Bose–Einstein condensate

মিলল সত্যেন বোসের পূর্বাভাস, পদার্থের 'পঞ্চত্ব প্রাপ্তি' ঘটল এ বার মহাশূন্যের হাড়জমানো ঠান্ডায়

পদার্থের চার অবস্থা হল— কঠিন, তরল, গ্যাসীয় এবং প্লাজ়মা। এই প্লাজ়মা, পদার্থের উপাদানের আয়নিত অবস্থা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২০ ০৪:৫০
Share:

বোস-আইনস্টাইন

পদার্থের পঞ্চম অবস্থা— বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’— তা এ বার বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন মহাশূন্যে। পৃথিবীকে আবর্তনকারী ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’ (আইএসএস)-এর মধ্যে বিজ্ঞানীরা বানালেন পদার্থের সেই অবস্থা, যা প্রায় ১০০ বছর আগে উঠে এসেছিল, আলবার্ট আইনস্টাইন এবং বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর গবেষণায়।

Advertisement

পদার্থের চার অবস্থা হল— কঠিন, তরল, গ্যাসীয় এবং প্লাজ়মা। এই প্লাজ়মা, পদার্থের উপাদানের আয়নিত অবস্থা। সে সব ছাড়িয়ে প্রায় এক শতাব্দী আগে পদার্থের আর এক রকম অবস্থা উঠে এসেছিল আইনস্টাইন ও বসুর গবেষণায়। সেটার নাম-ই ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট’ (বিইসি)।

১৯৯৫ সালে আমেরিকার গবেষণাগারে প্রথম তৈরি হয়েছিল পদার্থের এই পঞ্চম অবস্থা। বিজ্ঞানীরা এ বার দেখালেন, সেই অবস্থা মহাশূন্যেও একই রকম ভাবে অর্জন করা যায়। বিইসি তৈরি করার একটা উপায় হল, পদার্থের অনুকে মাইনাস ২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (চরম শূন্য) ঠান্ডা করা। যাতে অনুগুলোর নড়াচড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, অনুর নড়াচড়াই আসলে উষ্ণতা। চরম শূন্য উষ্ণতায় নিয়ে গেলে অনুগুলো প্রায় স্থবির হয়ে যায়। এবং তখন অনুগুলো সবাই মিলে যেন একটাই অনু হয়ে যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: কলকাতায় আজ কিছু ক্ষণের জন্য উধাও আমাদের ছায়া!

পৃথিবীতে এ কাণ্ডটা ঘটালে বিইসি টিকে থাকে এক সেকেন্ডের হাজার ভাগের এক ভাগ সময়। কিন্তু মহাশূন্যে বিইসি-কে বিজ্ঞানীরা স্থায়ী করেছেন প্রায় এক সেকেন্ড। বিজ্ঞানী দলের প্রধান, ক্যালিফর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-র অধ্যাপক রবার্ট টমসন বলেছেন, মহাশূন্যে বিইসি তৈরি করার সুবিধা অনেক। পৃথিবীতে যে বিইসি দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয় না, তার কারণ, এই গ্রহে গ্র্যাভিটি বা অভিকর্ষের পরিমাণ দারুণ। কিন্তু মহাশূন্যে গ্র্যাভিটি প্রায় নেই বললেই চলে। তাই বিজ্ঞানীরা মুখিয়ে ছিলেন, মহাশূন্যে বিইসি তৈরি করার লক্ষ্যে।

এত ক্ষণস্থায়ী, তবু বিইসি তৈরি করার মূলে বিজ্ঞানীদের অনেক কারণ আছে। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, অথবা যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ডার্ক এনার্জি, সে সবের উৎসও নাকি বিইসি। মহাকর্ষীয় তরঙ্গ হল, শূন্যস্থান বা স্পেস-এর সঙ্কোচন এবং প্রসারণ। আর ডার্ক এনার্জি হল, মহাবিশ্বের ক্রমবর্ধমান প্রসারণ। যার সন্ধান পেয়েছিলেন গবেষকেরা ১৯৯৮ সালে। পৃথিবীর গবেষণাগারে বিইসি তৈরি করার সাফল্যে বিজ্ঞানীদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে কয়েক দশক আগে। নোবেল পেয়েছে বাকি দুই আবিষ্কারও (মহাকষীয় তরঙ্গ ও ডার্ক এনার্জি)।

বিইসি তৈরিতে যুক্ত থাকা নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী হোলসগাং ক্রেটারলি কয়েক বছর আগে কলকাতায় বক্তৃতা দিতে এসে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ঈশ্বর মিল লেনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, প্রায় এক শতাব্দী আগে কলকাতায় বসে এক জন পদার্থবিদ কী করে পদার্থের পঞ্চম অবস্থা কল্পনায় আনতে পেরেছিলেন।

বিইসি অনেক কিছুর সন্ধান দেবে। চাঁদের মাটির নীচে কী খনিজ আছে, তা-ও জানা যাবে বিইসি গবেষণায়। সে কারণে, বিইসি গবেষণায় বিজ্ঞানীদের মরণপণ আগ্রহ। আইএসএস-এ বিইসি তৈরি করার প্রতিবেদন বেরিয়েছে আজ প্রকাশিত ‘নেচার’ জার্নালে।

আরও পড়ুন: মিউটেশন নিয়ে অযথা আতঙ্কের কারণ নেই, বলছে নতুন গবেষণা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement