এই ভাবে নাসার মহাকাশযান গিয়ে আছড়ে পড়বে গ্রহাণুটিতে। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’। মেঘনাদবদ কাব্যের এই উক্তিই মহাকাশে এ বার নাসার রণনীতি!
আত্মরক্ষার সেরা অস্ত্র আক্রমণই। মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে তাই এ বার সরাসরি আক্রমণের পথেই নামছে নাসা।
নাসা সেই আক্রমণ চালাবে মহাকাশে। ভিন মুলুক থেকে পৃথিবীর দিকে অসম্ভব গতিতে ছুটে আসা গ্রহাণু (‘অ্যাস্টারয়েড’)-দের পথ থেকে সরিয়ে দিতে। না হলে যে পরিত্রাণ নেই সভ্যতার।
তাই গ্রহাণুকে সরাসরি আক্রমণের লক্ষ্য নিয়ে আগামী নভেম্বরে মহাকাশে পাড়ি দেবে নাসার মহাকাশযান। ধনকুবের এলন মাস্কের সংস্থা ‘স্পেসএক্স’-এর বানানো অত্যন্ত শক্তিশালী ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে চেপে। ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ এয়ার ফোর্স বেস থেকে।
নাসার অভিযানের নাম ‘ডাব্ল অ্যাস্টারয়েড রিডাইরেকশান টেস্ট’। সংক্ষেপে, ‘ডার্ট’।
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ডিডিমস। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
নাসা সোমবার জানিয়েছে, ডার্ট অভিযানের মূলত দু’টি লক্ষ্য রয়েছে।
এক, একটি মহাকাশযান ভয়ঙ্কর গতিবেগে গিয়ে আছড়ে পড়বে একটি গ্রহাণুর উপর। যে গতিতে গ্রহাণুর গায়ে গিয়ে আছড়ে পড়বে নাসার মহাকাশযান তা হল সেকেন্ডে সাড়ে ৬ কিলোমিটারের একটু বেশি। ওই গতিবেগে মহাকাশযানের আছড়ে পড়ার ফলে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুটির গতিবেগ এক শতাংশ কমে যাবে। ফলে, তার অভিমুখও কিছুটা বদলে যাবে। তাতে পৃথিবীর বিপদ কমবে।
দুই, যে প্রযুক্তির মাধ্যমে নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা) ও চিন ও জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা মহাজাগতিক বস্তুগুলির বিপদ এড়াতে চাইছে, সেই প্রযুক্তি বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় তা পরীক্ষা করে দেখা। সেই আসন্ন বিপদগুলির মধ্যে রয়েছে ‘বেণু’-র সুবিশাল একটি গ্রহাণু। আগামী শতাব্দীতে যার পৃথিবীর খুব কাছাকাছি এসে পড়ার কথা।
আপাতত পৃথিবীর দিকে ধাবমান যে গ্রহাণুটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে তার পথ থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে নাসা, তার নাম- ‘ডিডিম্স’। প্রায় দু’দশক আগে যার আবিষ্কার হয়েছিল। যার ব্যাস ৭৮০ মিটার।
২০০৩ সালে এর খুব ক্ষুদ্র (আমাদের চাঁদের তুলনায়) একটি ‘চাঁদ’ (‘মুনলেট’)-এরও হদিশ মেলে। চেক প্রজাতন্ত্রের ওঁদেজোভ অবজারভেটরির টেলিস্কোপেই প্রথম ধরা দেয় ডিডিম্স-এর সেই চাঁদ। তখনই গ্রহাণুটির নাম রাখা হয় ডিডিম্স। গ্রিক শব্দ। অর্থ- যমজ। আলাদা ভাবে চাঁদটির নাম দেওয়া হয় ‘ডাইমোরফস’। যার ব্যাস ৫২৫ ফুট।
নাসার ডার্ট মিশনের অন্যতম এগ্জিকিউটিভ আন্দ্রিয়া রিলে বলেছেন, “মহাকাশযান ডিডিম্সের ওই চাঁদের গায়েই সজোরে আছড়ে পড়বে। তাতে চাঁদটির কক্ষপথে প্রদক্ষিণের সময় বদলে যাবে কম করে সাত মিনিট। তা বদলে দেবে ডিডিম্স-এর কক্ষপথে প্রদক্ষিণের সময়। অভিমুখও।”
নাসা জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরে নাসার মহাকাশযান গিয়ে আছড়ে পড়বে ডিডিম্স-এর চাঁদ ডাইমোরফস-এর উপর। ওই সময় ডিডিম্স পৃথিবী থেকে থাকবে ১ কোটি ১০ লক্ষ কিলোমিটারের মধ্যেই।