন্ডিয়াতেও টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত তালিকা ছোট হবে কি না তা নিয়ে অনেক সংশয় আছে।”
খেলোয়াড়দের খরচের দিকে নজর
খেলোয়াড়দের খরচের দিকেও নজর দিচ্ছে কমিটি। খেলোয়াড়েরা অনুশীলনের জন্য যা খরচ করেন তার হিসাব কমিটিকে দিতে হয়। কিন্তু গত বছরের হিসাবের মধ্যে থেকে ১০ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না বলে খবর। সেই তালিকায় কোন খেলোয়াড়েরা আছেন তা এখনও জানা যায়নি। তবে পরের বছর থেকে যাতে এই ধরনের কোনও সমস্যা না হয় সে দিকে নজর দিতে চাইছে তারা। যদি ‘টপ্স’-এর তালিকা থেকে খেলোয়াড়দের নাম বাদ যায় তা হলে তাদের সমস্যা হবেন বলেই মনে করেন বাংলার সাঁতার সংস্থার কর্তা রামানুজ মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “সমস্যা তো হবেই। বিদেশি কোচের কাছে অনুশীলন করার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় সেরা অনুশীলনের সুবিধা দেওয়া হয়। সেটা তো আর অন্য ভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। এখন এই প্রকল্পে অনেক খেলোয়াড় আছে। সেই সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে।”