ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরাই রাজা। তাদের জন্যই বরাদ্দ থাকে বেশির ভাগ সুবিধা, নিয়ম। আর, বোলাররা স্কিলের উৎকর্ষে চ্যালেঞ্জ জানান সেই ব্যাটসম্যানদের। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেক ওভার রয়েছে, যেখানে বোলারের দাপটে ভুল করতে বাধ্য হয়েছেন ব্যাটসম্যান। বা, ব্যাটসম্যানকে ভুল শট নিতে বাধ্য করেছেন বোলার। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল নানা ফরম্যাট মিলিয়ে এমনই ১০ ওভার যেগুলিকে ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ১০ ওভারের তকমাও দেওয়া যায়।
২০০৬ সালে করাচি টেস্টের প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন ইরফান পাঠান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই ওভারের প্রথম তিন বলে আসেনি উইকেট। ইরফান পাঠানের চতুর্থ বলে স্লিপে খোঁচা দিয়ে ফিরেছিলেন সলমন বাট। পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউ হন অধিনায়ক ইউসুফ খান। আর ষষ্ঠ বলে বোল্ড হন মহম্মদ ইউসুফ। এই দুটো বলই দেরিতে সুইং ভেঙে ভিতরে আসে।
২০০৯-১০ মরসুমে মেলবোর্নে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচে বিধ্বংসী গতিতে বল করেছিলেন শন টেট। সেই ওভারে কোনও উইকেট আসেনি। কিন্তু, টেটের গতি ভয় পাইয়ে দিয়েছিল ইমরান ফারহাতকে। সেই ওভারে টেটের প্রত্যেক বল ছিল ঘন্টায় ১৫০ কিমি গতির বেশি। তৃতীয় বল ছিল ঘন্টায় ১৬০.৭ কিমি গতির।
১৯৮১ সালে বার্বাডোজ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাইকেল হোল্ডিংয়ের ওভার ক্রিকেটবিশ্বে বিখ্যাত। অনেক বিশেষজ্ঞ এটাকে ‘ওভার অফ দ্য সেঞ্চুরি’ বলেও মনে করেন। সেই ওভারে হোল্ডিং দু’বার পরাস্ত করেন জিওফ্রে বয়কটকে। এক বার খোঁচা দিতে বাধ্য করেন। আর ওভারের শেষ বলে বোল্ড করেন তাঁকে। গতি ও বাউন্সে বয়কটকে বিপর্যস্ত করেছিলেন ক্যারিবিয়ান পেসার।
ফের বার্বাডোজ। তবে এ বার বিপক্ষের ঘরের মাঠে এসে মনে রাখার মতো ওভার উপহার দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট। ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচে শেষ ওভারে বাজিমাত করেন তিনি। জেতার জন্য ক্যারিবিয়ানদের দরকার ছিল চার রান, হাতে ছিল তিন উইকেট। তিন উইকেটই নিয়ে এক বল বাকি থাকতে প্রোটিয়াদের জেতান ল্যাঙ্গেভেল্ট।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপে গায়ানায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য ওভার করেন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা। ছয় ওভার বাকি থাকতে হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে জিততে ১৫ রান দরকার ছিল প্রোটিয়াদের। টানা চার বলে চার জনকে ফিরিয়ে দেন তিনি। শন পোলক, অ্যান্ড্রু হল, জাক কালিসকে ফিরিয়ে নেন হ্যাটট্রিক। তার পর ফেরান এনতিনিকে। কিন্তু, তাতেও জেতাতে পারেননি শ্রীলঙ্কাকে।
২০১৩-’১৪ মরসুমের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিচেল জনসন এমনই অবিশ্বাস্য এক ওভার করেন। অ্যাডিলেডে, সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৫০তম ওভারের প্রথম বলে বেন স্টোকসকে ফেরান তিনি। এর পর ফেরান ম্যাট প্রায়রকে। ওই ওভারেই নেন স্টুয়ার্ট ব্রডকে। সেই ইনিংসে নেন সাত উইকেট। অ্যাশেজেরও সেরা খেলোয়াড় হন তিনি।
২০১০ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের মহম্মদ আমিরের এক ওভারে অস্ট্রেলিয়া হারায় পাঁচ উইকেট। তিনি প্রথম দুই বলে ফেরান ব্র্যাড হ্যাডিন, মিচেল জনসনকে। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে রান আউট হন মাইকেল হাসি, স্টিভ স্মিথ। দু’বারই ব্যাটসম্যান ইয়র্কারে ব্যাট ছোঁয়াতে না পেরে বাই নিতে যান। ওভারের শেষ বলে বোল্ড হন শন টেট। তবে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হেরে যায়।
২০০৫ সালে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে এজবাস্টনের দ্বিতীয় ইনিংসে রিকি পন্টিংয়ের বিরুদ্ধে স্মরণীয় ওভার করেন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। দ্বিতীয় বলে ফিরিয়েছিলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে। পন্টিং পরের দুই বলে বেঁচে যান এলবিডব্লিউয়ের আবেদন থেকে। পঞ্চম বলে তাঁর খোঁচা ফিল্ডারের নাগালের বাইরে পড়ে। শেষ বলে নো ডাকেন আম্পায়ার। ফের বল করতে এসে পন্টিংকে ফেরান ফ্লিনটফ। এই স্পেলকে কেরিয়ারের কঠিনতম বলে চিহ্নিত করেছেন পন্টিং।
২০০০ সালের মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শারজায় ত্রিদেশীয় সিরিজে মনে রাখার মতো ওভার করেন শোয়েব আখতার। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে মার্ক বাউচার, ডেল বেনকেনস্টেইন ও ল্যান্স ক্লুজনারকে একই ওভারে ফেরান তিনি। ১৬৯ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বিধ্বংসী শোয়েবের দাপটে ৬৭ রানে হারে প্রোটিয়ারা।
২০০২ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে প্রথম ওভারের প্রথম বলেই আক্রম ফেরান অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে। তৃতীয় বলে ফেরান রিকি পন্টিংকে। গতি ও সুইংয়ে মারাত্মক হয়ে ওঠা আক্রমের সেই জোড়া ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ১৬৭ রানে থেমে যায় তারা। পাকিস্তান জেতে দুই উইকেটে।