নতুন প্লাস্টিকের বোতল তার পানীয়ে যে পরিমাণে বিষ মেশায়, তার চেয়ে অনেক বেশি বিষ মেশে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতলের পানীয়ে। -ফাইল ছবি।
নতুন বোতলের চেয়েও ভয়ঙ্কর পুরনো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতল!
সদ্য তৈরি হয়ে বাজারে আসা নতুন প্লাস্টিকের বোতল তার পানীয়ে যে পরিমাণে বিষ মেশায়, তার চেয়ে অনেক বেশি বিষ মেশে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতলের পানীয়ে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জার্নাল অব হ্যাজার্ডাস মেটিরিয়ালস’-এ। শুক্রবার। এই গবেষণার ফলাফল পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতল তৈরির পদ্ধতির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল, সঙ্গত ভাবেই। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৫০-রও বেশি রাসায়নিক মেশে পানীয়ে
ব্রুনেই বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডনের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্লাস্টিকের বোতল থেকে দেড়শোটিরও বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ মেশে তার ভিতরে থাকা জল-সহ নানা ধরনের পানীয়ে। তার মধ্যে অন্তত ১৮টি রাসায়নিক যৌগ এমন পরিমাণে থাকে যা কোনও দেশের কোনও কানুনেরই পরোয়া করে না।
নতুনই হোক বা পুরনো পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতল সবই তৈরি হয় মূলত বিশেষ ধরনের একটি পদার্থ দিয়ে। যার নাম— ‘পলিইথিলিন টেরেফথ্যালেট (পিইটি)’। সংক্ষেপে যাকে ‘পেট’ বলা হয়। নতুন বোতলে থাকে শুধু পেট। আর পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতল তৈরি হয় রিসাইক্লড্ পেট দিয়ে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিসফেনল এ
গবেষকরা দেখেছেন, দ্বিতীয় ধরনের প্লাস্টিকের বোতলের পানীয়েই বেশি পরিমাণে আরও বেশি রকমের বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ থাকে।
গবেষকরা দেখেছেন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতলের পানীয়ে মেশা রাসায়নিকগুলির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর— ‘বিসফেনল এ’। প্রজননঘটিত নানা ধরনের জটিলতা, প্রজননক্ষমতা হ্রাস, বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ, ক্যানসার এবং পেশি ও হাড়ের ক্ষয় অথবা দুর্বল হয়ে পড়ার জন্য দায়ী এই রাসায়নিকটি। অথচ পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতলের পানীয়ে তা থাকে আশঙ্কাজনক পরিমাণে।
গোড়ায় গলদ
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার পদ্ধতির মধ্যেই এমন কিছু থাকছে যার ফলে এই ধরনের রাসায়নিক তৈরি হচ্ছে আর তা মিশছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতলের পানীয়ে।
মূল গবেষক ব্রুনেই বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডনের সেন্টার ফর পলিউশান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের অধ্যাপক এলেনি আয়াকোভিদৌ বলেছেন, ‘‘এই ধরনের রাসায়নিকগুলি বিভিন্ন ভাবে আসতে পারে। তা হতে পারে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক তৈরির পদ্ধতিতে ব্যবহার করা অণুঘটকগুলির জন্য। হতে পারে বিক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে যে রাসায়নিকগুলি (‘অ্যাডিটিভ্স’) যোগ করা হচ্ছে, তাদের জন্যও। আবার তা হতে পারে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য প্লাস্টিকের ক্ষয় যে ভাবে করানো হচ্ছে, তার জন্যও।’’
তবে সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত জ্বালানি। যা ব্যবহার করা হচ্ছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বোতল তৈরি করার জন্য, জানিয়েছেন গবেষকরা। বোতলগুলির গায়ে যে পদার্থ দিয়ে নানা ধরনের লেখা বা লেবেল মারা হচ্ছে, বিষাক্ত রাসায়নিকগুলির উৎস সেগুলিও হতে পারে।