গর্জনের স্বাভাবিক শব্দ হারিয়ে ফেলছে মহাসাগর। ছবি- ‘সায়েন্স’ জার্নালের সৌজন্যে।
মহাসাগরগুলির গর্জনের স্বাভাবিক শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে। তা খুব দ্রুত ঢাকা-চাপা পড়ে যাচ্ছে। জাহাজের শব্দে। সভ্যতার যন্ত্রদানবের আরও নানা রকমের শব্দ দূষণে। আমাদের সমুদ্র বিহারের উল্লাসে, দৌরাত্ম্যে। ভূকম্প মাপার অত্যাধুনিক যন্ত্রের দাপাদাপিতে।
তার ফলে, মহাসাগরগুলির স্বাভাবিক গর্জনের চেনা শব্দ আর শুনতে পারছে না বহু প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও অন্য সামুদ্রিক প্রাণীরা। অনভ্যাসের শব্দে মহাসাগরে তারা প্রতি মুহূর্তেই দিক-দিশা হারিয়ে ফেলছে। নিজের নিজের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। মহাসাগরের কোলাহল এড়াতে অতলান্ত জলের এমন কোনও জায়গায় গিয়ে আত্মগোপনের চেষ্টা করছে যাতে তারা না জেনেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে নানা প্রাকৃতিক কারণে। যার পরিণতিতে সামুদ্রিক প্রাণীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। তারা প্রজননের শক্তি হারাচ্ছে। খাবারদাবার খুঁজে পাচ্ছে না। দলে দলে মারা পড়ছে। এই ভাবেই গত কয়েক দশকে প্রায় বিলুপ্তির প্রান্তসীমায় পৌঁছে গিয়েছে বহু প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী, মাছ। তাদের মধ্যে রয়েছে ব্লু হোয়েল সহ কয়েকটি প্রজাতির তিমি, হাঙরও।
একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদলের গবেষণা এই নজরকাড়া তথ্য দিয়েছে। ২৫ জন গবেষকের সেই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ। গত ৪ ফেব্রুয়ারি।
‘‘মহাসাগরগুলির শব্দ দূষণ নিয়ে এত বড় মাপের গবেষণা এত দিন হয়নি’’, বলছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আমেরিকার বিশিষ্ট মহাসাগর বিশেষজ্ঞ কেরি সেগার বলেছেন, ‘‘গবেষকরা মাথায় একেবারে গজাল ঢুকিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ছে ক্লাউন ফিশ-রা। তারা মহাসাগরের গর্জনের অভ্যস্ত শব্দ শুনেই তাদের ঘরে ফেরার দিক ঠিক করে নেয়। এরাই এখন পথ হারিয়ে ফেলছে।’’