শুধু সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নয়। ভারতে খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত ফলনের পথেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দূষণের ভূত।
এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, পূর্ণ সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার হলে, এ দেশে মোট যত শস্য উৎপাদিত হতে পারত, আদপে হচ্ছে তার তুলনায় প্রায় অর্ধেক। এবং তার পিছনে খলনায়ক সেই দূষণই।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ৩০ বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে তাঁরা দেখেছেন, ২০১০ সালে ভারতের বিভিন্ন ঘনবসতি সম্পন্ন রাজ্যে যত গম উৎপাদিত হতে পারত, হয়েছে তার তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কম। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই উৎপাদনে এই কমতির কারণ ‘ধোঁয়াশা’। ধোঁয়া এবং কুয়াশার এই মিশ্রণে থাকে কার্বন-সহ বিভিন্ন দূষণকারী কণা। ফলে তা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গম উৎপাদনের পক্ষে। ১০ শতাংশ ভূমিকা রয়েছে বিশ্বের উষ্ণায়নেরও।
এই সমীক্ষার জন্য কাজ করা অন্যতম বিজ্ঞানী এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেনিফার বার্নির দাবি, তাঁদের এই চমকে দেওয়া তথ্য অনেকের ঘুম ভাঙাবে। ফলে তাঁরা নড়েচড়ে বসবেন বায়ুদূষণ কমানোর জন্য। তাঁর দাবি, বায়ুদূষণ নিয়ে যখন সরকার বা অন্য কোনও মহল কথা বলতে বসে, তখন সেখানে কৃষি সম্পর্কে আলোচনা হয় খুবই কম। তাঁর আশা, এ বার এই প্রবণতা বদলাবে। সমাধান খুঁজতে হয়তো আইন ঢেলে সাজার কথা ভাববে সরকারও।
এমনিতে উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ভারতে কৃষি উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, দূষণ সমস্যা না-থাকলে তা বাড়ত আরও অনেক দ্রুত। আর ঠিক এই কারণেই এই গবেষণাকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেকে।
প্রায় বছর তিনেক ধরে খাদ্যপণ্যের বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে কেন্দ্র। মূল্যস্ফীতির দরুন হেঁশেলে টান পড়ছে। অথচ চড়া সুদের জমানা বজায় রেখেও এখনও পর্যন্ত তার পুরো সুরাহা করতে পারেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এমনকী ইউপিএ জমানা থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীরাও মেনে নিয়েছেন যে, দীর্ঘ মেয়াদে এই সমস্যা মেটাতে সব থেকে আগে জরুরি খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে যদি দূষণ রোধ করে অত্যাবশ্যক খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়, তাতে সমস্যার অন্তত কিছুটা মিটবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।