চাঁদে পৃথিবীর ‘জলভালুকেরা’

এক মিলিমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের প্রাণীগুলোকে ‘ওয়াটার বেয়ার’-ই বলা হয় ডাকনামে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৫৫
Share:

ফাইল চিত্র।

চাঁদের রুক্ষ জমিতে আছড়ে পড়ে ইজরায়েলি মহাকাশযানটা ভেঙেচুরে যাওয়ার সময়ে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়েছিল নিশ্চয়ই। সেই ধাক্কাটা সামলাতে পারলে ধরে নেওয়া যায়, চাঁদের মাটিতে বেঁচেবর্তেই আছে পৃথিবী থেকে পাঠানো আট পায়ের ‘জলভালুকেরা’। এবং বিজ্ঞানীরা আশ্বাস দিচ্ছেন, চাঁদের আবহাওয়া খুব বেশি অসহ্য না-হয়ে উঠলে তারা বেঁচেই থাকবে। কারণ, বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলছে, জলভালুকদের (কেউ বলেন ‘শেওলা শূকরছানা’) ‘জান’ ভীষণ কড়া। তাপমাত্রা বা চাপের চরম হেরফেরও তাদের কাছে নস্যি।

Advertisement

এক মিলিমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের প্রাণীগুলোকে ‘ওয়াটার বেয়ার’-ই বলা হয় ডাকনামে। পোশাকি নাম ‘টারডিগ্রেড’। ইজরায়েলের যান ‘বেরেশিট’-এ চড়ে চাঁদে নামার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ১১ এপ্রিল যান্ত্রিক গোলযোগে চাঁদের মাটিতে ভেঙে পড়ে ‘বেরেশিট’। ওই যানের বিশেষ প্রকোষ্ঠে জলভালুকরা ছাড়াও ছিল অনেক কিছু। যে সম্ভারকে বিজ্ঞানীরা বলছিলেন ‘লুনার লাইব্রেরি’। এই ‘চান্দ্র গ্রন্থাগার’ দেখতে অনেকটা ডিভিডি-র মতো। সেখানেই ভরা ছিল মানুষের ইতিহাস নিয়ে ৩ কোটি পাতার বইপত্র। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে যা পড়া যাবে। ছিল মানুষের ডিএনএ। আর ছিল কৃত্রিম রজনের তৈরি একটি বিশেষ প্রকোষ্ঠ। সেখানে শুকিয়ে, কার্যত শীতঘুমে পাঠিয়ে ভরে দেওয়া হয়েছিল টারডিগ্রেডদের। আবার তারা জাগবে জল বা বাতাস পেলে।

গোটা ভাবনার নেপথ্যে ‘আর্ক মিশন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের লক্ষ্য, মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডার আর পৃথিবীর জীববৈচিত্রকে সৌরজগতে ছড়িয়ে দেওয়া। ‘বেরেশিট’-এর সর্বশেষ কক্ষপথ বিশ্লেষণ করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সহ-প্রতিষ্ঠাত্রী নোভা স্পিভাক বলেছেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, টারডিগ্রেডদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রবল।’’ কারণ, ১৫০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে টারডিগ্রেডরা। বাঁচতে পারে মহাশূন্যের একেবারে চাপশূন্য অবস্থা কিংবা পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রখাত ‘মারিয়ানা ট্রেঞ্চ’-এর ভয়ঙ্কর চাপেও। দীর্ঘদিন ধরে শুকনো ভুষির মতো রেখে দেওয়া যায় তাদের। তাই আমেরিকার বেকার বিশ্ববিদ্যালয়ের টারডিগ্রেড বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম মিলারের মতে, চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রায়-চাপশূন্য অবস্থাটা সামলে নিতে পারবে তারা।

Advertisement

‘চন্দ্রযান-১’ জলের আভাস দিয়েছিল চাঁদে। হয়তো কোনও দিন জলের ছোঁয়া পেয়ে জেগে উঠতেও পারে টারডিগ্রেডরা। করতে পারে বংশবৃদ্ধিও। তবে তাদের পৃথিবীতে ফেরার পথ বন্ধ বলে জানিয়েই দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ২০২৪ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশচারী পাঠানোর তোড়জোড় চালাচ্ছে ‘নাসা’। কিন্তু মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সেই যানও নামবে ‘বেরেশিট’-এর দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে। কাজেই ধরে নেওয়া হচ্ছে, নাসা-র যানের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবে না টারডিগ্রেডরা। ঘুম ভাঙলে চাঁদের কোনও পাহাড়েই তারা বাসা বাঁধবে। চিরতরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement