জয়ের পর ভারতীয় দল। —ফাইল চিত্র
জয়, টাই, হার, কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আগে সব স্বাদই পেয়ে গিয়েছিল ভারত। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা বুঝে গিয়েছিলেন পথ মসৃণ নয়। অ্যান্ড্রু স্ট্রস, ডেল স্টেইনরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেটা গ্রুপ পর্বেই। ক্যানসারের মতো কঠিন রোগ তখন যুবরাজ সিংহের শরীরে বাসা বেঁধেছে। কাউকে জানতে না দিয়ে লড়ছেন যুবি, লড়ছে ভারত।
ঢাকায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলে শুরু হয়েছিল ভারতের বিশ্বকাপ সফর। ঘরের মাঠে শাকিব আল হাসানরা ভয়ঙ্কর। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশ তার আগের বিশ্বকাপেই ছুটি করে দিয়েছিল ভারতের। সেই ভয় নিয়েই শুরু হল যাত্রা, বলা ভাল জয় যাত্রা। বীরেন্দ্র সহবাগ এবং বিরাট কোহলীর শতরানে ভর করে ৩৭০ রান তোলে ভারত। মুনাফ পটেলদের দাপটে ২৮৩ রানে থেমে যান শাকিবরা। ৮৭ রানে জয় পায় ভারত।
পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ভারত। সচিন তেন্ডুলকরের শতরান যখন ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তখন বাধা হলেন স্ট্রস। ভারতের ৩৩৮ রানের জবাবে ইংল্যান্ডও করে ৩৩৮ রান। দুই দেশের সমর্থকদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ শেষ হয় অমীমাংসিত ভাবে। ভারতের জয়ের রথ ধাক্কা খায় দ্বিতীয় ম্যাচেই।
শতরানের পর সচিন। —ফাইল চিত্র
আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ৫ উইকেটে জয় পায় ভারত। ২ দলের বিরুদ্ধেই নায়ক যুবরাজ। ব্যাটে, বলে ভারতের হয়ে তিনিই ছিলেন নায়ক। প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার কেন তিনি, বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ওই ম্যাচগুলোয়।
জয়ের আনন্দ যখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিশ্বজয়ের, তখনই সেই গোটা দেশকে মাটিতে নামায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সচিনের শতরানের পরেও হারতে হয় ভারতকে। ২৯৬ রানে শেষ হয়ে যায় ভারত। ৭ উইকেট হারিয়ে সেই রান তুলে নেন জ্যাক কালিসরা। বিশ্বকাপের কালো ঘোড়া যেন লাগাম টেনে ধরল।
সেই ধাক্কাটাই যেন আরও বেশি সতর্ক করে দেয় ভারতকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শতরান করেন যুবরাজ। ৮০ রানে জয় পায় ভারত। কোয়ার্টার ফাইনালে কঠিন লড়াইয়ের জন্য ওয়ার্ম আপ শুরু করেন ধোনিরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল। সেই অস্ট্রেলিয়া, যারা জানে বিশ্বকাপ জিততে। বড় মঞ্চে নিজেদের বার বার মেলে ধরেছে যে দল। সেই অস্ট্রেলিয়া, যারা ভেঙে দিয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। ২০০৩ সালের চিত্রনাট্য মেনেই প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া, শতরান করেন রিকি পন্টিং। সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পান ভারতীয় সমর্থকরা। সেই ভয় কাটে যুবরাজের ব্যাটে। ভারতকে জিতিয়ে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। সৌরভের জন্য পারেননি, ধোনির জন্য পারলেন। সেমিফাইনালে পাকিস্তান।
বিশ্বকাপ জয়ের ২ নায়ক। —ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপের মঞ্চে কখনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারেনি ভারত। অন্যথা হল না সে বারেও। ২৯ রানে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ধোনির ভারত। সামনে শ্রীলঙ্কা।
এক দিকে সচিনের যখন শেষ বিশ্বকাপের আশঙ্কা, অন্য দিকে কুমার সঙ্গকারা, মাহেলা জয়বর্ধনদেরও প্রায় তেমনই। বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া ২ দেশ, মরিয়া মহারথীরা। প্রথমে ব্যাট করে শতরান করেন জয়বর্ধন। ভারতের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য রাখেন ২৭৫ রানের।
ট্রফি হাতে ভারতীয় দল। —ফাইল চিত্র
সচিনকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপান গৌতম গম্ভীররা। ৩ রানের জন্য শতরান হাতছাড়া করে কাদা মাখা জার্সি গায়ে গম্ভীর যখন ফিরছেন, তাঁর চিন্তা তখন শতরানের নয়, বিশ্বকাপের। তাঁর অপূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন ধোনি।
ছয় মেরে বিশ্বকাপ জয় ভারতের। তৈরি হয় ইতিহাস। সচিনকে কাঁধে নিয়ে ঘোরেন হরভজন সিংহরা। ২ এপ্রিল, ২০১১ গোটা ভারত এক সঙ্গে হাসে, দৌড়য়, নাচে, উদযাপন করে। গোটা দেশ যেন মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সেদিন গায় বন্দে মাতরম।