বুস্টার টিকা নেওয়া হলে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে তা ওমিক্রনকে চিনতে ও তাকে নিষ্ক্রিয় করতে পারছে পুরোপুরি। -ফাইল ছবি।
করোনাভাইরাসের নতুন রূপ ওমিক্রনের সংক্রমণ পুরোপুরি রুখতে গেলে ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের এমআরএনএ কোভিড টিকার সবক’টি পর্বের পরেও একটি বুস্টার টিকা নিতে হবে। এই বুস্টার টিকাই ওমিক্রন রোখার জন্য দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই খবর দিয়েছে।
গবেষণাটি যৌথ ভাবে চালিয়েছে আমেরিকার রেগন ইনস্টিটিউট অব এমজিএইচ, ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সেল’-এ।
ফাইজার ও মডার্নার এমআরএনএ কোভিড টিকা দেওয়া হয় দু’টি পর্বে। আর জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেওয়া হয় একটি পর্বে।
গবেষণাটি জানিয়েছে, ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা সবক’টি পর্বে দেওয়ার পরেও মানবদেহে তা সেই সংখ্যক অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে না যারা ওমিক্রনকে চিনতে ও তাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। তবে ওই টিকাগুলির সবক’টি পর্বের পরে বুস্টার টিকা নেওয়া হলে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে তা ওমিক্রনকে চিনতে ও তাকে নিষ্ক্রিয় করতে পারছে পুরোপুরি।
গবেষকরা কাজটি করেছেন দু’টি ধাপে। প্রথমে তাঁরা ওমিক্রনের একটি অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করেন গবেষণাগারে। যাকে বলা হয় ‘সিউডোভাইরাস’। এটি আদৌ ক্ষতিকর নয়। তাঁরা ওই ভাইরাসের উপর ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা প্রয়োগ করে দেখতে চেয়েছিলেন টিকাগুলির তৈরি করা অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে কতটা চিনতে ও নিষ্ক্রিয় করতে পারছে। ওই সিউডোভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনেও ৩৪টি মিউটেশন করা হয় যেমনটি হয়েছে ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনে। এই মিউটেশনগুলির জন্যই ডেল্টা-সহ করোনাভাইরাসের অন্যান্য রূপের চেয়ে ওমিক্রন বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
ওই তিনটি টিকার সবক’টি পর্বই নিয়েছেন এমন ২৩৯ জনের রক্তের নমুনা তার পর সংগ্রহ করেন গবেষকরা। সেই রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয় এমন সব এলাকা থেকে যেখানে কোভিড সংক্রমণের হার ছিল খুব বেশি। এঁদের মধ্যে গবেষকরা এমন ৭০ জনের রক্তের নমুনা নেন যাঁরা ফাইজার ও মডার্নার টিকার দু’টি পর্বের পর বুস্টার টিকাও নিয়েছেন।
রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন টিকাগুলির সবকটি পর্ব ও সবকটি পর্বের পরেও বুস্টার টিকা নেওয়া হলে ওমিক্রন প্রতিরোধে শরীরে অ্যান্টিবডির সক্রিয়তায় তারতম্য হচ্ছে কি না।
গবেষকরা যথেষ্টই তারতম্য দেখতে পেয়েছেন। এর থেকেই তাঁদের সিদ্ধান্ত— ওই টিকাগুলি পরোপুরি নেওয়ার পরেও একটি বুস্টার টিকার প্রয়োজন হতে পরে ওমিক্রনের সংক্রমণ পুরোপুরি রুখতে।
গবেষকরা এও দেখেছেন, ওই টিকাগুলির সবক’টি পর্ব ডেল্টার বিরুদ্ধে যে পরিমাণে কার্যকরী অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে ওমিক্রনের ক্ষেত্রে তা করতে পারছে না।
তবে সেটা কেন হচ্ছে সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি গবেষকরা। তাঁদের ধারণা, এর দু’টি কারণ থাকতে পারে। এক— বুস্টার টিকা যে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে সেগুলি ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনকে বেঁধে ফেলতে বেশি সক্ষম হয়ে উঠছে। দুই— বুস্টার টিকা হয়তো এমন ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করছে যা, স্পাইক প্রোটিনের যে অংশটি থাকে ওমিক্রন, ডেল্টা-সহ করোনাভাইরাসের সবকটি রূপের ক্ষেত্রেই, সেই অংশটি সঠিক ভাবে চিহ্নিত করতে তাকে বেঁধে ফেলতে পারছে।