মঙ্গলে মানুষের ঘরবাড়ির নকশা। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের কোথায় কোথায় নামলে মানুষের জল পেতে খুব একটা অসুবিধা হবে না, একেবারে ধরে ধরে সেই জায়গাগুলি বেছে ফেলল নাসা। যা মঙ্গলের বুকে শুধুই পা ফেলা নয়; ভবিষ্যতে পৃথিবীবাসীদের একের পর এক বসতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করবে।
সেই জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করে একটি সবিস্তার মানচিত্রও বানিয়ে ফেলেছে নাসা। তাতে জায়গাগুলির অবস্থান, দিক-দিশার যাবতীয় খুঁটিনাটিও দেখানো হয়েছে। লাল গ্রহে মানুষের আগামী দিনের বসবাসের সম্ভাব্য এলাকাগুলির এত বিস্তারিত মানচিত্র বানানো সম্ভব হল এই প্রথম।
সেই মানচিত্রের গবেষণাপত্রটি সোমবার প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’-তে।
মঙ্গলে এখনও যে পরিমাণে জল রয়েছে, বিজ্ঞানীদের ধারণা, তার বেশির ভাগটাই রয়েছে লাল গ্রহের দুই মেরুতে। বিশেষ করে, মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের মেরু এলাকাগুলিতে। সেই জল ভূপৃষ্ঠের খুব নীচেও নেই যে, তা তুলে আনার জন্য প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে।
তবে সেই জল তরল অবস্থায় নেই, জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সেই জল রয়েছে ‘আইস ওয়াটার’ বা বরফ জল অবস্থায়। জল জমে বরফ হয়েই আছে। তবে উষ্ণতায় তা গলে আশপাশে কিছুটা তরল হয়েও বেরিয়ে আসছে।
জলে চাষবাস, জলই হতে পারে রকেট জ্বালানি
যদি আগামী দিনে মানুষের বসতি গড়ে ওঠে লাল গ্রহে, তা হলে এই জলকে কী কী ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে?
নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরি (জেপিএল)-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও বৃহস্পতির চাঁদ ‘ইউরোপা’য় নাসার অভিযানে জেপিএল-এর টিম লিডার গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘গত দু’তিন দশক ধরেই মঙ্গলে এই জায়গাগুলিকে খুঁজে বার করার চেষ্টা চালাচ্ছিল নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)। ২০১৫ থেকে এই কাজে আরও গতি আসে। তারই ফল হিসেবে এই প্রথম এমন অনেকগুলি জায়গাকে চিহ্নিত করে তার সার্বিক মানচিত্র বানানো সম্ভব হল।’’
এমনও হতে পারে ঘরবাড়ি। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
গৌতম জানাচ্ছেন, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। কারণ, আগামী দিনে যদি অণুজীবের হদিশ মেলে মঙ্গলে, তা হলে এই সব এলাকা ও তার আশপাশেই তাদের খোঁজ মেলার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
গৌতম বলছেন, ‘‘এই জল যে শুধুই ভবিষ্যতে আমাদের বসতির পানীয় জলের অভাব মেটাতে পারে তা-ই নয়; তা দিয়ে হতে পারে চাষবাসও। এমনকি, এই জল থেকেই হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস বার করে তা দিয়ে রকেটের জ্বালানিও বানানো যেতে পারে। তাতে মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য রকেটের জ্বালানি আর পৃথিবী থেকেই ভরে পাঠাতে হবে না। তাতে মহাকাশযানের ওজন কমবে। শক্তির সাশ্রয় হবে। খরচও কমবে। ফিরতি রকেটের জ্বালানি জোগাবে মঙ্গলের এই জলই।’’
মঙ্গলের ঘরবাড়ির আর একটি নকশা। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
জায়গাগুলিতে জলের সঞ্চয়ের তথ্য মিলল কী ভাবে?
নাসার জেপিএল-এ ‘নিসার মিশন’-এর সিনিয়র ম্যানেজার আলোক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘’২০ বছর ধরে নাসার পাঠানো ৩টি মহাকাশযান ‘মার্স ওডিসি’, ‘মার্স রিকনাইস্যান্স অরবিটার' (এমআরও) ও কিছু দিন আগে অচল হয়ে পড়া ‘মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ার' (এমজিএস) যে সব তথ্য দিয়েছে, তারই ভিত্তিতে গবেষণা করে এই মানচিত্র বানানো হয়েছে। এই মানচিত্র বানানোর একটি প্রকল্প অনেক দিন আগেই হাতে নিয়েছিল নাসা। তার নাম- ‘সাবসারফেস ওয়াটার আইস ম্যাপিং' (সুইম)।’’
মঙ্গলে জলের সঞ্চয় কোথায় সবচেয়ে বেশি?
আলোক ও গৌতম জানাচ্ছেন, লাল গ্রহের উত্তর মেরু ও তার লাগোয়া এলাকাগুলিতে জল বরফাবস্থায় রয়েছে। যথেষ্ট পরিমাণে বরফ জল ভূপৃষ্ঠের অল্প গভীরতায় ‘আর্কেডিয়া প্লানিশিয়া’ নামের কয়েকটি সমতল এলাকা ও হিমবাহে (গ্লেসিয়ার) ভরা উপত্যকা ‘ডিউটারোনিলাস মেন্সে’ও রয়েছে।
ছবি সৌজন্যে: নাসা।