দায়িত্ব: অধিনায়কত্বের চাপ ব্যাটিংয়ে পড়বে না, আশা অভিমন্যুর। ফাইল চিত্র
বাংলার ক্রিকেটে পটপরিবর্তন। মনোজ তিওয়ারির পরিবর্তে বাংলার নতুন অধিনায়ক হলেন অভিমন্যু ঈশ্বরন। সারা মরসুমের জন্যই ২৩ বছর বয়সি ব্যাটসম্যানকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দিলেন বাংলার নির্বাচকেরা।
বৃহস্পতিবার সিএবি-তে আসন্ন মরসুমের নির্বাচনী বৈঠকে ঠিক করা হয়, ঈশ্বরনকে রঞ্জি ট্রফির দায়িত্ব দিয়ে মনোজকে সীমিত ওভারের অধিনায়ক করা হবে। সেই মতো বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ককে ফোন করে বিষয়টি জানান সিএবি যুগ্মসচিব অভিষেক ডালমিয়া। কিন্তু মনোজ সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন। সারা মরসুমের দায়িত্বই তিনি তুলে দেন ঈশ্বরনের হাতে। আসন্ন মরসুমে নিজের ব্যাটিং নিয়েই বেশি মনোনিবেশ করতে চান মনোজ। সেই সঙ্গে তরুণ অধিনায়ককে সব রকম পরিস্থিতিতে সাহায্য করার আশ্বাস দেন বাংলার তারকা ব্যাটসম্যান।
মনোজের এই মনোভাবে মুগ্ধ কোচ অরুণ লাল। বলেন, ‘‘এই মনোভাবই বুঝিয়ে দিল, ও কত বড় ক্রিকেটার। প্রাক্তন অধিনায়কের পরামর্শে অধিনায়ক হিসেবে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে অভিমন্যু। তা ছাড়া, ভবিষ্যতের কথা ভেবে দেখলে মনোজের বিকল্প কিন্তু অভিমন্যুই। এই প্রজন্মের ক্রিকেটে সর্বত্র মাতিয়ে চলেছে ‘ইয়ং ব্লাড’। তাই বাংলার ক্রিকেটও এ বার তরুণ প্রজন্মের উপরে আস্থা রাখল।’’
অরুণ আরও বলেন, ‘‘বাংলার ক্রিকেটে মনোজের অবদান অনস্বীকার্য। রাজ্যের ক্রিকেট-সংস্কৃতির অন্যতম তারকা হয়ে থেকে যাবে ও। ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিকেটকে এখনও অনেক কিছু দেওয়া ওর বাকি।’’
২০১৫-র অক্টোবরে বাংলার নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় মনোজের হাতে। তার আগে দলকে নেতৃত্ব দিতেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল। সে বছর ডিসেম্বরেই অবসর ঘোষণা করেন লক্ষ্মী। রঞ্জি ট্রফি জেতার স্বপ্ন নিয়ে অভিযান শুরু করেছিলেন মনোজ। কিন্তু শেষ চার বছরে জাতীয় স্তরের কোনও ট্রফি জিততে পারেননি। যদিও প্রচুর স্বরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়ে গিয়েছেন। গত বছর তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে টানাপড়েনের সময় মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করে জবাব দিয়েছিলেন মনোজ। ৩৩ ইনিংসে মনোজ করেছিলেন ১১৮৭ রান। এ দিন ঈশ্বরনের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে এক বারও দ্বিধাবোধ করেননি প্রাক্তন অধিনায়ক।
অভিমন্যু যদিও এখন দলীপ ট্রফি নিয়ে ব্যস্ত। ভারত ‘রেড’ দলের হয়ে খেলছেন। ঈশান পোড়েলদের (গ্রিন) বিরুদ্ধে ম্যাচ চলছে তাঁর। বৃহস্পতিবার রাতে অধিনায়ক হওয়ার খবর পেয়ে তিনি আপ্লুত, একই সঙ্গে উত্তেজিত। বাংলার নতুন অধিনায়ক বলেন, ‘‘যে রাজ্যের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছি, এখন তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেয়ে ভাল লাগছে। কিছুটা চাপ তো থাকবেই। অনেক বড় দায়িত্ব। সেই চাপের প্রভাব আশা করি আমার ব্যাটিংয়ে পড়বে না। অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া অভিজ্ঞতা আমার আছে। তাই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ গত মরসুমে বাংলার জার্সিতে ৩০ ইনিংসে ১৫১৮ রান করেছিলেন ২৩ বছর বয়সি তারকা। আসন্ন মরসুমে সেই রানসংখ্যা বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
বাংলাকে রঞ্জি ট্রফি তুলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন? অভিমন্যুর উত্তর, ‘‘অবশ্যই। এত দিন ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই স্বপ্ন দেখে এসেছি। এ বার অধিনায়ক হিসেবে সেই দায়িত্ব নিতে আমি প্রস্তুত। তা ছাড়া মনোজদা, সুদীপদা তো আমার সঙ্গেই থাকবে। ওদের থেকেই যাবতীয় পরামর্শ নেব।’’
বৃহস্পতিবার ২১জনের প্রাথমিক দল ঘোষণা করা হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর জয়পুরে প্রাক-মরসুম প্রতিযোগিতায় খেলতে যাবে সে দল। সহ-অধিনায়ক হিসেবে রয়েছেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। দলে ফেরানো হয়েছে অর্ণব নন্দীকে। জয়পুরের প্রতিযোগিতায় রাজস্থান, কেরল, রেলওয়েজের বিরুদ্ধে খেলে ফিরবে বাংলা। তারপরে হবে ফিটনেস পরীক্ষা। জয়পুরের পারফরম্যান্স ও ফিটনেস পরীক্ষায় সফল ক্রিকেটারদের নিয়ে বিজয় হজারের দল বেছে নেওয়া হবে। তা ছাড়া আজ, শুক্রবারই সল্টলেকে সৌরভ অ্যাকাডেমিতে নতুন দল নিয়ে অনুশীলনে নামবে বাংলা। প্রস্তুতির শুরুতে ইয়ো ইয়ো টেস্ট করে দেখে নেওয়া হবে প্রত্যেকের অবস্থা।