যা-ই আছড়ে পড়ুক না কেন তার অভিঘাতে যে বিশাল একটি গহ্বর চাঁদের বুকে তৈরি হতে চলেছে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই বিজ্ঞানীদের। -ফাইল ছবি।
চাঁদে কী আছড়ে পড়তে চলছে সপ্তাহদু’য়েকের মধ্যে? কোনও বড় গ্রহাণু? নাকি বিশাল কোনও উল্কাপিণ্ড? নাকি সৌরমণ্ডলের বাইরে থেকে আসা কোনও মহাজাগতিক আগন্তুক?
বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহল এখন এই কৌতূহলেই আলোড়িত। যা-ই আছড়ে পড়ুক না কেন, তার অভিঘাত কতটা হবে? চাঁদের বুকে সেই অভিঘাতে তৈরি হবে কতটা বড় গহ্বর? সেই গহ্বরের অতলে নজর ফেলে আগামী দিনে চাঁদের পিঠের নীচে লুকিয়ে থাকা খনিজের খোঁজ মিলবে কি? এই সাতসতেরো প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহলে।
তবে যা-ই আছড়ে পড়ুক না কেন তার অভিঘাতে যে বিশাল একটি গহ্বর চাঁদের বুকে তৈরি হতে চলেছে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই বিজ্ঞানীদের। তাই ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র চাঁদের কক্ষপথে পাঠানো চন্দ্রযান-১ কে বেঙ্গালুরুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে চাঁদের বুকে কোনও কিছুর আছড়ে পড়ার ঘটনার উপর নজর রাখতে। আছড়ে পড়ার পর তার অভিঘাতে চাঁদের বুকে কতটা বড় গহ্বর তৈরি হয় সেটাও জরিপ করতে। একই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে চাঁদের কক্ষপথে থাকা নাসার ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার (এলআরও)’-কেও।
চাঁদের বুকে যে দিনপনেরোর মধ্যে খুব বড় কিছু আছড়ে পড়তে চলেছে প্রথম তা বুঝতে পারেন বিল গ্রে নামে এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। যিনি প্রজেক্ট প্লুটো সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে বেশ কিছু দিন ধরেই পৃথিবীর কাছেপিঠে থাকা মহাজাগতিক বস্তুগুলির (‘নিয়ার-আর্থ অবজেক্টস’ বা এনইও) উপর নজর রেখে চলেছেন। এনইও-গুলি আদতে ছোট, বড়, মাঝারি আকারের গ্রহাণু। যারা মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে থাকা গ্রহাণুপুঞ্জর বাসিন্দা নয়। আছে পৃথিবীর কাছেপিঠেই। এরা পৃথিবীর উপর হামলে পড়লে তা সভ্যতার পক্ষে খুব বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলেই এদের উপর নজর রাখা হয় নিয়মিত ভাবে। নজর রাখে নাসাও।
জ্যোতিবির্জ্ঞানী বিল গ্রে-ই প্রথম গত সপ্তাহে চাঁদের কাছেপিঠে থাকা বিভিন্ন মহাকাশযান ও মহাজাগতিক বস্তুর বর্তমান ও সম্ভাব্য পরবর্তী গতিপথ খতিয়ে দেখে জানান, চাঁদের বুকে মার্চের ৪ তারিখে বড় কিছু আছড়ে পড়তে চলেছে। তাঁর ধারণা ছিল সেই বস্তুটি কোনও গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড নয়, সেটি আদতে এলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্স তাদের ডিসকভার মহাকাশযানটিকে যে ফ্যালকন-৯ রকেটের পিঠে চাপিয়ে পাঠিয়েছিল মহাকাশে, তারই বিশাল একটি অংশ। যা উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম— ‘২০১৫-০০৭বি’।
কিন্তু নাসা পরে জানায় স্পেস এক্স এর রকেটের চাঁদের কাছাকাছি পৌঁছনোর সম্ভাবনা কম। তার পরেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রে তাঁর ভুল শুধরে নিয়ে টুইট করে জানিয়েছেন, চাঁদের বুকে মার্চে আছড়ে পড়বে না ২০১৫-০০৭বি। বরং চাঁদে আছড়ে পড়তে চলেছে চিনের মহাকাশযান শ্যাঙ্গে-৫টি-১ এর বিশাল একটি অংশ। এর উৎক্ষেপণ হয়েছিল ২০১৪ সালে।
তবে চাঁদের যে জায়গাটিতে তা আছড়ে পড়তে পারে বলে গ্রে আগে জানিয়েছিলেন, এটিও তার আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন।
গ্রে জানিয়েছেন, স্পেস এক্স এর রকেটে আর তেমন জ্বালানি অবশিষ্ট নেই বলে সেটির পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফের ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সেটি চাঁদ থেকে অনেকটা দূরেও রয়েছে। জ্বালানি কম বলে তার পক্ষে সেই দূরত্ব পেরনোও সম্ভব হবে না। অকেজো অবস্থায় স্পেস এক্স এর রকেটের ওই অংশটি কক্ষপথেই ঘুরতে থাকবে। মহাকাশের আবর্জনা (‘স্পেস ডেব্রি’) হয়ে।
তবে শ্যাঙ্গে-৫টি-১ যে দূরত্বে রয়েছে তাতে গ্রে নিশ্চিত সেটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চাঁদের দিকেই। সেটিই আগামী ৪ মার্চ আছড়ে পড়বে চাঁদের বুকে। তার অভিঘাতে চাঁদের বুকে তৈরি হবে বিশাল গহ্বরও।