চাঁদের আলোয় ৫ হাজার ফুট উপরেও ওড়ে এই পাখিরা। -ফাইল ছবি।
এভারেস্ট প্রায় ছুঁয়েই ফেলে ব্ল্যাক সুইফ্ট। অথবা ছুঁয়ে ফেলে বরফে মোড়া নেপালের কালা পাত্থর বা তাঞ্জানিয়ার মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো।
দীর্ঘ আকাশপথে। চাঁদের ভুবন ভরানো আলোয় বিরামহীন যাত্রায়।
চাঁদের মায়াবি আলোর প্রতি যে এত টান আছে পাখিদেরও, জানা ছিল না এর আগে। এ-ও জানা ছিল না, চাঁদের আলো দেখলেই প্রাণ এতটা ফুরফুরে হয়ে যায় কোনও পাখির। তার যাত্রাপথ যদি এমন হয় যে, কোনও না কোনও ভাবে সেখানে পড়ে চাঁদের আলো তা হলে সাড়ে আট মাসের সুদীর্ঘ যাত্রাতেও ক্লান্তি আসে না সেই পাখির। আকাশেই উড়ে, ভেসে থাকে সেই আকাশ-পাখি। ব্ল্যাক সুইফ্ট। চাঁদের আলোর টানে। পৌঁছে যায় অভূতপূর্ব উচ্চতায়। অন্তত পাঁচ হাজার মিটার তো বটেই। চাঁদের আলো থাকলে সেই উচ্চতা থেকে তারা নেমেও আসতে চায় না।
অত উঁচু দিয়ে অত দূরের যাত্রাপথে তাদের উড়ে ভেসে চলার শক্তি জোগায় যেন চাঁদই।
সুইডেনের লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীদের গবেষণা এই খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘কারেন্ট বায়োলজি’-তে। শুক্রবার।
গবেষকরা দেখেছেন, এই পরিযায়ী ব্ল্যাক সুইফ্ট পাখিরা ভরা পূর্ণিমায় বা পূর্ণিমার আগে-পরের দিনগুলিতে এমনকি তাদের সাড়ে আট মাসের সুদীর্ঘ যাত্রাপথেও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওড়ে অন্তত পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতাতেও। তাঁরা এ-ও দেখেছেন, সেই চাঁদের আলো যত দিন ঝকঝকে থাকে তত দিন ধরেই তারা তাদের সুদীর্ঘ বিরামহীন যাত্রাপথে থাকে পাঁচ হাজার মিটার বা তার কাছাকাছি উচ্চতায়, একটানা।
তবে অমাবস্যা এলেই ব্ল্যাক সুইফ্ট পাখির সেই বেশি উচ্চতায় ওড়া বা থাকার উৎসাহ কমে যায়। চন্দ্রগ্রহণ থাকলে, বিশেষ করে পূর্ণগ্রাস থাকলে তো সেই উৎসাহ যথেষ্টই কম যায়। তখন এই পাখিরা ওড়ে খুব বেশি হলে ৭০০ মিটার উচ্চতায়।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চাঁদের আলোয় যে কিছু প্রাণী উৎসাহিত হয়, তাদের নানা ধরনের কাজকর্মের গতি বাড়ে তা আগেও জানা ছিল। সেই প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম বেশ কয়েকটি প্রজাতির পতঙ্গ। রয়েছে ঝিনুক, প্রবাল, জুপ্লাঙ্কটন, হাঙর, সিবার্ডস ও সিংহ। তবে পাখিরাও যে এই ভাবে উৎসাহিত হয় চাঁদের আলোয়, তা এই প্রথম জানা গেল।
কেন এই উৎসাহ পায় ব্ল্যাক সুইফ্ট?
গবেষকরা জানিয়েছেন, আগে ধারণা ছিল, পাখিরা বেশি উঁচুতে ওঠে সম্ভবত তারা যাতে কোনও শিকারী বা শিকারী প্রাণীর হাতে না পড়ে। তবে এই গবেষণায় দেখা গেল, অমাবস্যায় এই পাখিরা সাধারণত ওড়ে খুব বেশি হলে ৭০০ মিটার উচ্চতায়। তাই এই পাখিরা যে চাঁদের আলোয় আরও বেশি পথ পাড়ি দেওয়ার শক্তি পায়, পায় আকাশে ভেসে থাকা কিছু অণুজীব তাদের খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য, সেই ধারণাই কিছুটা শক্তপোক্ত হল এই গবেষণায়, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।